॥এম.এইচ আক্কাছ॥ রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া পতিতাপল্লীতে স্কুল-কলেজের অপ্রাপ্ত বয়সী শিক্ষার্থীরা অবাধে যাতায়াত করছে।
দেশের সর্ববৃহৎ এই পতিতাপল্লীর পাহারাদারদের কাছ থেকে মাত্র ৫০ টাকার ১টি টিকিট নিয়েই পল্লীর ভিতরে ঘুরাফিরার সুযোগ পাওয়া যায়। এই সুযোগটাই নিচ্ছে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। সম্প্রতি পতিতাপল্লীতে তাদের বিচরণ আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। যৌনকর্মে লিপ্ত হওয়ার পাশাপাশি তারা মাদকও সেবন করছে।
সম্প্রতি পতিতাপল্লী থেকে ধারালো চাকুসহ আটক করা হয় দুই কলেজ শিক্ষার্থীকে। পরে তাদেরকে ভ্রাম্যমান আদালতে হাজির করা হলে আদালত দু’জনকে মোট ৮হাজার টাকা জরিমানা করে। ভ্রাম্যমান আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা সহকারী কমিশনার(ভূমি) মোঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন হতাশা প্রকাশ করে বলেন, আমাদের আগামী প্রজন্ম কোথায় গিয়ে দাঁড়াচ্ছে! যাদের শাস্তি দিলাম, তাদের তো শিক্ষাঙ্গনে থাকার কথা। অথচ তারা আটক হয়েছে যৌনপল্লী থেকে। আমাদের আগামী প্রজন্মকে সঠিক দিক-নির্দেশনা দিতে না পারলে এবং অভিভাবকরা সচেতন না হলে কিশোর-যুবকদের অনেকেই অন্ধকার জীবনে ঢুকে পড়বে।
দৌলতদিয়া পতিতাপল্লী সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রের সাথে কথা বলে জানা যায়, সেখানে আগতদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি অংশ কিশোর-যুবক। যাদের বয়স ১৫ থেকে ২০ বছর। স্থানীয় স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীসহ রাজবাড়ী, ফরিদপুর, মানিকগঞ্জ পাবনা জেলা থেকে কিশোর-যুবকরা দৌলতদিয়া পতিতাপল্লীতে আসে।
এছাড়াও দেশের বিভিন্ন জেলা থেকেও এই বয়সের কিশোররা দল বেঁধে পল্লীতে এসে থাকে। এখানে আগতরা বিভিন্ন ধরনের মাদকে আসক্ত হওয়া ছাড়াও অনেক সময় মাদক ব্যবসায়ও জড়িয়ে পড়ে। পতিতাপল্লীতে প্রবেশে কড়কড়ি আরোপ করা হলে কিশোর-যুবকদের এই অনৈতিক পথ থেকে সহজেই ফেরানো সম্ভব বলে অনেকে মনে করেন।
দৌলতদিয়া চাইল্ড ক্লাবের সভাপতি ইয়াছিন আলী বলেন, এই পতিতাপল্লীতে ১হাজারের উপরে শিশু আছে। আমরা পল্লীর শিশুদের মধ্যে স্কুল-কলেজ পড়–য়াদের একটি অংশ মিলে গড়ে তুলেছি দৌলতদিয়া চাইল্ড ক্লাব। ক্লাবের পক্ষ থেকে পল্লীর শিশুদের অনৈতিক কাজ থেকে বিরত রাখার জন্য বিভিন্ন ধরনের কাজ করে যাচ্ছি। সম্প্রতি রাজবাড়ী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ন্যাশনাল চাইল্ড টাস্কফার্সের এক সভায় আমরা এই পল্লীর শিশুদের দুরবস্থা ও বিপথগামীতার বিষয়গুলো তুলে ধরি।
পতিতাপল্লীর শিশুদের নিয়ে কাজ করা বেসরকারী সংগঠন মুক্ত মহিলা সমিতির নির্বাহী পরিচালক মর্জিনা বেগম বলেন, আমরা আমাদের সাধ্য অনুযায়ী প্রকল্প ভিত্তিক এই পল্লীর শিশুদের নিয়ে কাজ করি। আমি তাদের সার্বিক উন্নয়ন ও বাইরের শিশুদের এখানে আসা ঠেকাতে প্রশাসনকে কার্যকরী ভূমিকা নেয়ার দাবী জানাচ্ছি।
রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার আসমা সিদ্দিকা মিলি বিপিএম, পিপিএম-সেবা সম্প্রতি গোয়ালন্দ ঘাট থানায় মতবিনিময়কালে বলেন, বিষয়টি খুবই উদ্বেগের। যুব সমাজকে রক্ষা করার জন্য সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। পুলিশ নিষিদ্ধ পল্লীতে কিশোর-যুবকদের প্রবেশ ঠেকাতে কঠোর ভূমিকা নিবে। তবে অভিভাবকদেরও বিষয়টির প্রতি সজাগ হওয়া দরকার।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলী বলেন, নিষিদ্ধ পল্লীতে শিক্ষার্থীদের অবাধে বিচরণের সুযোগের বিষয়ে আমার কিছু জানা নাই। তবে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের সেখানে যাওয়াটা কোন অবস্থায়ই কাম্য নয়। এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।