বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:২৪ অপরাহ্ন
Logo
সংবাদ শিরোনাম ::
বিশ্বব্যাপী ওমিক্রন সংক্রমণ বৃদ্ধিতে আইসোলেশন মেয়াদ অর্ধেক করার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ওমিক্রন ভেরিয়েন্ট ডেল্টা ও বিটার তুলনায় তিন গুণের বেশী পুনঃ সংক্রমন ঘটাতে পারে : গবেষণা প্রতিবেদন জাতিসংঘ ভবনের বাইরে এক বন্দুকধারী গ্রেফতার শান্তি চুক্তির পঞ্চম বার্ষিকী উপলক্ষে কলম্বিয়া সফর জাতিসংঘ মহাসচিব সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানগণের সাক্ষাৎ করোনা ভাইরাসের সংক্রমন বেড়ে যাওয়ায় অস্ট্রিয়ায় লকডাউন করোনা সংক্রমণ বাড়ায় ইউরোপের বিভিন্ন দেশে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ ভারতে নতুন করে ১০ হাজার ৩০২ জন করোনায় আক্রান্ত নভেম্বর মাসজুড়ে করাঞ্চলে কর মেলার সেবা পাবেন করদাতারা ঔপনিবেশিক আমলের ফৌজদারী কার্যবিধি যুগোপযোগী হচ্ছে

অটিস্টিক ব্যক্তির কল্যাণেপ্রয়োজন সঠিক পরিচর্যা

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০১৯

 মোঃ মাইদুল ইসলাম প্রধান  গত ২রা এপ্রিল ছিল ১২তম বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস। দিবসটির প্রতিপাদ্য ছিল ‘সহায়ক প্রযুক্তির ব্যবহার, অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ব্যক্তির অধিকার’-যা অত্যন্ত সময়োপযোগী।
বর্তমান যুগ প্রযুক্তিনির্ভর। প্রযুক্তিগত উন্নয়নে বাংলাদেশ এখন সুদৃঢ় অবস্থানে। বাংলাদেশে বর্তমানে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে যাওয়ার পাশাপাশি প্রায় প্রতি ঘরেই ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে গেছে। দেশের অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ব্যক্তিদেরও ডিজিটাল সেবার প্রয়োজন রয়েছে।
প্রতি বছর সারা বিশ্বে ২রা এপ্রিল অটিজম সচেতনতা দিবস পালিত হয়। বাংলাদেশেও প্রতি বছর এ দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করা হয়। এ উপলক্ষে সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়সহ সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়, সামাজিক সংগঠনসমূহ বিভিন্ন ধরনের সচেতনতামূলক উদ্যোগ গ্রহণ করে। অটিস্টিকদের প্রতি জনগণের সহযোগী মনোভাব তৈরী করতে হবে এবং তাদের যাতে সঠিক পরিচর্যা হয় সে বিষয়ে আমাদের সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।
এক দশকে বাংলাদেশে অটিজম বিষয়ে অভাবনীয় সাফল্য এসেছে। ১৪টি মন্ত্রণালয়কে নিয়ে গঠিত হয়েছে জাতীয় টাস্কফোর্স। ৮টি মন্ত্রণালয়/বিভাগের সমন্বয়ে গঠিত হয়েছে জাতীয় স্টিয়ারিং কমিটি। এর মধ্যে প্রথম সারির ৫টি হলো-সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। বেসরকারী পর্যায়েও অনেক প্রতিষ্ঠান অটিজম ও নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী শিশুদের নিয়ে কাজ করতে উৎসাহী হয়েছে। অটিজম ও নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধিতা বিষয়ক জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারপার্সন সায়মা ওয়াজেদ হোসেন কখনও সরাসরি, কখনও ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় কর্মকান্ডে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
অটিজম কোনো রোগ নয়, এটি শিশুদের মস্তিস্কের স্বাভাবিক বিকাশজনিত একটি সমস্যা-যা শিশুর সামাজিক সম্পর্ক স্থাপনে বাধা সৃষ্টি করে। অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশুর চেহারা সুন্দর হয়, কিন্তু মা-বাবা বা আপনজনের ডাকে সাড়া না দিয়ে নীরব থাকে। শিশুর এ নীরবতাই মায়ের মনঃবেদনার কারণ। এ ধরনের শিশুকে নিয়ে মা নিদারুণ অসহায় হয়ে জীবন কাটিয়ে দেন। এ ধরনের শিশুর জন্মের জন্য মাতা-পিতাকে দায়ী করা যায় না। কী কারণে অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশুর জন্ম হয় বিজ্ঞানীরা তা নির্ণয় করতে আজও সক্ষম হননি।
