॥কাজী তানভীর মাহমুদ॥ রাজবাড়ী জেলার বিভিন্ন এলাকার পদ্মা নদীর চরের চিনা বাদাম চাষীরা এবার লোকসানের মুখে পড়েছেন।
তাদের অভিযোগ, ভালোভাবে চাষাবাদ করার পরও মাটির উর্ব্বরতা হ্রাস ও কৃষি বিভাগের সহায়তা না পাওয়ার কারণে এবার চিনা বাদামের আশানুরূপ ফলন মেলেনি।
গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া এলাকার পদ্মা নদীর তীরবর্তী বিস্তীর্ণ চরের জমিতে কয়েক হেক্টর জমিতে ঢাকা-১, বিনা-৪, মাইজ চর ও লোকাল জাতসহ কয়েকটি জাতের চিনাবাদাম চাষ করেছেন চাষীরা। সেখানকার হোসেন আলী শেখ নামের একজন বাদাম চাষী বলেন, এবার ৪০ পাখি জমিতে (৩৩ শতাংশে ১ পাখি) বাদামের চাষ করেছি। গত বছর প্রতি পাখি জমিতে ৬ বস্তা করে বাদাম পেলেও এ বছর মাত্র ৩ বস্তা করে পেয়েছি।
হাজু বেগম নামের আরেকজন কৃষাণী বলেন, গত বছর যেখানে ৮ মণ বাদাম হয়েছিল-এবার সেখানে মাত্র ২ মণ হয়েছে। জমির উৎপাদন ক্ষমতা কমে গেছে। এর পাশাপাশি কৃষি বিভাগের কোন লোক আমাদেরকে বাদাম চাষের ব্যাপারে কোন পরামর্শ দেয়নি। তারা আসেইনি।
এলাহী মন্ডল নামের আরেকজন বাদাম চাষী বলেন, শুকানো বাদাম ২ হাজার ৫শ’ আর ভেজা বাদাম ২ হাজার টাকা বস্তা বিক্রি করছি। আশানুরূপ ফলন না পাওয়ার এবার আমরা লোকসানে পড়েছি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কার্যালয়ের তথ্য মতে, রাজবাড়ী জেলায় এবার ৯৫০ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে আবাদ হয়েছে ৭৭৫ হেক্টর জমিতে। হেক্টর প্রতি বাদাম উৎপাদন হয়েছে ১ হাজার ৭৫০ কেজি, যা ৭৭৫ হেক্টরের হিসেবে ১ হাজার ৩৬৩ টন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ ফললুর রহমান বলেন, বাদাম চাষীরা উন্নত জাতের বাদামের বীজ ব্যবহার না করে স্থানীয় পর্যায় থেকে বীজ সংগ্রহ করে চাষাবাদ করায় আশানুরূপ ফলন হয়নি। এছাড়া চলতি মৌসুমের শুরুর দিকে বৃষ্টিতে জমিতে পানি জমে যাওয়ায় বাদামের ফলন কম হয়েছে। চাষীদেরকে সবসময় উন্নত জাতের বীজ ব্যবহার করার পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে। বাদাম চাষীরা গ্রুপ ভিত্তিক বাদাম সংগ্রহ করে বড় বাজারে নিয়ে বিক্রি করলে দাম ভালো পাবে বলে আশা করি। ভালো বীজ ব্যবহারের জন্য কৃষকদের মাঝে বীনা-৪ বীজের প্রদর্শনী আকারে দেওয়া হয়েছে গোয়ালন্দ উপজেলার দেবগ্রামে। উন্নত বীজ ও সঠিক মৌসুমে জৈব সার ব্যবহারের মাধ্যমে বাদাম চাষ করলে কৃষকরা লাভের মুখ দেখবে। কৃষি পরামর্শ পেতে ১৬১২৩ অথবা ৩৩৩১ নম্বরে ফোন করতে পারেন চাষীরা।