যথাযোগ্য মর্যাদা এবং প্রবাসী বাংলাদেশীদের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় ইটালীর মিলানে বাংলাদেলের কনস্যুলেটে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৯তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস পালিত হয়েছে।
এ উপলক্ষে গত ১৭ই মার্চ কনস্যুলেটের হলরুমে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সকাল থেকেই প্রবাসী বাংলাদেশী নাগরিক ও শিশু-কিশোররা উপস্থিত হন।
পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত এবং পবিত্র গীতা থেকে পাঠের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু করা হয়। বঙ্গবন্ধুর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত ও দেশের অব্যাহত শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে বিশেষ মোনাজাতের পর বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়।
এরপর দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্র মন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বাণী পাঠ করে শোনানো হয়। জাতির জনকের জীবন ও কর্ম নিয়ে প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শন করা হয়, যাতে বাংলাদেশের নানা ঐতিহাসিক কালপর্বে তার অসম সাহসিকতা ও দৃঢ় ভূমিকার উপর আলোকপাত করা হয়। এছাড়া বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবনের ধারাবাহিক ক্রমবিকাশের বিভিন্ন পর্বের স্থিরচিত্র নিয়ে ‘আলোকচিত্রে বঙ্গবন্ধু’ নামক চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়।
বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামমুখর জীবনের উপর আলোচনা অংশে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশী বক্তব্য রাখেন। তারা ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মহান মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর অসামান্য অবদানের কথা গভীর কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করেন এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় নেতৃত্বে বাংলাদেশের উন্নয়ন কার্যক্রমের ভূয়সী প্রশংসা করে তাদের সমর্থন ব্যক্ত করেন।
কনসাল জেনারেল ইকবাল আহমেদ বঙ্গবন্ধুর জন্ম ইতিহাস তুলে ধরে বলেন, শৈশবে নানা রোগ-ভোগের পরও তিনি অসীম দৃঢ়তায় লেখাপড়া ও রাজনৈতিক চর্চা চালিয়ে যান এবং বাংলাদেশের সুদীর্ঘ মুক্তি সংগ্রামের প্রতিটি বাঁক বদলের সময় প্রায় এককভাবে নেতৃত্ব দেন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল তারই নির্দেশে ও নেতৃত্বে। ১৬ই ডিসেম্বরের চূড়ান্ত বিজয়ের পর পাকিস্তানের কারাগারে বন্দী বঙ্গবন্ধু তাকে যত দ্রুত সম্ভব দেশে পাঠানোর প্রশ্নে অবিচল থাকেন। বাংলাদেশে আসার পথে প্রথমে লন্ডনে তৎকালীন বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথকে বাংলাদেশকে স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দানের আহ্বান জানান। এরপর দিল্লীতে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে তার অকুণ্ঠ সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে বাংলাদেশ থেকে যত শীঘ্র সম্ভব ভারতীয় সৈন্য প্রত্যাহারের অনুরোধ জানান। তার দৃঢ়তার মুখে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর পরবর্তী জন্মদিনের আগেই বাংলাদেশ থেকে সৈন্য প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন এবং ১৯৭২ সালের ১৬ই মার্চ, তার জন্মদিনের আগের দিনই ভারতীয় সৈন্য প্রত্যাহার সমাপ্ত হয়। এ বিষয়গুলোর মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুর অসামান্য সাহসিকতা ও রাষ্ট্রনায়কোচিত দৃঢ়তা প্রকাশিত হয়, স্বাধীন বাংলাদেশের যাত্রারম্ভে তার এই অবস্থান বিশ^বাসীকে বাংলাদেশ সম্পর্কে একটি শক্তিশালী বার্তা দেয়। ফলে এই দিনটি রাজনৈতিকভাবেও বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
অনুষ্ঠানের পরবর্তী অংশে ছিল সাংস্কৃতিক আয়োজন। এ পর্বে শিশু-কিশোরদের পরিবেশিত কবিতা, সংগীত, নৃত্য উপস্থিত দর্শকদের মুগ্ধ করে। ‘শোন একটি মুজিবরের থেকে’-এই অবিস্মরণীয় গানের মধ্য দিয়ে এই পর্ব শেষ হয়। এরপর কনসাল জেনারেল উপস্থিত শিশু-কিশোরদের নিয়ে কেক কাটেন। অনুষ্ঠানের শেষ অংশে কনসাল জেনারেল দিবসটি উপলক্ষে অনুষ্ঠিত চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় বিজয়ী শিশু-কিশোরদের মাঝে সার্টিফিকেট, ক্রেস্ট ও বই বিতরণ করেন -প্রেস বিজ্ঞপ্তি।