অটিজম বিষয়ে সাধারণ মানুষকে সচেতন করে তোলার লক্ষ্যে জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ২০০৯ সাল থেকে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কর্মসূচী বাস্তবায়িত হচ্ছে। এসব প্রশিক্ষণে অটিস্টিক জনগোষ্ঠীর পাশাপাশি তাদের পিতা-মাতা ও অভিভাবকদেরও সম্পৃক্ত করা হচ্ছে। এ যাবৎ অনুষ্ঠিত উল্লেখযোগ্য প্রশিক্ষণ কর্মসূচীর মধ্যে অটিস্টিক শিশুর ব্যবস্থাপনা প্রশিক্ষণে ১৫টি ব্যাচে ৪৭২জন মাতা-পিতাকে প্রশিক্ষিত করা হয়েছে। এ সকল প্রশিক্ষণ পরিচালনায় অটিজম বিষয়ে দক্ষ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, চিকিৎসক, এনজিও প্রধানসহ ভিন্ন ভিন্ন পেশায় দক্ষ প্রশিক্ষকবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন। স্লায়ু বিকাশের ভিন্নতাজনিত সীমাবদ্ধ পরিস্থিতিতে মানুষ যথাযথভাবে সামাজিক যোগাযোগ সংরক্ষণ, চলাফেরা, ভাব-বিনিময় এবং দৈনন্দিন কার্যনির্বাহে পরিপূর্ণ অংশগ্রহণে সমর্থ হয় না। স্নায়ু বিকাশের ভিন্নতার প্রধান ধরনগুলো হলো-অটিজম, ডাউন সিনড্রোম, বুদ্ধি প্রতিবন্ধিতা ও সেরিব্রাল পালসি।
রাজধানীতে অটিজম সংক্রান্ত অনেকগুলো চিকিৎসা সহায়তা কেন্দ্র রয়েছে। যেমন-ইনস্টিটিউট ফর পেডিয়াট্রিক নিউরো-ডিসঅর্ডার এন্ড অটিজম(ওচঘঅ), বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, চাইল্ড গাইডেন্স ক্লিনিক, ঢাকা শিশু হাসপাতাল, শিশু বিকাশ কেন্দ্র, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল, প্রয়াস বিশেষায়িত স্কুল, মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশুরোগ/মনোরোগ বিদ্যা বিভাগ। তাছাড়া সারা দেশে জেলা সদর হাসপাতাল/ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, সরকার অনুমোদিত বিভিন্ন বেসরকারী সংস্থা ও বিশেষায়িত স্কুল, প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্র এবং জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন হতে এ সংক্রান্ত সেবা পাওয়া যায়। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সারা দেশে ১০৩টি সেবা ও সাহায্য কেন্দ্রসহ বিভিন্ন কর্মকান্ডের মাধ্যমে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে।
প্রতিবন্ধী কল্যাণ ট্রাস্টের আওতায় টঙ্গীস্থ ইআরসিপিএইচ কেন্দ্রে একটি মিনারেল/ড্রিংকিং ওয়াটার প্লান্ট স্থাপন করা হয়েছে। অত্যাধুনিক মেশিনে রিভার্স অসমোসিস পদ্ধতিতে দৈনিক ৫০০ লিটার উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন এ প্লান্টের মাধ্যমে বোতলজাতকৃত পানি মুক্তা মিনারেল/ড্রিংকিং ওয়াটার নামে বাজারজাত করা হচ্ছে। এ প্লান্টের আয় শুধু প্রতিবন্ধীদের কল্যাণার্থে ব্যয় করা হয়। এছাড়াও ইআরসিপিএইচ কেন্দ্রে প্রতিবন্ধী কল্যাণ ট্রাস্টের আওতায় স্থাপিত মৈত্রী শিল্প কেন্দ্রে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মাধ্যমে প্লাস্টিক সামগ্রী যেমন ঃ বালতি, জগ, মগ, বদনা, গ্লাস, হ্যাঙ্গার উৎপাদন করা হয়।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় ঢাকাস্থ মিরপুরে অবস্থিত জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের নিজস্ব ক্যাম্পাসে ২০১০ সালে যাত্রা শুরু হয় অটিজম রিসোর্স সেন্টারের। একটি সুদক্ষ ও অভিজ্ঞ মাল্টিডিসিপ্লিনারী টিমের সমন্বয়ে অটিজম রিসোর্স সেন্টারটি পরিচালিত হচ্ছে। বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরতে দেশের সকল সরকারী, বেসরকারী ও স্বায়ত্ব শাসিত প্রতিষ্ঠানসমূহে ৩দিনব্যাপী নীল বাতি প্রজ্জ্বালন করা হয়।
অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশুর/ব্যক্তির শারীরিক, মানসিক ও অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধা রাষ্ট্রীয় পর্যায় হতে নিশ্চিত করতে সরকার আইনী সুরক্ষা নিশ্চিত করেছে। যেমন-অটিজম, ডাউন সিনড্রোম, বুদ্ধি প্রতিবন্ধিতা ও সেরিব্রাল পালসি আক্রান্ত ব্যক্তিদের অধিকার সুরক্ষায় ২০১৩ সালে নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্ট আইন-২০১৩ প্রণয়ন, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার ও সুরক্ষা আইন-২০১৩ প্রণয়ন, বাংলাদেশ রিহ্যাবিলিটেশন কাউন্সিল আইন-২০১৮ ইত্যাদি। শেষোক্ত আইনটির ফলে দেশের প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা কিংবা দুর্ঘটনার ফলে পঙ্গুত্ববরণকারী প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি পুনর্বাসন প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হবে। এছাড়াও প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার বিষয়ক কর্মপরিকল্পনা-২০১৯ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
সরকার সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচী যেমন- অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা, প্রতিবন্ধী শিক্ষা উপবৃত্তি এবং প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্রসহ অন্যান্য অনেক কর্মকান্ডের মাধ্যমে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। এ অব্যাহত প্রচেষ্টা প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মানসিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধ জীবন গঠনের পথকে আরো প্রসারিত করবে।
সরকারের পাশাপাশি সূচনা ফাউন্ডেশন, প্রয়াস, সোয়াক, সিডিডি, পিএফডিএ, স্কুল ফর গিফটেড চিলড্রেন, সোসাইটি ফর দ্যা ওয়েলফেয়ার অব দ্যা ইন্টেলেকচুয়ালি ডিজএ্যাবল(সুইড) বাংলাদেশ, সীড ট্রাস্ট, অটিজম ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন, বিউটিফুল মাইন্ড, নিষ্পাপ অটিজম ফাউন্ডেশন, এফএআরইসহ আরও অনেক দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন উন্নয়ন অংশীদার, সমাজ হিতৈষী ব্যক্তি, অটিজম ও নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল ডিজএবিলিটিস বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশুদের বিকাশে আন্তরিকভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
সরকারী-বেসরকারী উদ্যোগে আন্তরিকভাবে অটিস্টিক বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ব্যক্তির কল্যাণে অংশগ্রহণ করা হলে বাংলাদেশের সাংবিধানিক অঙ্গীকার এবং জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন অভিলক্ষ্যের ভিত্তিতে সকলের জন্য সমঅধিকার, ন্যায়পরায়ণতা ও সুন্দর কর্মস্থানের মাধ্যমে বাংলাদেশ অচিরেই উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ হওয়ার গৌরব অর্জনে সক্ষম হবে। অটিস্টিক শিশুদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা ও সহায়ক সামগ্রীর সরবরাহ নিশ্চিতকরণসহ তাদের অধিকার ও উন্নয়নে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। অটিস্টিক শিশু-কিশোরদের সম্ভাবনাগুলোকে চিহ্নিত করে সঠিক পরিচর্যা, শিক্ষা ও স্নেহ-ভালোবাসা দিয়ে গড়ে তোলা হলে তারা সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য বোঝা না হয়ে অপার সম্ভাবনা বয়ে আনবে। -পিআইডি ফিচার।

নিউজটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো খবর
error: আপনি নিউজ চুরি করছেন, চুরি করতে পারবেন না !!!!!!