॥গোয়ালন্দ প্রতিনিধি॥ রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দে বেশ কিছুদিন ধরে জাল বাংলাদেশ কোর্ট ফি, রাজস্ব ও নকল ষ্ট্যাম্প দিয়ে দলিল সম্পাদনের চেস্টা করা হচ্ছে।
এমন অভিযোগের ভিত্তিতে গোয়ালন্দের সহকারী কমিশনার(ভূমি) অভিযান চালিয়ে গত ১৮ই মার্চ বিকেলে লিটন খাঁন(৫০) নামের এক ব্যক্তিকে জাল কোর্ট ফি, রাজস্ব ও নকল ষ্ট্যাম্পসহ গ্রেপ্তার করেছে। লিটন খান মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার বান্দুটিয়া গ্রামের মৃত ছবদার খানের ছেলে।
থানা পুলিশ ও সহকারী কমিশনারের কার্যালয় সূত্র জানায়, একটি অসাধু চক্র কিছুদিন ধরে জাল বাংলাদেশ কোর্ট ফি, রাজস্ব ও নকল ষ্ট্যাম্প দিয়ে দলিল সম্পাদনসহ দাপ্তরিক গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পাদনের চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ আসে গোয়ালন্দের সহকারী কমিশনার(ভূমি) মোঃ আব্দুল্লাহ আল-মামুনের কাছে। এ অভিযোগ পেয়ে চক্রকে ধরতে কৌশলে ফাঁদ পাতেন সহকারী কমিশনার(ভূমি)। গত ১৮ই মার্চ বিকেলে কিছু জাল কোর্ট ফি, নকল ষ্ট্যাম্প নিয়ে গোয়ালন্দে আসে চক্রের সদস্য লিটন খান।
তিনি গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ওই ব্যক্তি গোয়ালন্দ উপজেলার জমিদারব্রীজ এলাকায় অবস্থান করছে জানতে পারেন। পরে সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ আব্দুল্লাহ আল-মামুনের নেতৃত্বে গোয়ালন্দ ঘাট থানার ইন্সপেক্টর(তদন্ত) মোঃ আমিনুল ইসলাম সঙ্গীয় পুলিশ সদস্যদের নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌছলে টের পেয়ে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করে। তাড়া করে পরে লিটন খানকে আটক করে দলিল লেখক সমিতির কার্যালয়ে নিয়ে আসলে জিজ্ঞাসাবাদে সব স্বীকার করে। এ সময় তার কাছ থেকে নকল ২০টাকা মূল্যমানের ১২টি বাংলাদেশ কোর্ট ফি, ১০টাকা মূল্যমানের ১৬টি, ৫টাকা মূল্যমানের ১৬টি কোর্ট ফি, ১০টাকা মূল্যমানের গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ৫২টি রাজস্ব টিকিট, ১০০টাকা মূল্যমানের ১০০টি বাংলাদেশ বিশেষ আঠালো ষ্ট্যাম্প, ১০০টাকা মূল্যমানের নন জুডিসিয়াল ২টি ষ্ট্যাম্প জব্দ করা হয়। এছাড়া নকল ও আসল কোর্ট ফি এবং ষ্ট্যাম্প বিক্রি বাবদ তার কাছ থেকে নগদ ৪হাজার ৩০০ টাকাও জব্দ করা হয়।
গত সোমবার সন্ধ্যায় দলিল লেখক সমিতির কার্যালয়ে পুলিশ ও সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে সহকারী কমিশনার জিজ্ঞাসাবাদে লিটন খান জানান, প্রায় ছয় মাস ধরে স্থানীয় কয়েকজন দলিল লেখক কিছু জাল কোর্ট ফি, নকল ষ্ট্যাম্প নিয়ে আসতে বলেন। কথা মতো সোমবার বিকেলে সেগুলো নিয়ে আসি। তিনি দাবী করেন, মূলত আদালত চত্বরে তিনি পর্চার কাজ করেন। স্বীকার করেন, তার জায়গা-জমি কিছুই নেই। মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলায় বাড়ি নদীভাঙ্গনে সর্বস্ব শেষ হলে দুই সন্তান ও স্ত্রীকে মানিকগঞ্জ জেলা শহরে ভাড়া বাসায় থাকেন। স্ত্রী’র দুইটি কিডনি বিকল হয়ে আছে। তার চিকিৎসার অর্থ জোগাড় করতে বর্তমানে এ ধরনের অসৎ ব্যবসায় নেমেছেন। গোয়ালন্দ উপজেলায় এই প্রথম এসেছেন বলে দাবী করেন। পরে গোয়ালন্দ ঘাট থানায় তার বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা দায়েরের জন্য রাতেই পুলিশে সোর্পদ করা হয়।
গোয়ালন্দ ঘাট থানার পিএসআই সনাতন কুমার মন্ডল বাদী হয়ে নিজ হেফাজতে আসল সদৃশ বাংলাদেশ কোর্ট ফি, রাজস্ব ষ্ট্যাম্প, নন জুডিসিয়াল ষ্ট্যাম্প রেখে অজ্ঞাতনামা সহযোগীদের সহায়তায় গোয়ালন্দ ঘাট থানা এলাকায় বিক্রি করায় ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ২৫ক(খ)/২৫(ঘ) ধারায় অভিযুক্ত লিটন খাঁনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।
গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি এজাজ শফী বলেন, লিটন খার বিরুদ্ধে ২০০৮ সালে গাজীপুর জয়দেবপুর থানায় জাল ও নকল কোর্ট ফি এবং ষ্ট্যাম্প সংক্রান্ত একটি মামলা হয়েছিল। ওই মামলায় জামিনে ছিল। তাকে গতকাল ১৯শে মার্চ তাকে রাজবাড়ীর আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।