শনিবার, ১৩ এপ্রিল ২০২৪, ১১:৩১ পূর্বাহ্ন
Logo
সংবাদ শিরোনাম ::
বিশ্বব্যাপী ওমিক্রন সংক্রমণ বৃদ্ধিতে আইসোলেশন মেয়াদ অর্ধেক করার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ওমিক্রন ভেরিয়েন্ট ডেল্টা ও বিটার তুলনায় তিন গুণের বেশী পুনঃ সংক্রমন ঘটাতে পারে : গবেষণা প্রতিবেদন জাতিসংঘ ভবনের বাইরে এক বন্দুকধারী গ্রেফতার শান্তি চুক্তির পঞ্চম বার্ষিকী উপলক্ষে কলম্বিয়া সফর জাতিসংঘ মহাসচিব সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানগণের সাক্ষাৎ করোনা ভাইরাসের সংক্রমন বেড়ে যাওয়ায় অস্ট্রিয়ায় লকডাউন করোনা সংক্রমণ বাড়ায় ইউরোপের বিভিন্ন দেশে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ ভারতে নতুন করে ১০ হাজার ৩০২ জন করোনায় আক্রান্ত নভেম্বর মাসজুড়ে করাঞ্চলে কর মেলার সেবা পাবেন করদাতারা ঔপনিবেশিক আমলের ফৌজদারী কার্যবিধি যুগোপযোগী হচ্ছে

তাযিম-ই-রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ) ও মিলাদুন্নবী উদযাপন প্রসঙ্গে

  • আপডেট সময় শনিবার, ৯ নভেম্বর, ২০১৯

॥গ্রন্থনায় ঃ গোলাম জিলানী কাদেরী॥ মহান আল্লাহ্ তায়ালা এরশাদ করেন-‘ইন্নাল্লাজিনা ইউ বায়িউনাকা ইন্নামা ইউ বায়্যিনিল্লাহা ইয়াদুল্লাহি কাউকা আইদিহিম।’ অর্র্থ ঃ নিশ্চয়ই যারা আপনার হাতে হাত রেখে বাইয়াত হচ্ছে, তারা নিশ্চয়ই আল্লাহ্র হাতে হাত রেখেই বাইয়াত গ্রহণ করছে।(সোবহান আল্লাহ্)। আমাদের প্রাণপ্রিয় নবী পাক (সাঃ)কে কতো উঁচুর মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেছেন বারীতায়ালা !
মহান খোদা তায়ালা আমাদের প্রিয় নবী পাক (সাঃ)কে সৃষ্টি না করলে কোন কিছুই সৃষ্টি করতেন না। ‘মুহাম্মদ’ শব্দের অর্থ-সর্বোচ্চ প্রশংসিত। হযরত হাসসান ইবনে সাবেত(রঃ) বর্ণনা করেন-‘মহান খোদা তায়ালা তাঁর প্রিয় হাবিবের নামের সাথে আল্লাহ্র নাম সম্পৃক্ত করেছেন যাতে জগতবাসী আল্লাহ্র নাম পাকের সাথে তাঁর প্রিয় হাবিবের নাম উচ্চারণ করে ধন্য হয়। আরশের অধিপতির নামের সাথে হুজুর(সাঃ) এঁর নাম পাক যুক্ত হোক এটাই আল্লাহর ইচ্ছা এবং পছন্দ। ‘মুহাম্মদ’ নাম বিশ্ব মানবতার নাজাতের অছিলা। আদি পিতা হযরত আদম(আঃ) চোখ খুলে প্রথমেই দেখতে পান(আরশ মুয়াল্লায়) আল্লাহর নামের সাথে ‘মুহাম্মদ’ (সাঃ) এঁর পবিত্র নাম। আরো বলা যায়, যেমন-আযানের মধ্যে ‘আশহাদুন্না মুহাম্মদুর রাসুল্লাহ’ বাক্য দ্বারা তাঁকে মহীয়ান করেছেন। অনুরূপভাবে প্রতি ওয়াক্ত নামাজের মধ্যে ‘আসসালামু আলাইকা ইয়া আইয়্যহান নবীয়্যু’ (দুরূদের মধ্যে উচ্চারণ করে) তাঁকে মহা সম্মানীত করেছেন। নামাজের মধ্যে উক্ত শব্দ বা বাক্যগুলো উচ্চারিত না হলে নামাজই সম্পন্ন হতো না। একবার ভাবুন তাঁকে কতোই না মর্তবা দিয়েছেন আল্লাহ্ তায়ালা।
