বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ০৩:০১ অপরাহ্ন
Logo
সংবাদ শিরোনাম ::
বিশ্বব্যাপী ওমিক্রন সংক্রমণ বৃদ্ধিতে আইসোলেশন মেয়াদ অর্ধেক করার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ওমিক্রন ভেরিয়েন্ট ডেল্টা ও বিটার তুলনায় তিন গুণের বেশী পুনঃ সংক্রমন ঘটাতে পারে : গবেষণা প্রতিবেদন জাতিসংঘ ভবনের বাইরে এক বন্দুকধারী গ্রেফতার শান্তি চুক্তির পঞ্চম বার্ষিকী উপলক্ষে কলম্বিয়া সফর জাতিসংঘ মহাসচিব সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানগণের সাক্ষাৎ করোনা ভাইরাসের সংক্রমন বেড়ে যাওয়ায় অস্ট্রিয়ায় লকডাউন করোনা সংক্রমণ বাড়ায় ইউরোপের বিভিন্ন দেশে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ ভারতে নতুন করে ১০ হাজার ৩০২ জন করোনায় আক্রান্ত নভেম্বর মাসজুড়ে করাঞ্চলে কর মেলার সেবা পাবেন করদাতারা ঔপনিবেশিক আমলের ফৌজদারী কার্যবিধি যুগোপযোগী হচ্ছে

কালুখালী উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে লড়াই হবে দ্বিমুখী॥বিগত দিনের আমলনামা দেখছে ভোটাররা

