॥গোয়ালন্দ প্রতিনিধি॥ রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ও দেবগ্রাম ইউনিয়নের পদ্মা নদীর তীরবর্তী এলাকায় ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙনে হুমকির মুখে পড়েছে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রবেশদ্বার হিসেবে খ্যাত দৌলতদিয়া ফেরী ও লঞ্চ ঘাট। সেই ঝুঁকির মুখে রয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থাপনা। ভাঙনে দৌলতদিয়ার তিন গ্রামের প্রায় ২০০টি পরিবারের বসতভিটা বিলীন হয়ে গেছে। অথচ ভাঙন প্রতিরোধে কার্যকর কোন ব্যবস্থা এখনো নেওয়া হয়নি।
সরেজমিনে পরিদর্শন করে দেখা যায়, উপজেলার দৌলতদিয়া ও দেবগ্রাম ইউনিয়নে দ্বিতীয় দফায় বন্যার পানি বৃদ্ধির পর ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে দৌলতদিয়ার ১ ও ২ নম্বর ফেরী ঘাটের কাছে পশ্চিমে অবস্থিত হাতেম ম-ল পাড়া, পাশের মালত পাড়া ও ১ নং বেপারী পাড়া গ্রাম তিনটিতে ব্যাপক ভাঙনে গত দুই সপ্তাহে প্রায় ২০০টি পরিবার অন্যত্র সরে গেছে। এসব পরিবারের বসতভিটা নদীতে বিলীন হয়েছে। হাতেম ম-লের পাড়ায় ভাঙনে পানির ¯্রােত সরাসরি গিয়ে আঘাত হানছে দৌলতদিয়া ফেরী ঘাটে। এতে চরম হুমকির মুখে পড়েছে ফেরী ও লঞ্চ ঘাট। সেই সাথে রয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বহু স্থাপনা।
মালত পাড়ার মজিবর খাঁ (৫০) ও জয়নাল ম-ল (৬০) বলেন, নদীতে পানি বাড়ার সাথে সাথে ভাঙনও ব্যাপক বেড়েছে। আমরা কোথায় যাব তার কোন কূল-কিনারা খুঁজে পাচ্ছি না। দুই মাসের মধ্যে ঢল্লা পাড়া গ্রামের অবশিষ্ট থাকা শতাধিক পরিবার ও মালত পাড়ার প্রায় ১৫০টি পরিবার অন্যত্র সরে গেছে। তাদের বসতভিটা এখন পদ্মার গর্ভে। ভাঙন আতংকে রয়েছে আরো প্রায় ৪৫০টি পরিবার।
হাতেম ম-লের পাড়ার আনোয়ার হোসেন বলেন, পদ্মার ভাঙন এত তীব্র যে মুহূর্তের মধ্যে বসতভিটা তলিয়ে যাচ্ছে। সামর্থ্য অনুযায়ী ঘর-বাড়ী সরিয়ে নিচ্ছে। অনেক পরিবারের ঘর-বাড়ী সরিয়ে নেয়ার সামর্থ্য নেই।
ভাঙন এলাকা পরিদর্শন শেষে গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুবায়েত হায়াত শিপলু বলেন, ভাঙন অব্যাহত থাকলে দৌলতদিয়া ফেরী ও লঞ্চ ঘাট হুমকির মুখে পড়বে। ফেরী ঘাটের পশ্চিমে নদীর ওপারে হাতেম ম-ল পাড়ায় যেভাবে ভাঙছে তাতে ওই এলাকা বিলীন হয়ে গেলে সরাসরি পানি ফেরী ঘাটে গিয়ে আঘাত হানবে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্য ও রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অবগত করা হয়েছে।
গতকাল ৩০শে ডিসেম্বর সকালে ভাঙন এলাকা পরিদর্শন শেষে রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব কাজী কেরামত আলী বলেন, এভাবে ভাঙতে থাকলে দৌলতদিয়া ফেরী ও লঞ্চ ঘাট রক্ষা করা মুশকিল হয়ে পড়বে। তাই অন্তত দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের যাতায়াত ঠিক রাখতে জরুরী ভিত্তিতে ফেরী ও লঞ্চ ঘাট রক্ষা করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া বিষয়টি আমি প্রধানমন্ত্রীসহ পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীকে জানাবো।