॥আসহাবুল ইয়ামিন রয়েন॥ রাজবাড়ী জেলা প্রশাসনের আয়োজনে গতকাল ২২শে জুলাই বেলা ১১টায় কালেক্টরেটের সম্মেলন কক্ষে জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির মাসিক সভা অনুষ্ঠিত হয়।
কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক প্রশাসক দিলসাদ বেগমের সভাপতিত্বে সভায় ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার মোঃ সালাহ উদ্দিন, সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ মাহফুজার রহমান সরকার, পৌরসভার মেয়র মহম্মদ আলী চৌধুরী, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার শাখার উপ-পরিচালক মোঃ বাকাহীদ হোসেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(সার্বিক) মোহাম্মদ আশেক হাসান, বালিয়াকান্দি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ, গোয়ালন্দ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবিএম নূরুল ইসলাম, পাংশা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফরিদ হাসান ওদুদ, কালুখালী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলিউজ্জামান চৌধুরী টিটো, এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী খান এ শামীম, গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শম্ভুরাম পাল, সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী(চঃ দাঃ) কে.বি.এম সাদ্দাম হোসেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ শফিকুল ইসলাম, ওজোপাডিকোর নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আমিনুল ইসলাম, সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ সাঈদুজ্জামান খান, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ ফজলুর রহমান, সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক রুবায়েত মোঃ ফেরদৌস, জেলা মৎস্য অফিসার মোহাঃ মজিনুর রহমান, জেলা নির্বাচন অফিসার মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান, জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা নূরে সফুরা ফেরদৌস ও বিটিভির প্রতিনিধি মোহাম্মদ সানাউল্লাহ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
এ সময় উপজেলা নির্বাহী অফিসারগণ, জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনারগণ ও বিভিন্ন সরকারী দপ্তরের কর্মকর্তাগণসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক দিলসাদ বেগম বলেন, আগামী বছর মুজিববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে রাজবাড়ী জেলায় যাতে ব্যতিক্রমী কিছু করা যায় সে ব্যাপারে প্রস্তুতি নিতে হবে। জেলার শিক্ষিতের হার জাতীয় গড়ের চেয়ে কম, যা অত্যন্ত কষ্টের। এই শিক্ষার হার যাতে জাতীয় গড়ের সমপর্যায়ে আনা যায় সে ব্যাপারে শিক্ষা সংশ্লিষ্ট সকলকে আরও আন্তরিকতা ও দায়িত্বশীল হয়ে কাজ করতে হবে। এ জন্য জেলার প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ঠিকমতো পাঠদান হচ্ছে কিনা, শিক্ষকরা ঠিকমতো উপস্থিত থাকছেন কিনা সে ব্যাপারে শিক্ষা বিভাগকে খেয়াল রাখতে হবে। আমি রাজবাড়ী জেলায় যোগদানের পর পদ্মা নদীর ভাঙ্গন সম্পর্কে যে বিষয়টি জানতে পেরেছি সেটি হলো পানি বৃদ্ধির সময়ের পাশাপাশি কমার সময়েও ভাঙ্গন হয়ে থাকে। এই ভাঙ্গন যাতে প্রতিরোধ করা যায় সে জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে সবসময় প্রস্তুত থাকতে হবে। ভাঙ্গন সম্পর্কিত তথ্য জেলা প্রশাসন বা পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানালে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