  • আপডেট সময় রবিবার, ১৬ জুন, ২০১৯

॥স্টাফ রিপোর্টার॥ আগামী ১৮ই জুন অনুষ্ঠিতব্য রাজবাড়ী জেলার কালুখালী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রচারণার শেষ মুহুর্তে প্রার্থীরা ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভোট প্রার্থনা করছেন।
নির্বাচনের উত্তাপ ছড়িয়েছে উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের প্রতিটি গ্রামে। অন্যান্য রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরা অংশ না নেওয়ায় আওয়ামী লীগের নিজেদের মধ্যেই হচ্ছে প্রতিদ্বন্দ্বিতা।
নির্বাচনে কালুখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান চেয়ারম্যান কাজী সাইফুল ইসলাম(নৌকা) আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী। অন্য ২জন প্রার্থীর মধ্যে কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক নূরে আলম সিদ্দিকী হক(মোটর সাইকেল) প্রতীকে এবং রতনদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আলিউজ্জামান চৌধুরী টিটো(আনারস) প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
নির্বাচনে বিজয়ের ব্যাপারে ৩জন প্রার্থীই আশাবাদী। প্রতীক বরাদ্দ হওয়ার পরপরই তারা মাঠে নেমেছেন। মিছিল-মিটিং, মোটর সাইকেল শোডাউনসহ পাল্টাপাল্টি অভিযোগের মধ্য দিয়ে তারা নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ঘুরে দেখা যায়, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী কাজী সাইফুল ইসলামকে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রদত্ত নৌকা প্রতীকে ভোট দিতে আওয়ামী লীগের অধিকাংশ কর্মী-সমর্থকরা মুখিয়ে আছেন। তারা বলছেন, এই নৌকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নৌকা। এই নৌকা শেখ হাসিনার নৌকা। নৌকা ছাড়া অন্য কোথাও ভোট দেওয়ার ইচ্ছা আমাদের নেই।
তারা আরো বলেন, এছাড়াও কাজী সাইফুল ইসলাম বিগত দিনে প্রথম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে কালুখালীকে একটি আধুনিক ও শান্তিপূর্ণ উপজেলা হিসেবে গড়ে তুলেছেন।
দলীয় নেতাকর্মীরা বলেছেন, এ নির্বাচনে অনেকেই পথভ্রষ্ট হয়ে নৌকার বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকদের উপর হামলাও করেছে। তারপরও নৌকা নেতাকর্মীরা শক্ত অবস্থানে রয়েছে।
অপর প্রার্থী কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক নূরে আলম সিদ্দিকী হক কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে মোটর সাইকেল প্রতীকের ব্যাপক গণসংযোগ ও প্রচার কার্যক্রম চালাচ্ছেন।
তিনি ও তার সমর্থকদের দাবী, বিগত উপজেলা নির্বাচনে একটি গোষ্ঠির ষড়যন্ত্রের কারণে নূরে আলম সিদ্দিকী হক পরাজিত হয়। এবারের নির্বাচনে জনগণ সাথে থাকায় মোটর সাইকেল প্রতীকের পক্ষে জোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। নিরপেক্ষ ভোট হলে মোটর সাইকেল প্রতীক বিজয়ী হবে ইনশাল্লাহ।
আবার সাধারণ ভোটাররা বলছেন, নির্বাচন অবাধ, শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ হলে আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব। ভোট আমাদের নাগরিক অধিকার। প্রশাসন যেন আমাদের ভোট দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা ও পরিবেশ তৈরী করে।
সাধারণ ভোটার ও প্রবীণদের ধারণা অবাধ, শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ হলে কাজী সাইফুল ইসলামের নৌকা ও নূরে আলম সিদ্দিকী হকের মোটর সাইকেল প্রতীকের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি প্রতিযোগিতা হবে।
এছাড়াও সাধারণ ভোটারদের অনেকেই ৩জন চেয়ারম্যান প্রার্থীর ব্যক্তিগত ইমেজ, বিগত দিনের পারিবারিক রাজনৈতিক কর্মকান্ড এবং বিভিন্ন নির্বাচনী আমলনামাও পর্যালোচনার মাধ্যমে নির্বাচনে ভোটের নানা হিসেব কষছেন।
জনশ্রুতি আছে, অন্যান্য রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরা অংশ না নিলেও তারা নির্বাচনের দিন ভোট কেন্দ্রে ভোট দিতে এলে নৌকা, মোটর সাইকেল ও আনারস প্রতীকের প্রার্থীরা ব্যক্তিগত ইমেজের সুফল পাবে।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ২৮শে মে অনুষ্ঠিত রতনদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী মেহেদী হাচিনা পারভীন নিলুফা(নৌকা) প্রতীকের কাছে বিদ্রোহী প্রার্থী আলিউজ্জামান চৌধুরী টিটো(মোটর সাইকেল) ৫১৪ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন। ওই নির্বাচনে মেহেদী হাচিনা পারভীন নিলুফা(নৌকা) প্রতীক ৬,৭১৬ ভোট এবং আ’লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আলিউজ্জামান চৌধুরী টিটো ৬হাজার ২০২ ভোট পেয়েছিলেন।
এরআগে ২০১১ সালের ২২শে জুন অনুষ্ঠিত রতনদিয়া ইউপির নির্বাচনে আলিউজ্জামান টিটো চৌধুরী(আনারস) ১৯২২ ভোটের ব্যবধানে বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী আবুল কাশেম মন্ডলের কাছে পরাজিত হন।
২০১৪ সালের ১৯শে মে অনুষ্ঠিত কালুখালী উপজেলা পরিষদের প্রথম নির্বাচনের পূর্বে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে গত ৮ই মে কালুখালী উপজেলা আওয়ামীলীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় কৃষক লীগ নেতা নূরে আলম সিদ্দিকী হক এবং উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম-আহবায়ক মোঃ আলিউজ্জামান টিটো চৌধুরীকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। ওই বহিস্কারাদেশের পর নূরে আলম সিদ্দিকী হক কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক হয়েছেন। কিন্তু আলিউজ্জামান টিটো চৌধুরীর দলীয় বহিস্কারাদেশ পর্যন্ত প্রত্যাহার হয়নি। এরপূর্বে তিনি রতনদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন।
২০১০ সালে ৭টি ইউনিয়ন নিয়ে কালুখালী উপজেলা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর ২০১৪ সালের ১৯শে মে উপজেলা পরিষদের প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে আওয়ামীলীগ সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী কাজী সাইফুল ইসলাম নির্বাচিত হন। এরআগে ২০০৩ ও ২০১১ সালে তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়নে ২দফায় বিপুল ভোটে মাঝবাড়ী ইউনিয়ণ পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন।
২০১৪ সালের ১৯শে মে অনুষ্ঠিত কালুখালী উপজেলা পরিষদের প্রথম নির্বাচনে ঘোষিত ফলাফল অনুযায়ী আওয়ামীলীগ সমর্থিত প্রার্থী কাজী সাইফুল ইসলাম(আনারস) প্রতীকে ২৯হাজার ৪২২ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী নূরে আলম সিদ্দিকী হক(মোটর সাইকেল) প্রতীকে পেয়েছিলেন ১৯হাজার ১৪১ ভোট। উভয়ের ভোটের ব্যবধান ১০ হাজার ২৮১টি।
উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের পূর্বে ২০১১ সালের ২২শে জুন অনুষ্ঠিত মৃগী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে জেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক নূরে আলম সিদ্দিকী হক আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ১১২০ ভোটের ব্যবধানে আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী তার চাচাতো ভাই বদর উদ্দিন সরদার(গরুর গাড়ী) এর নিকট পরাজিত হন। মৃগী ইউপির ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী বদর উদ্দিন সরদার(গরুর গাড়ী) ৪হাজার ১৩৪ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন এবং তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি আওয়ামীলীগ সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী নুরে আলম সিদ্দিকী হক(তালা) প্রতীক ৩হাজার ১৪ ভোট পেয়েছিলেন।
ভোটার সংখ্যা ঃ ২০১৪ সালে চতুর্থ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে কালুখালী উপজেলায় মোট ভোটার ছিল ১লাখ ১হাজার ৫৪৮জন। এর মধ্যে ৫১হাজার ৫২২জন পুরুষ এবং ৫০হাজার ২৬জন মহিলা।
এবার ২০১৯ সালের পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ১৬হাজার ২১৯জন। কালুখালী উপজেলার মোট ভোটার ১লক্ষ ১৭হাজার ৭৬৭জন। তাদের মধ্যে ৫৯হাজার ৮৫৫জন পুরুষ এবং ৫৭হাজার ৯১২জন মহিলা ভোটার। মোট ৪৬টি ভোট কেন্দ্রের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৩জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৭জন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪জনসহ মোট ১৪জন প্রার্থী প্রতিদ্বদ্বিতা করছেন।
সুষ্ঠুভাবে এই নির্বাচন সম্পন্ন করতে নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।
নির্বাচনের বিষয়ে গত ১৩ই জুন কালুখালী উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে উপজেলা পরিষদের সম্মেলন কক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের সাথে মতবিনিময়কালে জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলী বলেন, এবারের নির্বাচন শতভাগ নিরপেক্ষ, অবাধ ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হবে। ভোট গ্রহণের দিন কোন প্রার্থী বা তার কোন সমর্থক কোন ধরণের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করলে তাকে কঠোর শাস্তি প্রদান করা হবে।
তিনি কালুখালী উপজেলা পরিষদ নির্বাচন আনন্দ ও উৎসবমূখর পরিবেশে সম্পন্ন করার জন্য প্রার্থীগণসহ সকলকে সহযোগিতার আহ্বান জানান।

নিউজটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো খবর
error: আপনি নিউজ চুরি করছেন, চুরি করতে পারবেন না !!!!!!