॥গোয়ালন্দ প্রতিনিধি॥ রাজবাড়ী জেলার দৌলতদিয়া পতিতা পল্লীতে নিজের কন্যাকে বিক্রির সময় গোয়ালন্দ ঘাট থানা পুলিশ পাষন্ড পিতা এরশাদ আলী(৩৫) ও পতিতা শিল্লী (৩৫)কে গ্রেফতার করেছে। গত ১৬ই মার্চ রাত পৌনে ১০টার দিকে রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া পতিতালয়ের ১নং গেট এলাকা থেকে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃত পিতা এরশাদ আলী নওগাঁ জেলার মান্দা উপজেলার হোসেনপুর গ্রামের আজগর সোনার ছেলে ও শিল্পী নীলফমারী জেলার ডোমার উপজেলার পাংগা চৌপটি গ্রামের নজরুল ইসলামের মেয়ে। এ ঘটনায় গতকাল ১৭ই মার্চ দুপুরে গোয়ালন্দ ঘাট থানার এস.আই ওলিয়ার রহমান বাদী হয়ে মানবপাচার আইনে মামলা দায়ের করেছেন।
পুলিশ ও উদ্ধার হওয়া কিশোরী জানায়, এরশাদ আলীর প্রথম স্ত্রীর ঘরে জন্ম নেয়া এই কিশোরীসহ আরো এক কন্যাকে ফেলে দ্বিতীয় বিয়ে করে। কিছুদিন পর দ্বিতীয় স্ত্রীর সাথেও তার সম্পর্ক ভালো যাচ্ছিলনা। কিশোরীর মাও দ্বিতীয় বিয়ে করে। প্রথম স্ত্রী ও তাদের সন্তানদের সে দেখভাল করতো না। প্রথম ঘরের বড় সন্তান হচ্ছে এই কিশোরী। বাবা-মার ছাড়াছাড়ি হওয়ায় এই কিশোরী কন্যা একবার নিজের ফুফুর কাছে আবার মায়ের কাছে এভাবে দিন পার করছিল সে। এরশাদ আলী পেশায় রিক্সা চালক। মাঝেমধ্যে সে দৌলতদিয়া যৌনপল্লীতে আসা যাওয়া করতো। আসা-যাওয়ার সুবাদে যৌনকর্মী শিল্পীর সাথে তার সখ্যতা গড়ে উঠে। কয়েকদিন আগে এই কিশোরী কন্যাকে দেখা করতে বলে।
গত ১৬ই মার্চ রাত ৮টার দিকে নিজ মেয়েকে দৌলতদিয়া পতিতালয়ে নিয়ে আসে। রাত পৌনে ১০টার দিকে দৌলতদিয়া পতিতালয়ের ১নং গেটে জিয়ার মোবাইলের দোকানের সামনে পতিতা শিল্পীর সাথে কথাবার্তাকালে পুলিশ ওই মেয়েকে উদ্ধার এবং তার এরশাদ ও পতিতা শিল্পীকে গ্রেফতার করে।
উদ্ধার হওয়া কিশোরী জানায়, তার বাবা মায়ের অনেক আগেই ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে। বাবা ও মা দু’জনই আবার বিয়ে করে সংসার করছেন। সে কখনো দাদির কাছে, কখনো ফুপুর কাছে আবার কখনো মায়ের কাছে থাকত। এ পরিস্থিতিতে তার বাবা তাকে বলেন, ‘তোমার খাওয়ার খরচ দিয়ে আমি তোমাকে ঢাকায় ভালো একটি জায়গায় রেখে দিব, সেখানে তুমি ভালো থাকবে।’ বাবার কথায় রাজি হয়ে গত শনিবার সে বাবার সাথে ঢাকা উদ্দেশ্যে রওনা হয়। কিন্তু তার বাবা তাকে ঢাকা না নিয়ে সরাসরি দৌলতদিয়া যৌনপল্লীতে নিয়ে আসে।
এ সময় সে তার বাবার বিচার চায় কিনা জানতে চাইলে কিশোরী কান্না করতে করতে বলে, ‘আব্বু ভূল করে ফেলেছে। আব্বুকে ভালো হওয়ার জন্য একবার সুযোগ দেন স্যার।’ এ সময় এক নরপশু পিতার প্রতি সন্তানের ভালোবাসা দেখে উপস্থিত সকলের মধ্যে এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। সে কোথায় যেতে চায় জানতে চাইলে সে জানায়, ‘আমি আমার মা’র কাছে যেতে চাই।’
গ্রেফতার হওয়া এরশাদ আলী ও যৌনকর্মী শিল্পীর সাথে কথা বলে জানা যায়, উদ্ধার হওয়া কিশোরীর বাবা এরশাদ আলীর দৌলতদিয়া যৌনপল্লীতে যাতায়াতের সূত্র ধরে যৌনকর্মী শিল্পীর সাথে পরিচয়। এরশাদ আলী শিল্পীকে প্রস্তাব দেয় একটি মেয়ে এনে দিলে তাকে ৮০ হাজার টাকা দিতে হবে। কিন্তু শিল্পী তাকে ৩০ হাজার টাকা দিতে রাজি হয়। এই ৩০ হাজার টাকার জন্যই এরশাদ আলী তার মেয়েকে যৌনপল্লীতে নিয়ে আসে।
গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি মো. এজাজ শফী জানান, কিশোরী বিক্রির সংবাদের ভিত্তিতে থানা পুলিশের একটি দল গত শনিবার দিনগত রাতে ছদ্মবেশে যৌনপল্লীতে অবস্থান নেয় এবং বিক্রির সময় ওই কিশোরীকে উদ্ধার করে। এ সময় হাতেনাতে তাদের ২জনকে গ্রেফতার করা হয়।
এ বিষয়ে গতকাল ১৭ই মার্চ গোয়ালন্দ থানায় মানবপাচার আইনে মামলা করা হয়েছে। এছাড়াও একই দিন আদালতের মাধ্যমে গ্রেফতারকৃত এরশাদ আলী ও শিল্পীকে কারাগারে এবং উদ্ধার হওয়া কিশোরীকে ফরিদপুর সেফ হোমে পাঠানো হয়েছে।