এরশাদ হয়- ‘কাদ্নারা তাকাল্লুবা ওয়াজহিকা ফিস্ সামায়ি ফালানুয়াল্লিয়ান্নাকা কিবলাতান তারদাহা ফাওয়াল্লি ওয়াজহাকা শাতরাল মাসজিদিল হারাম।’ (সূরা বাকারা, আয়াত-১৪৪) এ আয়াত পাক নাজিলের প্রেক্ষাপট এ রূপ ঃ নবী পাক(সাঃ) এঁর সময় মুসলমানদের কিবলাহ্ ছিল বায়তুল মোকাদ্দস। হুজুর(সাঃ) এঁর ইচ্ছা হলো কাবাকে মুসলমানদের কিবলাহ করার জন্য। সেই জন্য তিনি মহানবী(সাঃ) নামাজরত অবস্থায় বার বার আকাশের দিকে তাকাচ্ছিলেন। তাঁর ইচ্ছা পূরণের জন্য মহান খোদা তায়ালা কিবলাহ্ পরিবর্তন করে কাবা শরীফের দিকে মুখ করে নামাজ আদায় করার বিধান দিলেন।
তাহলে দেখা যায়, আমাদের প্রিয় নবীজি আল্লাহ্র কাছে কতো প্রিয় ছিলেন। তাঁর ইচ্ছাই স্বয়ং আল্লাহ্র ইচ্ছা। কতোই না মর্তবাপূর্ণ আমাদের নবী পাক (সাঃ)।
মহান খোদা তায়ালা এরশাদ করেন- ‘ইন্নাল্লাহা ওয়া মালাইকাতাহু ইউসাল্লুনা আলান নবী। ইয়া আইয়্যুহাললাজিনা আমানু সাল্লু আলাইহে ওয়া সাল্লিমু তাসলিমা’। (সূরা আহযাব, আয়াত-৫৬)। অর্থ ঃ আল্লাহ্ তাঁর ফেরেশতাগণসহ নবী পাক (সাঃ) এঁর প্রতি দুরূদ পাঠ করেন। তোমরা যারা ঈমান এনেছো তারা আমার নবীর উপর সালাম পাঠাও যথাযথভাবে। মহান আল্লাহ্ তায়ালা যেমন ‘আর রাহ্মান’, ‘আর রাহিম’, ‘রাব্বুল আলামিন’- এসব গুণবাচক নামে বিশেষায়িত, ঠিক তেমনি হুজুর (সাঃ)কে ‘বিল্ ‘মুমেনিনা; ‘রাউফুর রাহিম; রহমাতাল্লিল ‘আলামিন’ ইত্যাদি উপাধি দ্বারা ভূষিত করেছেন।
আল কোরআনে এরশাদ হয়-‘ওয়ামা আরছালনাকা ইন্না রহমাতাল্লিল আলামিন।’ (সূরা আম্বিয়া, আয়াত-১০৭)এ অর্থঃ-আপনাকে পাঠিয়েছি বিশ্বের রহমত করে। পুনরায় এরশাদ হয়-‘লাকাদ কানালাকুম ফি রাসুলিল্লাহি ওয়াওয়াতুন হাসানা।’ (সূরা-আহযাব, আয়াত-২১)। এভাবে সারা কোরআন তাঁর প্রশংসায় মুখরিত। যেমন-‘ওয়া রাফানা লাকা জিকরাক্।’ (সূরা ইনশিরাহ্, আয়াত-৪)। অর্থ ঃ- আমি আপনার জিকির (স্মরণ)কে সুউচ্চ মর্যাদা দান করেছি।
