॥শিহাবুর রহমান॥ রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার সালমা বেগম পিপিএম-সেবা বলেছেন, আমরা একটি শ্লোগানে বিশ্বাসী। সেটা হলো পুলিশ জনগনের বন্ধু। পুলিশকে আপনাদেরও বন্ধু ভাবতে হবে। তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করতে হবে। তাহলেই আমরা ভাল পুলিশিং করতে পারবো। আমরা তখনই এদেশকে মাদকমুক্ত, ইভটিজিং মুক্ত, বাল্য বিবাহ মুক্ত ও জঙ্গী মুক্ত করতে পারবো যখন আপনারা সহযোগিতা করবেন। আপনারা শুধু তথ্য দিবেন। আমরা সাথে সাথে সেখানে পৌঁছে যাবো এবং ব্যবস্থা নেবো। এ জন্য আপনার সহযোগিতা একান্ত কাম্য।
গতকাল ৪ঠা এপ্রিল বিকেলে রাজবাড়ী সদর উপজেলার মূলঘর ইউপির রশোড়া বাজারে জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাস নির্মূল, ইভটিজিং ও বাল্য বিবাহ প্রতিরোধ, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সমুন্নত রাখার লক্ষ্যে মূলঘর ইউনিয়নবাসীর সাথে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ইদানিং দেশে জঙ্গীবাদ বড় একটা মাথা ব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আপনারা জানেন ২৫শে মার্চের কাল রাতে পাকিস্তানী সেনারা রাজারবাগে পুলিশের ওপর প্রথম হামলা করে। পুলিশই দেশের জন্য প্রথম রক্ত দেয়। আমরা সেই পুলিশের গর্বিত সদস্য। সেই থেকে এখন পর্যন্ত আমরা অনেক সহকর্মীকে হারিয়েছি। যেমন হারিয়েছি শোলাকিয়ায়, গুলশানে, সিলেটে, মৌলভী বাজারে। এ রকম জীবন দেয়া আর কোন সরকারী বাহিনীতে নেই। শুধু পুলিশই এ রকম জীবন দিয়ে থাকে।
তিনি মহিলাদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা অল্প বয়সে মেয়ে বিয়ে দিবেন না। অল্প বয়সে বিয়ে দিলে স্বাস্থ্যগতসহ নানা সমস্যায় জজরিত হয়ে সে সংসারের বোঝা হয়ে দাঁড়াবে। আর যদি আপনার মেয়ে যদি আই.এ, বি.এ পাশ করে তাহলে সে নিজের পায়ে দাঁড়াবে। তখন কিন্তু সে বোঝা নয়। বরং সম্পদ হয়ে দাঁড়াবে।
পুলিশ সুপার সালমা বেগম ইভটিজিং এর বিষয়ে যুবকদের উদ্দেশ্যে বলেন, তোমরা সব সময় মাথায় রাখবে তোমার মা আছে, বোন আছে, চাচী, আছে, খালা আছে। তোমার বোনকে যদি কেউ বাজে মন্তব্য করে বা অশালীন অঙ্গভঙ্গিতে কথা বলে তাহলে তোমার কেমন লাগবে। এই জায়গায় তোমার মাকে, বোনকে, খালাকে, চাচীকে বসাবা। তাহলে ইভটিজিং এমনিতে বন্ধ হয়ে যাবে।
তিনি বলেন, আমি রাজবাড়ীতে এসেই ঘোষণা দিয়েছিলাম রাজবাড়ী হবে নারী বান্ধব, রাজবাড়ী হবে জনবান্ধব। যে রাজবাড়ীর মেয়েরা নিঃসংকোচে ও নির্ভয়ে রাস্তাঘাটে স্কুল কলেজে যাতায়াত করতে পারবে।
তিনি আরো বলেন, এদেশের ১৬কোটি মানুষ। ১৬কোটি সম্পদ। আর এর অর্ধেকের বেশী নারী। তাই তাদের বাদ দিয়ে এদেশের উন্নয়ন সম্ভব না। আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারীদের উন্নয়নে কাজ করছেন। মেয়েদের ডিগ্রী পর্যন্ত উপবৃত্তির ব্যবস্থা করেছেন। তিনি নারী শিক্ষার অগ্রদূত।
পরিশেষে পুলিশ সুপার সালমা বেগম স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এবং বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে বক্তব্য শেষ করেন।
মূলঘর ইউনিয়ন কমিউনিটি পুলিশিং ফোরাম ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আয়োজনে মতবিনিময় সভায় অন্যান্যের মধ্যে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(সদর সার্কেল) মোঃ আজাদ রহমান, সদর থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) মোঃ আবুল বাশার মিয়া, সদর উপজেলা কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এস.এম নওয়াব আলী, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ অহিদুজ্জামান, মূলঘর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এম.এ সেলিম, সাধারণ সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল হক ও বসন্তপুর ইউনিয়ন কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের সভাপতি জালাল মাষ্টার প্রমুখ বক্তব্য দেন।
সভায় সভাপতিত্ব করেন মূলঘর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুল মান্নান মুসুল্লী ও পরিচালনা করেন সদর উপজেলা কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ডাঃ আঃ রহিম।
সভায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(সদর সার্কেল) মোঃ আজাদ রহমান বলেন, আমাদের পুলিশ সুপার মাদকের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করেছেন। আপনারাও এই জিহাদে শরীক হোন। কেউ যদি ইভটিজিং করতে গিয়ে ধরা পড়ে তাহলে পুলিশের খাতায় তার নাম উঠবে। যদি সে সরকারী কোন চাকুরী পায় তাহলে পুলিশ ভেরিফিকেশনের সময় সে ধরা খেয়ে যাবে। তার চাকুরী হবে না। তাই ইভটিজিং এর পিছনে না ছুটে পড়াশুনা করো। একদিন মেয়ের মায়েরাই তোমাদের বিয়ের প্রস্তাব দিবে।
এরআগে অনুষ্ঠানের শুরুতে পুলিশ সুপার সালমা বেগমকে মাদক নির্মূলে বিশেষ ভূমিকা রাখার জন্য মূলঘর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুল মান্নান মুসুল্লী তাকে ক্রেস্ট প্রদান করেন।