তিনি বলেন, সিভিল সার্জনের তথ্য মতে, বন্যার প্রস্তুতি হিসেবে জেলায় ৪২টি মেডিকেল টিমসহ পর্যাপ্ত স্যালাইন ও ওষুধ মজুদ আছে। প্রয়োজন অনুযায়ী যেসব স্থানে পানিবাহিত রোগের সমস্যা হবে সেসব জায়গায় এগুলো ব্যবহার করা হবে। বিভিন্ন তথ্য মতে জানা যায়, বন্যার সময় বিভিন্ন জায়গায় সাপে কাটার প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। এ জন্য জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে এন্টিভেনম (সাপে কাটার ভ্যাকসিন) মজুদ রয়েছে। যদি কোথাও কাউকে সাপে কাটে তাহলে সম্ভব হলে তাকে জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে আসতে হবে, কারণ সেখানে অ্যানেসথেসিয়া চিকিৎসকসহ অন্যান্য সুবিধা রয়েছে। পাংশা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক্স-রে মেশিনটি ৫বছর ধরে নষ্ট রয়েছে। সিভিল সার্জনের মাধ্যমে বিষয়টির সমাধান করা হবে। রাজবাড়ী জেলার মডেল মসজিদ রেলের যে জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছিল সেখানে না করার জন্য রেলওয়ের পক্ষ থেকে পত্র দেয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে রেল কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কের মুরগীর ফার্ম থেকে পাংশার দিকের ৭কিলোমিটার এলাকা সংস্কার করা হয়েছে। জেলা নির্বাচন অফিসারের বক্তব্য অনুযায়ী, বন্যা কারণে আগামী ২৫শে জুলাই অনুষ্ঠিতব্য গোয়ালন্দ উপজেলার ২টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন করা যাবে কিনা সে ব্যাপারে নির্বাচন কমিশন থেকে জানতে চাওয়া হয়েছিল। তার প্রেক্ষিতে দৌলতদিয়া ও দেবগ্রাম ইউনিয়নের ভোটগ্রহণের জন্য নির্ধারিত কয়েকটি কেন্দ্র এবং নির্বাচন কেন্দ্রে যাওয়ার রাস্তা পানিতে ডুবে যাওয়ার বিষয়টি জানানো হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ওই ২টি ইউনিয়নের নির্বাচন হবে কিনা সে বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। রাজবাড়ীতে বিদ্যুতের গ্রীড সাব-স্টেশন নির্মাণের কাজে ধীরগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এই কাজের গতি বাড়াতে হবে। আঞ্জুমান-মুফিদুল ইসলামকে অ্যাম্বুলেন্স প্রদানের বিষয়ে আলোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। রাজবাড়ী জেলাকে যাতে উন্নত বিশ্বের শহরগুলোর মতো সুন্দর করা যায় সে জন্য প্রতিটি সরকারী বিভাগে, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, রাস্তার পাশে যেখানেই পরিত্যক্ত জায়গা আছে সেখানে পরিষ্কার করে রং-বেরঙের ফুল ও ফলের গাছ লাগিয়ে সৌন্দর্য বর্ধন করা যায় সে জন্য সকলকে বলা হলো, যাতে যে কোন মানুষ রাজবাড়ী আসলে বলতে পারে এটি একটি সুন্দর শহর।
এছাড়াও সভায় পুলিশ বিভাগ ও স্বাস্থ্য বিভাগের বিভিন্ন বিষয়, ডেঙ্গু প্রতিরোধে ব্যবস্থা গ্রহণ, পৌর এলাকার বেওয়ারিশ কুকুর নিধন, পাংশা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সসহ অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ, সদর হাসপাতালের চিকিৎসক সংকট, গণপূর্ত বিভাগের আওতাধীন এনএসআই’র নিজস্ব ভবন তৈরী ও অন্যান্য বিষয়, টিএন্ডটির ব্রডব্যান্ড লাইন চালু না থাকা, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী বজ্রপাত প্রতিরোধে তালগাছ রোপন, এলজিইডি কর্তৃক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা মেরামত, কৃষি বিভাগ কর্তৃক, বন্যায় ফসলের ক্ষতি নিরূপণ, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর বাস্তবায়নাধীন পৌরসভার ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট, পুকুর খনন ও টিউবওয়েল স্থাপন, রাজবাড়ী শহর রক্ষা বেড়িবাঁধের ক্ষতিগ্রস্ত অংশ ও চলমান কাজ, বন্যায় কয়েকটি মাধ্যমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয় প্লাবিত হওয়া, আসন্ন ঈদে দৌলতদিয়া ঘাট ব্যবস্থাপনা, পাংশায় সাব-রেজিস্ট্রার না থাকা, ২৫-৩১শে জুলাই মশক নিধন অভিযানসহ জেলার উন্নয়ন সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা এবং আজ ২৩শে জুলাই অনুষ্ঠিতব্য পাবলিক সার্ভিস দিবসের অনুষ্ঠানে সকলকে অংশগ্রহণের অনুরোধ জানানো হয়।