পবিত্র কোরআন করিমে মহান খোদা তায়ালা তাঁর প্রিয় হাবিবকে কতোই না মর্যাদা দান করেছেন এবং তাঁকে উম্মতের প্রতি অত্যন্ত দয়ালু রূপে প্রেরণ করেছেন। এরশাদ হয়-‘তোমাদের কাছে এমন একজন রাসুল এসেছেন যার কাছে তোমাদের দুঃখ, কষ্ট অত্যন্ত বেদনাদায়ক এবং তিনি তোমাদের যাবতীয় দুঃখ, কষ্ট, গ্লানি, পঙ্কিলতা ও অসূচিতা থেকে মুক্ত করে সফলতার শীর্ষে পৌঁছে দিতে প্রেরিত হয়েছেন। তিনি তো কেবল তোমাদের কল্যাণই চান এবং তিনি মুমিনদের জন্য অত্যন্ত বিগলিত চিত্ত, দয়ালু।
প্রকাশ থাকে যে, পবিত্র এ আয়াত পাকে হুজুর আকরাম (সাঃ)কে ‘রাউফুর রাহিম’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। যার অর্থ দয়ার অবিরাম ধারা। আমি উঠাবো প্রত্যেক জাতিকে এবং তাদের জন্য তাদের নবীকে করবো সাক্ষী আর ওদের সকলের জন্য আপনাকে সাক্ষী হিসাবে উপস্থাপন করবো। (সূরা নাহল, আয়াত-৮৯)। আরওয়ায়ে মিশাকে(রুহের জগতে) মহান খোদা তায়ালা সকল পয়গম্বরদের রুহ একত্রিত করে হুজুর আকরাম (সাঃ) এঁর প্রতি সমর্থনের ওয়াদা নেন। যেমন-আলে ইমরানের ৮১ নং আয়াতে এরশাদ হয়-“ওয়া ইজআখজালাহু ——– অ আনা মা আকুম মিনাশ্ শাহিদান।” অর্থ ঃ- স্মরণ করুন {হে প্রিয় নবী (সাঃ)} যখন অন্যান্য নবীদের কাছ থেকে আল্লাহ্ ওয়াদা নিয়েছিলেন, প্রদত্ত কিতাব ও হিকমতের কসম তোমাদের নিকট প্রদত্ত বিষয়বস্তুর সমর্থক একজন রাসুল এলে তোমরা (উম্মতসহ) অবশ্যই তাঁকে বিশ্বাস করবে এবং তাঁকে সাহায্য করবে। তিনি (আল্লাহ্) বললেন-“তোমরা কি স্বীকার করলে ? আমার ওয়াদা রক্ষা করবে?” তারা বললো “স্বীকার করলাম।” “তবে সাক্ষী থেকো, আমিও তোমাদের সাথে সাক্ষী থাকলাম।” এ সকল কথায় এটাই প্রতীয়মান হয়, হুজুর আকরাম (সাঃ) এ বাহিক্য জামানার পূর্বে সকল নবী রাসুল (আঃ)দের নব্যুয়তের যাবতীয় কার্যক্রম সম্পর্কে সম্যকভাবে অবগত ছিলেন এবং আছেন (সোবহান আল্লাহ্)।
আমাদের প্রাণপ্রিয় নবী মুহাম্মদ(সাঃ) এমন দয়ালু ও মর্যাদাবান নবী যাঁকে খোদা তায়ালা সকল রহমত দিয়ে ভূষিত করেছেন। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়-‘খুজুমিন আমওয়ালিহিম ছাদাকাতান তুজাহ্হিরুলুম ওয়া জাকিহিম বিহা ওয়াছাল্লি আলাইহিম, ইন্নাছালাতাকা ছাকানুল্লাহুম আল্লাহু ছামিউল আলিম’। (সূরা তওবা, আয়াত-১০৩) অর্থ ঃ-হে প্রিয় নবী (সাঃ), আপনি ওদের কাছ থেকে ছদকা (নজর, নেওয়াজ, উপঢৌকন গ্রহণ করুন। এর দ্বারা আপনি ওদের পবিত্র করুন। (ওদের অভাব, অভিযোগ শুনে) ওদের জন্য দোয়া করুন। (যেহেতু) আপনার প্রার্থনা ওদের জন্য শান্তনা (সেহেতু) আল্লাহ্ তা কবুল করবেন। আল্লাহ্ সব শোনেন এবং জানেন।’
