॥স্টাফ রিপোর্টার॥ সাম্প্রদায়িকতা, মৌলবাদ ও জঙ্গিবাদ নির্মূলে এবং আলোর পথে এগিয়ে চলার অঙ্গীকারের মধ্যদিয়ে জাতি গত ১৪ই এপ্রিল বরণ করে নিয়েছে ১৪২৪ বঙ্গাব্দকে। সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে রুখতে সর্বজনীন চেতনায় উদ্দীপ্ত বাঙালি জাতি গত শুক্রবার নতুন বাংলা বছরকে স্বাগত জানায়।
প্রতি বছরের ন্যায় এবারও রাজবাড়ী জেলা প্রশাসনের বর্নাঢ্য আয়োজনের মধ্যদিয়ে গত ১৪ই এপ্রিল পহেলা বৈশাখ বাংলা বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে সর্বস্তরের মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ছিলো চোখে পড়ার মতো। কয়েক হাজার মানুষের বর্ণিল, উচ্ছ্বল ও তেজোদীপ্ত পদচারণায় রাজবাড়ী শহর যেনো জনসমুদ্রে পরিণত হয়। চির নতুনের ডাক দিয়ে আসা পহেলা বৈশাখের বৈচিত্র্যের বর্হিপ্রকাশ ঘটেছে নারী-পুরুষের রঙিন সাজে, শিশুদের মুখে ফুটে ওঠা আনন্দের হাসি আর বর্ণিল পোশাকে।
রাজবাড়ী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের আম্রকানন চত্বরে সূর্যোদয়ের সাথে সাথে প্রভাতি সুর ও সংগীতের মাধ্যমে বাংলা নতুন বছরকে স্বাগত জানানো হয়। এ সময় আমন্ত্রিত অতিথিসহ উপস্থিত সকলকে মুড়ি-মুড়কি দ্বারা আপ্যায়ন করা হয়। আপ্যায়ন শেষে সেখান থেকে নববর্ষের মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করা হয়। আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ, কালেক্টরেটের কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের নানা বয়সী বিপুল সংখ্যক মানুষ বাঙালী সাজ ও ঐতিহ্যবাহী নানা উপকরণ নিয়ে শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করেন।
শোভাযাত্রাটি প্রধান সড়ক দিয়ে রেলগেটের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি ফলক চত্বর প্রদক্ষিণ করে একই স্থানে এসে সমাপ্ত হয়। এরপর অনুষ্ঠিত হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
জেলা প্রশাসক জিনাত আরা’র সভাপতিত্বে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পূর্বে সকলকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব কাজী কেরামত আলী, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফকীর আব্দুল জব্বার, রাজবাড়ী পৌরসভার মেয়র মহম্মদ আলী চৌধুরী, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(সার্বিক) রেবেকা খান, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মানোয়ার হোসেন মোল্ল¬া, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার শাখার উপ-পরিচালক মোঃ আব্দুল কাদের খান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(সার্কেল) মোঃ আজাদ রহমান, সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সৈয়দা নুরমহল আশরাফী, এমপি আলহাজ্ব কাজী কেরামত আলীর সহধর্মিনী রেবেকা সুলতানা সাজু ও মেয়ে কানিজ ফাতেমা চৈতী প্রমুখ।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে জেলা শিল্পকলা একাডেমী ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সহযোগিতায় বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের পরিবেশনার পাশাপাশি ছিল গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য লাঠি খেলা ও সাপ খেলা।
সংসদ সদস্য আলহাজ্ব কাজী কেরামত আলী ও তার কন্যা কানিজ ফাতেমা চৈতী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করে সকলকে মুগ্ধ করেন।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শেষে জেলা প্রশাসকের বাসভবনে ছিল অতিথিদের জন্য পান্তা ভাতসহ ঐতিহ্যবাহী বাঙালী খাবারের আয়োজন। এছাড়াও ছিল কালেক্টরেট ও অফিসার্স ক্লাব প্রাঙ্গনে ছিল নাগরদোলা ও বৈশাখী মেলার আয়োজন।
কাকডাকা ভোর থেকে রাজবাড়ী শহরবাসীকে ছুটতে দেখা গেছে জেলা প্রশাসকের আম্রকানন অভিমুখে। জেলা প্রশাসনের বর্ষবরণের আয়োজন শুরুর বেশ আগে থেকেই সেখানে দলে দলে মানুষ সমবেত হতে থাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই অনুষ্ঠানস্থলের উপচে মানুষ ছড়িয়ে পড়ে চার পাশে। এক সময় পুরো ডিসি অফিস লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়।
উৎসবে যোগ দিতে বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষের সঙ্গে বাবা-মার হাত ধরে ডিসি অফিসের আম্রকানন মুখী হয়েছে শিশুরাও। সকাল ৭টার আগেই অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশ পথে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়াতে হয় মানুষকে।
এবার জেলা পুলিশের কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনি পার হয়ে অনুষ্ঠানস্থলে ঢুকতে হয়েছে সকলকে। বর্ষবরণের এ উৎসবে রুঙন ও লাল পাড়ের সাদা শাড়িতে নারী এবং অধিকাংশ পুরুষকে দেখা যায় রঙিন পাজামা-পাঞ্জাবি পরিহিত।
বর্ষবরণ উপলক্ষে অনুষ্ঠানস্থলসহ রাজবাড়ী শহরে চারদিক থেকে নিরাপত্তা চাদরে ঢেকে ফেলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তবে এই কড়া নিরাপত্তায়ও উৎসব ও উচ্ছ্বাসে কোন প্রকার ব্যত্যয় ঘটেনি।
সারা দেশের ন্যায় রাজবাড়ীতেও চৈত্র সংক্রান্তি ও পহেলা বৈশাখ উদযাপনে নানা আয়োজন করা হয়েছে।
এছাড়াও পহেলা বৈশাখ বাংলা বর্ষবরণ উপলক্ষে রাজবাড়ী সদর উপজেলা পরিষদ, রাজবাড়ী বর্ষবরণ উদযাপন পর্ষদ, রাজবাড়ী সরকারী কলেজ, গোয়ালন্দ উপজেলা পহেলা বৈশাখ উদযাপন পর্ষদের আয়োজনে বাংলা নববর্ষ উদযাপন করা হয়।