॥স্টাফ রিপোর্টার॥ এখন আর এখানে জমিদাররা কেউ নেই। এখানে আর কেউ ঘোড়ায় চরে বেড়ায় না। আসে না কেউ খাজনা মওকুফের আবেদন নিয়ে। জমিদারদের আজ কেউ নেই রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের নলিয়াতে। রয়ে গেছে তাদের রেখে যাওয়া কিছু স্মৃতি চিহ্ন, যেগুলো হারানোর পথে।
রাজবাড়ী জেলা শহর থেকে ৩০ কিঃ মিৎ দূরে জামালপুর-কোলারহাট সড়ক দিয়ে চলার পথে পথিকের চোখ পড়ে যায় চারটি রাজা সীতারাম রায়ের জরার্জীর্ণ মন্দিরের দিকে।
মন্দিরের পুরোহিত বিদ্যুৎ মুখার্জী বলেন, শুনেছি এখানে ৯টি মন্দির ছিল কিন্তু রক্ষণাবেক্ষনের অভাবে ৪টি মন্দির হারিয়ে গেছে। তিনি জানান, নছিব সাই পরগনার রাজা সীতারাম রায় ২৫০/৩০০ বছর পূর্বে এই মন্দিরগুলো স্থাপন করেন। নছিব সাই পরগনার রাজা এই অঞ্চলের জমিদারী দেখাশোনার জন্য রাজবাড়ীর বেলগাছী নামক স্থানে থেকে জমিদারী পরিচালনা করতেন। রাজা একবার স্বর্ণের মূর্তি দিয়ে দুর্গাপূজা করতে চাইলে, প্রতিমা কর্মকার হিসেবে এই নলিয়া গ্রামের এক কর্মকারকে পছন্দ করেন। কিন্তু রাজা কর্মকারের বিরুদ্ধে সোনা চুরির অভিযোগ তুলে বেলগাছীতেই প্রতিমা তৈরির জন্য কর্মকারকে নির্দেশ দেন। কর্মকার রাজী হয়ে মনের ক্ষোভে স্বর্ণের প্রতিমার আদলে নিজ বাড়ীতেও পিতল দিয়ে অনুরূপ একটি প্রতিমা তৈরি করেন। ঠিক পূজার আগের দিন কর্মকারের বাড়ীর তৈরি পিতলের প্রতিমা রাজার পুকুরে রেখে আসেন। কাদা মাটি দিয়ে সোনা পরিষ্কার করার সুযোগে পুকুর থেকে কর্মকার প্রতিমা পরিবর্তন করে রাজাকে পিতলের মূর্তি দিয়ে দেন। পূজার শুরুর কিছুক্ষণ আগে কর্মকার বলেন, আপনি তো আমাকে সোনা চুরির অভিযোগ দিয়েছিলেন কিন্তু আমি আপনার সম্পূর্ণ সোনাই চুরি করেছি। সব ঘটনা বললে রাজা তখন কর্মর্কারকে নলিয়ায় পূজা করার নির্দেশ দেন এবং এই মন্দিরগুলো প্রতিষ্ঠা করেন।
নলিয়া শ্যামামোহন ইনস্টিটিউশনের প্রধান শিক্ষক হারান চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, এগুলো বর্তমানে সরকারী সম্পত্তির উপর রয়েছে। এই স্থাপনাগুলো সংরক্ষণের জন্য সরকারকেই এগিয়ে আসতে হবে।
সরেজমিনে প্রতিবেদন সংগ্রহ করতে গিয়ে দেখা যায়, চারটি মন্দির রয়েছে। সবগুলো মন্দিরের অধিকাংশই নষ্ট হয়ে গেছে। ভিতরে পরগাছা এবং চামচিকা বসবাস করছে।
জমিদারদের রেখে যাওয়া বিদ্যাপিঠের প্রধান শিক্ষক শাহজাহান মিয়া বলেন, সমগ্র দেশের মধ্যে মন্দিরগুলো ইতিহাস ও ঐতিহ্য বহন করে। এই মন্দিরগুলো অপরূপ কারুকাজে নির্মিত। যেগুলোর দিকে সরকারকে দৃষ্টি দিতে হবে।
ইতিহাস ও ঐতিহ্য সংরক্ষণে মন্দিরের গুরুত্ব তুলে ধরে শ্যামামোহন ইনস্টিটিউশনের শিক্ষার্থী সুমি বলেন, সরকারের উচিত এই স্থাপনা সংরক্ষণ করা।
মন্দিরগুলো রক্ষনাবেক্ষণের কোন উদ্যোগ গ্রহণ করবেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে বালিয়াকান্দি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ আবুল কালাম আজাদ বলেন, অবশ্যই এগুলো সংরক্ষণ করা হবে। আমি দ্রুত মন্দির পরিদর্শনে যাবো।