॥স্টাফ রিপোর্টার॥ কালুখালী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থী কাজী সাইফুল ইসলামের পক্ষে নির্বাচন করার অপরাধে মদাপুর ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম মৃধাকে কুপিয়ে জখম করেছে দুর্বৃত্তরা।
গতকাল ১৬ই জুন বিকেলে ৫টার দিকে রাজবাড়ী শহরের সজ্জনকান্দা ফায়ার সার্ভিস এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার সময় তার সাথে থাকা ভাগ্নে চঞ্চল মন্ডল (১৮)কেও কুপিয়ে জখম করা হয়। আহত অবস্থায় তাদেরকে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে চিকিৎসার পর উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় রেফার করা হয়েছে।
ঘটনার প্রত্যক্তদর্শী রেজাউল মোল্লা নামে এক যুবক জানান, বিকেলে মদাপুর ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালামসহ আমরা ৪জন দুটি মোটর সাইকেলে রাজবাড়ী জেলা নির্বাচন অফিসে যাই। সেখান থেকে ফেরার পথে শহরের পাবলিক হেলথ এলাকায় কামনা ব্লিডিং-এর সামনে এলে ১৫/২০টি মোটর সাইকেলে প্রতিপক্ষের লোকজন এসে চেয়ারম্যান আবুল কালামকে ঘিরে ধরে কুপিয়ে জখম করে। এ সময় তার মোটর সাইকেলে চালক হিসেবে থাকা উজ্জল মন্ডল নামে এক যুবককেও বেদমভাবে মারপিট করে তারা। আমি ও আমার সাথে থাকা অপর একজন মোটর সাইকেল কোন রকমভাবে পাশ কেটে এসে সামনে পুলিশ পেয়ে তাদেরকে বিষয়টি জানায়। কিন্তু তারা কোন পদক্ষেপ নেননি।
খবর পেয়ে কালুখালী উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান কাজী সাইফুল ইসলাম এবং স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী নূরে আলম সিদ্দিকী হক রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে তাদেরকে দেখতে আসেন।
এ সময় কাজী সাইফুল ইসলাম উপস্থিত সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করে বলেন, তার নৌকা প্রতীকের পক্ষে কাজ করায় মদাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কালাম মৃধার উপর সুপরিকল্পিতভাবে হামলা চালানো হয়েছে।
নৌকার প্রার্থী কাজী সাইফুল ইসলাম বলেন, আমার নির্বাচনে প্রধান পরিচালনাকারী মদাপুর ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম। গতকাল ১৬ই জুন বিকেলে তিনি জেলা নির্বাচন অফিসে অভিযোগ দিতে যান। অভিযোগ দিয়ে সেখান থেকে ফেরার পথে জনসম্মুখে তাকে কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। ঘটনার সাথে মজনু ও তার ভাই এবং শহিদ মহুরী ছিল। শহীদ মহুরী ফোন করে সন্ত্রাসীদের জানায় চেয়ারম্যান আবুল কালাম রাজবাড়ী কোর্ট এলাকা থেকে নির্বাচন অফিসে যাচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, এ রকম ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটছে। আমিও প্রচন্ড নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছি। আমার কর্মিরা কোথাও গেলে তারা প্রচন্ড মারপিটের শিকার হচ্ছে। এ পর্যন্ত অন্তত ১০জনকে মেরে হাত-পা ভেঙে দেয়া হয়েছে। এটা করছে গুটি কয়েক লোক। এরা জনসম্মুখে পিস্তল, রামদা, ছ্যানদা নিয়ে মিছিল করছে। আমার কর্মিদের পিস্তল প্রর্দশন করা হচ্ছে। আমরা পুলিশের কাছে অভিযোগ করে কোন প্রতিকার পায়নি। এর আগে নির্বাচন কমিশনারের কাছে অভিযোগ করে ছিলাম। দুই ওসিকে প্রত্যাহার করেছে। এরপর দুইদিন ভাল ছিল। গতকাল গভীর রাত থেকে এই সমস্ত তান্ডব চলছে। গতরাতে আমার কর্মি মদাপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি ইউসুফ হোসেন মাষ্টারের বাড়ী কুপিয়ে ফানাফানা করা হয়েছে। উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মোসলেম উদ্দিন উকিলের বাড়ী কুপিয়ে ফানাফানা করে ফেলেছে। বোয়ালিয়ায় আওয়ামী লীগ নেতা ও বাংলাদেশ হাট বনিক সমিতির সভাপতি বিষু মন্ডলের বাড়ী পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। প্রতিনিয়তই এ রকম ঘটনা ঘটছে। আর আমরা অভিযোগ দিতে গেলে পুলিশ মামলা নিচ্ছে না। অপরদিকে তারা মিথ্যা অভিযোগ করে আমার ছোট দুইভাইসহ আমার কর্মিদের নামে বিস্ফোরক মামলা দিয়েছে। আমার বাড়ীর সামনে পুলিশ বসে থাকে। এ রকম পরিস্থিতি হলে আমরা কিভাবে নির্বাচন করবো। আপনাদের মাধ্যমে জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে আকুল আবেদন এ অবস্থার প্রতিকার করেন। না হলে আমার নির্বাচন করা সম্ভব হবে না।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন চূড়ান্ত হবার পর থেকে নৌকা বিরোধী একটি গোষ্ঠী দলীয় নেতাকর্মীদের কুপিয়ে জখম ও প্রাণ নাশের চেষ্টা করাসহ বসত বাড়ীতে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করছে। ফলে সন্ত্রাসীরা নির্বাচনী এলাকাসহ নির্বাচনী এলাকার বাইরেও কালুখালী উপজেলার ত্যাগী আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উপর হামলা চালিয়ে কুপিয়ে রক্ত ঝড়াচ্ছে। তিনি আরো বলেন, নৌকা মার্কা পেয়ে যদি আমার এই অবস্থা হয় তাহলে সাধারণ যারা আছে তাদের কি অবস্থা হবে।
রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের জরুরী বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাঃ মোঃ নাহিদ রায়হান বলেন, ‘আবুল কালাম মৃধার শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখমের চিহ্ন ছিলো। প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে।
এ ঘটনায় চেয়ারম্যান কালাম মৃধার ভাই মোঃ সালাম মৃধা বাদী হয়ে ১৭জনকে আসামী করে রাজবাড়ী থানায় একটি লিখিত এজাহার দায়ের করেছে।
উল্লেখ্য, আগামীকাল ১৮ই জুন কালুখালী উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সহিংসতার ধারাবাহিকতায় এবার চেয়ারম্যান আবুল কালাম মৃধার উপর হামলার ঘটনা ঘটলো।