উম্মত যদি মুছিবতে পড়ে তা থেকে মুক্তি পাবার জন্য, ক্ষমা লাভের জন্য নবী পাক(সাঃ) এঁর দরবারে যাবে। সম্ভব হলে তাঁর জন্য সাধ্যমতো নজরানা বা উপঢৌকন নিয়ে যাবে এবং নবী পাক(সাঃ) এঁর দরবারে তার অভাব, অভিযোগ পেশ করবে এবং তাঁর ওয়াছিলা ধরে মনের ইচ্ছা পূরণের প্রার্থনা করলে (তার) বান্দার বাসনা পূরণ হবে।
ওয়াফা আল্ ওয়াফা কেতাবের ৪র্থ খন্ডের ১৩৮১ নং পৃষ্ঠায় বর্ণিত আছে- (হযরত ইবনে জাওয়ালাদ হতে বর্ণিত) তিনি বলেন “নবী পাক (সাঃ) এঁর ওফাত শরীফের পর তাঁর পবিত্র মাজারে হাজির হয়ে (ক্ষুধার্ত অবস্থায়) কান্নাকাটি করে পাক দরবারে ঘুমিয়ে পড়ি। ঘুমন্ত অবস্থায় আমি স্বপ্নে দেখলাম হুজুর (সাঃ) আমাকে একখন্ড রুটি দান করলেন। আমি তার অর্ধেকটা খেলাম। “ঘুম থেকে জেগে উঠে দেখলাম আমার হাতে অবশিষ্ট অর্ধেক রুটি রয়ে গেছে।”
মেশকাত শরীফের হাদিসে হযরত আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত-দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর (রাঃ) এঁর খেলাফতকালে আরবে ভয়ানক দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। দীর্ঘদিন বৃষ্টি বন্ধ থাকার কারণে সমগ্র আরব জাহানে খাদ্যাভাবে হাহাকার পড়ে যায়। খলিফা হযরত ওমর (রাঃ) হুজুর (সাঃ) এঁর চাচা হযরত আব্বাস (রাঃ)কে সাথে করে ময়দানে গিয়ে (তাঁর) হযরত আব্বাস (রাঃ) এঁর মধ্যস্থতায় এভাবে প্রার্থনা করেন-“হে মহান সৃষ্টিকর্তা, আমি আপনার কাছে আপনার প্রিয় নবী পাক (সাঃ) এঁর চাচা হযরত আব্বাস (রাঃ) এঁর অছিলা ধরে সৃষ্টির জন্য প্রার্থনা করছি। হে মহান খোদা তায়ালা তাঁর অছিলায় দয়া করে বৃষ্টি দেন।” এ প্রার্থনা করার সাথে সাথে বৃষ্টি বর্ষণ হতে শুরু করলো। প্রকাশ থাকে যে, এ ঘটনা বোখারী শরীফে উল্লেখিত আছে। মৌলভী থানভি সাহেব উল্লেখ করেছেন যে, এ কথা এতটাই মশহুর যে, সাহাবাদের উপর এটা ‘ইজমা’ হয়ে গেছে। উপরে উল্লেখিত বর্ণনা দ্বারা প্রমাণিত হয়-হুজুর (সাঃ) সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ নবী যিঁনি হায়াতুন্নবী পাক (সাঃ)।
আল্লাহ্ তায়ালার সিফাত, মোজেজা ও মহাশক্তির বিকাশ সবকিছুই হুজুর পাক (সাঃ) আল্লাহ্ নিজ হাবিব(সাঃ) এঁর মাধ্যমেই প্রকাশ করেছেন। হুজুর(সাঃ) এঁর মুখ দিয়ে আল্লাহ্ পাক কথা বলেন (সুরা নজম, আয়াত ৩, ৪), হুজুর (সাঃ) পবিত্র হাত দিয়েই আল্লাহ্ ধুলি নিক্ষেপ করেন (সুরা আনফাল, আয়াত-১৭) নবী পাক (সাঃ) এঁর হাত দিয়েই বায়াত গ্রহণ করেন। (সুরা ফাতাহ্, আয়াত-১০)। তাই পবিত্র হাদিসে কদুশীতে বর্ণিত হয়-“আমি একটি গুপ্ত খনি ছিলাম, যখন নিজেকে প্রকাশ করার ইচ্ছা করলাম-তখন মুহম্মদ (সাঃ)কে পয়দা করলাম।”
আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছেন, “আহমদের ঐ মীমের পর্দা উঠিয়ে দেখ মন, আহাদ সেথায় বিরাজ করে হেরে গুণীজন।” অনুরূপভাবে এই উপমহাদেশের বিখ্যাত দার্শনিক ও কবি স্যার ইকবাল বলেন ঃ- নেগাহে শওকো মস্তিমে, উঁহি আওয়াল, উঁহি আখের উঁহি কোরআন, উঁহি ফুরকান, উঁহি ইয়াছিন, উঁহি তোয়াহা।” অর্থঃ- প্রেমময় দৃষ্টিতে তিনিই (প্রিয় নবী (সাঃ), আদি, তিনিই অন্ত, তিনিই কোরআন, তিনিই ফোরকান, তিনিই ইয়াছিন এবং তিনিই তোয়াহা”।
হযরত আবদুল খাত্তাব ওমর ইবনে কলভী(রহঃ) তাঁর কিতাবুল তানভীর ফি মৌলুদুল বসির ওয়াল নাজির কিতাব এবং আল্লামা জালালুদ্দিন সূয়তি(রহঃ) তাঁর সুবলিল হুদা ফি মৌলুদিল মোস্তফা নামক কিতাবে হযরত আবু দারদা(রাঃ) বর্ণনা করেছেন যে, তিনি একদা রাসুল পাক(সাঃ) এঁর সাথে হযরত আবু আমের(রাঃ) এঁর ঘরে প্রবেশ করে দেখতে পেলেন হযরত আবু আমের আনছারী(রাঃ) তাঁর সন্তানাদী ও অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনদের একত্রিত করে নবী পাক(সাঃ) এঁর পবিত্র জন্ম বৃত্তান্ত শুনছেন। এ দৃশ্য দেখে প্রিয় নবী পাক(সাঃ) অত্যন্ত খুশি হলেন এবং ফরমালেন “ওহে আবু আমের, নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তায়ালা তোমাদের জন্য রহমতের দুয়ার উন্মুক্ত করেছেন এবং সকল ফেরেশতাগণ তোমাদের জন্য দোয়া করছেন। যারা তোমাদের মতো এরূপ মিলাদ মাহফিল করবে তারাও তোমাদের মতো পরিত্রাণ পাবে।”
অনুরূপভাবে ঈমামুল মোহাদ্দিসিন হযরত হাফেজ হাজার মক্কী (রহঃ) তাঁর মৌলুদুল কবির এবং আবুল কাশেম মুহম্মদ ইবনে ওসমান (রহঃ) তাঁর দুররুল মোন্নাজেম’ কিতাবে এবং আল্লামা সূয়তী (রহঃ) পূর্বে উল্লেখিত কিতাবে বর্ণনা করেছেন যে, একদা হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) জনগণকে তাঁর গৃহে সমবেত করে সবাই খুব আনন্দঘন পরিবেশে হুজুর পাক (সাঃ) এঁর প্রতি দুরূদ ও সালাম পাঠ করছিলেন এমন সময় প্রিয় নবী পাক (সাঃ) সেখানে উপস্থিত হয়ে তাদের উদ্দেশ্যে বললেন-“এখন তোমাদের জন্য শাফায়াতের সুপারিশ করা আমার জন্য ওয়াজিব হয়ে গেল।” অতএব, এটা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়ে গেল যে, মিলাদ শরীফ স্বয়ং নবী পাক (সাঃ) এবং সাহাবায়ে কেরামগণের জন্য সুন্নত বলেই প্রতিষ্ঠিত হয়। পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে (হাদিসে কুদসীতে) “লাউ লাকা লামা——আফলাক”। তাই প্রিয় হাবিব(সাঃ) এঁর নাম পাক আরশে মোয়াল্লায়, আকাশ সমূহে, ধরিত্রির সর্বত্র এমনকি জান্নাতের দরজায়, হুর গেলমানদের চোখের মনিতে, মুমিনদের দীলে, এক কথায় মহান খোদা পাক প্রিয় হাবিবকে সব কিছুই দান করেছেন। সোবাহান আল্লাহ।
পবিত্র কোরআনের সুরা হুজুরাতের ১-৩ এরশাদ হয় “হে ঈমানদারগণ, তোমরা তোমাদের কণ্ঠস্বর নবী পাক (সাঃ) এঁর কণ্ঠস্বর অপেক্ষা উঁচু করবে না এবং তাঁর সামনে এমন উঁচু স্বরে কথা বলবে না, যেমন তোমরা একে অপরের সাথে বলো; অন্যথায় (এর ব্যতিক্রমে) তোমাদের আমলগুলো বিনষ্ট (বিলীন) হয়ে যাবে, আর তোমরা তা বুঝতে পারবে না (টেরও পাবে না)”। অতএব খুব সাবধান।
সৈয়েদেনা হযরত আদম (আঃ) এঁর সময় হতে ৬৭৫০ বৎসর পর রবিউল আওয়াল মাসের ১২ই তারিখ ৫৭০ খৃস্টাব্দের সোমবার ছুবহে সাদেকের সময় চিরন্তন দিগন্তে আলোকময় সূর্যের উদয় হলো। অর্থাৎ অপরিসীম বরকতময় মুহূর্তে ধরণীর বুকে সাইয়েদায়ে কওনায়েন, সুলতানে দারায়েন সৈয়েদেনা হযরত আহমদ মুজতাবা মুহম্মদ মুস্তফা (সাঃ) এঁর আত্মপ্রকাশ ঘটলো। (সোবহানাল্লাহ)। তিনি এমন মঙ্গল ও কল্যাণের রবি যাঁর নূরে বিশ্ব চরাচর আলোকে আলোকময় হয়ে গেল আর অন্যান্য অধর্মের অন্ধকার দূরীভূত হলো। জ্বীন, ফেরেশতা, মানুষ, বৃক্ষরাজী, পশু-পাখি, কীট-পতঙ্গ সারা সৃষ্টি অতি ভক্তি ও শ্রদ্ধার সাথে তাঁকে স্বাগত জানাতে লাগলো। দশ-দিগন্ত হতে সালামের মাধ্যমে মুখরিত হতে লাগলো।” “আরশ আওরকুরসি ঝুঁকে তসলিমে আহমদকে লিয়ে উঠ্ খাঁড়ে হো মোমোনো তাযিমে মুহম্মদ (সাঃ) কে লিয়ে।” আরশ্ ও কুরসি হজরতের (সাঃ) এঁর তাযিমে হয় নত, সম্মানে তাঁর উঠে দাঁড়াও উপস্থিত মুমিন যতো। “ইয়া নবী সালাম আলাইকা, ইয়া রাসুল (সাঃ) সালাম আলাইকা, ইয়া হাবিব সালাম আলাইকা——। বাংলার কবি কাজী নজরুল ইসলামের কণ্ঠেও উচ্চারিত হয়-“ত্রি-ভুবনের প্রিয় মুহম্মদ, এলো রে দুনিয়ায়, আয় রে সাগর আকাশ-বাতাস, দেখবি যদি আয়, দেখ আমিনা মায়ের কোলে, দোলে শিশু ইসলাম দোলে, আজকে যত পাপী ও তাপি, সব গুনাহের পেলো মাফি…….।” এবং “ওরে গোলাপ, নিরিবিলি (বুঝি) নবীর কদম ছুঁয়েছিলি, তাই (তাঁর) কদমের খোশবু, আজও তোর আতরে জাগে।”
এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকাতে আছে, পৃথিবীর সকল নবী ও ধর্মবেত্তার মধ্যে মুহম্মদ (সাঃ)-ই সর্বাপেক্ষা সার্থক ও সফল। এ উক্তি নিঃসন্দেহে যথাযথ। কিন্তু উল্লেখ করা আবশ্যক- এই সাফল্য কোন কাকতালীয় আকস্মিক ঘটনা নয়। এই সাফল্যের প্রকৃত কারণ তাঁর সম-সাময়িক কালের মানুষ তাঁর মধ্যে প্রত্যক্ষ করেছিল নিখাদ অকৃত্রিমতা ও খাঁটিত্ব। এই সাফল্য তাঁর উচ্চ প্রশংসিত বিস্ময়কররূপে আর্কষণীয় ব্যক্তিত্বের ফসল। সত্যিই কী অলৌকিক, অসাধারন ও বিস্ময়কর এই মুহম্মদ(সাঃ) এঁর ব্যক্তিত্ব যার সঠিক পরিচয় তুলে ধরা বাস্তবিকই অত্যন্ত দুরূহ। আমরা কিঞ্চিৎ আলোকপাত করতে পারি মাত্র। কিন্তু এটাই সমধিক সত্য যে, এই ব্যক্তিত্বের প্রতি সামান্যই কারো পক্ষে প্রতিফলন করা সম্ভব। সত্যিই তাঁর জীবন আর চরিত্রের মধ্যে কী নাটকীয় বহুবর্ণ দৃশ্যের সমাহার, জীবনের সর্বাধিক ঐশ্বর্য্যরে কি চিত্রপম সুষমা। একাধারে তিনি আল্লাহ্র সংবাদবাহী পয়গম্বর, তিনি সেনাধ্যক্ষ, তিনি বাদশাহ্, তিনি যোদ্ধা, ব্যবসায়ী ও ধর্ম প্রচারক, তিনি বাগ্মী, সমাজ সংস্কারক, অসহায়-এতিমের আশ্রয়স্থল, উৎপীড়িত কৃতদাসের রক্ষক, নারী সমাজের মুক্তিদাতা, আইন প্রনেতা, বিচারক ও জাগতিক মোহমুক্ত এক আধ্যাত্মিক তাপস এবং আশ্চর্য সকল ভূমিকা ও জীবনের সর্বাধিক ক্ষেত্রেই তিনি সাফল্যের শ্রেষ্ঠতম প্রতীক এবং অদ্বিতীয় মহানায়ক। (কে.এম রামকৃষ্ণরাও কর্তৃক রচিত নবী মুহম্মদ (সাঃ) হতে সংকলিত)।
মাইকেল এইচ হার্ট পৃথিবীর সেরা ব্যক্তি/মনীষীদের উপর একখানা গ্রন্থ রচনা করেছেন। সেই আলোড়ন সৃষ্টিকারী পুস্তক ‘ঞযব ঐঁহফৎবফ’-এ তিনি রাসুলে পাক (সাঃ)কে সকলের শীর্ষে স্থান দিয়েছেন। তিনি তাঁর গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন “মহানবী(সাঃ) এঁর সৃষ্টি না হলে-এ পৃথিবীতে কোন কিছুই সৃষ্টি হতো না। তাঁর পদচারণায় পৃথিবী ধন্য হয়েছে।” আরো উল্লেখ্য যে, বিখ্যাত দার্শনিক ও মনীষী জর্জ বার্নাড’শ লিখেছেন-“যতদিন হযরত মুহম্মদ (সাঃ) এঁর মতো রাষ্ট্র পরিচালক হিসেবে মহামানবের আবির্ভাব না হবে ততদিন উৎপীড়ক কম্যুনিজম, উচ্চ হারে সুদখোর ক্যাপিটালিজম, তরবারীর ঝন্ ঝন্ গর্জনকারী নাজিজম, স্বাধীনতা হত্যাকারী ফ্যাসিজম, চরম অহংকারী সোস্যালিজম এবং উচ্চ স্বরে গর্জনকারী ইন্টারন্যাশনালিজম মানব জীবনের সমস্যার সমাধান করতে পারবে না।”

নিউজটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো খবর
error: আপনি নিউজ চুরি করছেন, চুরি করতে পারবেন না !!!!!!