॥তোফাজ্জল লিটন, নিউইয়র্ক থেকে॥ দুই ভাগে বিভক্ত ফোবানার(ফেডারেশন অব বাংলাদেশীজ অ্যাসোসিয়েশন অব নর্থ আমেরিকা) তিন দিনব্যাপী ৩৩তম সম্মেলন গতকাল ৩০শে আগস্ট থেকে ১লা সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে পৃথকভাবে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
উত্তর আমেরিকায় প্রবাসীদের সবচেয়ে বড় এই আয়োজনে আগ্রহ হারিয়েছেন প্রবাসীরা। তিন দশক আগে শুরু হওয়া ফোবানায় একসময় যোগ দিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীসহ রাষ্ট্রনেতারা। সময়ের বিবর্তনে মলিন হওয়া ফোবানার এবারের কোন অনুষ্ঠানেই থাকছেন না কোন সরকারী প্রতিনিধি। এক পক্ষের উদ্যোগে লং আইল্যান্ডের নাসাও কলোসিয়ামে হচ্ছে ‘ফোবানা সম্মেলন’ এবং অপর পক্ষের উদ্যোগে লাগোর্ডিয়া ম্যারিয়ট হোটেলে হচ্ছে ‘ফোবানা কনভেনশন’।
ফোবানা বিভক্ত হয়েছে ব্যক্তি স্বার্থ, নেতৃত্বের কোন্দল, অর্থ আত্মসাৎ-এসব কারণে। হয়েছে মামলা-মোকদ্দমা। আদম পাচারের অভিযোগও উঠেছে কোন কোন সময়। এসব নিয়ে প্রবাসীরা ক্লান্ত। তাই বড় বাজেটে দু’টি আয়োজন হলেও তা নিছক নাচ-গানের অনুষ্ঠানে পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশী কমিউনিটির লোকজন। দুই পক্ষের কেউই আয়োজন বাবদ কতো টাকা উঠছে বা কতো টাকা ব্যয় হচ্ছে তার হিসাব দেননি।
ফোবানায় কোন সরকারী প্রতিনিধি না থাকার বিষয়ে নিউইয়র্কের বাংলাদেশ কনস্যুলেটের কনসাল জেনারেল সাদিয়া ফয়জুন্নেসা বলেন, আগস্ট শোকের মাস। আমরা এই মাসে কোন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যাই না। সেপ্টেম্বরের ১ তারিখের অনুষ্ঠানে যেতে পারবো কি-না তা নির্ভর করবে কাজের উপর।
আক্কাস উদ্দিন নামের একজন নাট্য কর্মী বলেন, একটি ফোবানার মিলনায়তন ভাড়াই তিন দিনে ৩লাখ ডলার। আরেকটি ফোবানার হল ভাড়ায় ব্যয় হচ্ছে লক্ষাধিক ডলার। আমেরিকায় কোথাও বাংলাদেশীদের কোন সেন্টার নেই। কোন অনুষ্ঠান করতে হলে হল ভাড়া দিয়ে কোন রেস্টুরেন্ট অথবা স্কুলের অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠান করতে হয়। যে টাকা তারা ফোবানার নামে নাচ-গানের অনুষ্ঠান করে ব্যয় করছে তা দিয়ে অনায়াসে একটি সেন্টার করা যেত। আক্কাস উদ্দিন প্রশ্ন রেখে বলেন, ফোবানা বাংলাদেশী কমিউনিটির কল্যাণে কী করছে? কখনো আদম পাচারের অভিযোগ, চাঁদাবাজী করে নিজের পকেট পূর্ণ করার অভিযোগ, নেতৃত্ব নিয়ে পরস্পরের নিন্দা-কলহ ছাড়া প্রবাসীদের কোন কল্যাণ করছে বলে আমি মনে করি না। সর্বনি¤œ ত্রিশ ডলারের টিকেট হলেও দুই পক্ষই তাদের অনুষ্ঠানে দর্শক নেওয়ার জন্য ফ্রি টিকেট বিলি করছে নানা কায়দায়।
নিউইয়র্ক সিটির অদূরে লং আইল্যান্ডের নাসাউ কলোসিয়ামে ব্যয়বহুল যে ‘ফোবানা সম্মেলন’ হচ্ছে তার আয়োজক বাংলাদেশী নাট্য সংগঠন ‘ড্রামা সার্কেল’।
অপরদিকে ‘ফোবানা কনভেনশন’ নামে আরেকটি আসর বসছে নিউইয়র্ক সিটির লাগোর্ডিয়া ম্যারিয়ট হোটেলে। এর আয়োজক ‘বাংলাদেশী আমেরিকান ফ্রেন্ডশীপ সোসাইটি (ইন্ক)’।
কনভেনশন কমিটির আহ্বায়ক মোঃ শাহনেওয়াজ বলেন, আমাদের সমস্ত প্রস্তুতি শেষ। টিকেটও প্রায় শেষের পথে। আমরা আশা করছি, অন্তত চার হাজার প্রবাসী আমাদের আয়োজন উপভোগ করবেন। কোন খাতে কতো টাকা ব্যয় হচ্ছে বা কতো টাকা উঠেছে তার হিসাব এখন দিতে পারছি না। পরে যোগাযোগ করলে পারবো।
সম্মেলন কমিটির আহ্বায়ক নার্গিস আহমেদ বলেন, নাসাউ কলোসিয়াম বিশ্বের ১০টি বড় ভেন্যুর মধ্যে একটি। আমরা আশা করছি, ১০ হাজার বাঙ্গালী অনুষ্ঠানে আসবেন। ব্যয়ের হিসাব অনুষ্ঠানের পর দিতে পারবো। এখন টাকা উঠছে-ব্যয় করছি, আবার নিজেদের টাকাও খরচ করছি আমরা।