॥স্টাফ রিপোর্টার॥ জাপানী বিনিয়োগকারীদের জন্য দেশে একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল(এসইজেড) প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি(একনেক) ২হাজার ৫৮২ কোটি ১৮ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘নারায়ণগঞ্জের আড়াই হাজারে জাপানিজ অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য অবকাঠামো উন্নয়ন’ প্রকল্পের চূড়ান্ত অনুমোদন করেছে ।
গতকাল ৫ই ফেব্রুয়ারী রাজধানীর শেরেবাংলা নগর এনইসি সম্মেলন কক্ষে একনেক চেয়ারপারসন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় এই প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়।
সভাশেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রকল্পের বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘৬ হাজার ২৭৬ কোটি ২৪ লাখ টাকা ব্যয়ে একনেকে ৮টি প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। মোট প্রকল্প ব্যয়ের মধ্যে সরকারী তহবিল থেকে ৩ হাজার ৩১৩ কোটি ৯২ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক ঋণ সহায়তা পাওয়া যাবে ২ হাজার ৯৬২ কোটি ৩২ লাখ টাকা।’
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, জাপানিজ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার উপজেলায় জাপানিজ ও স্থানীয় বিনিয়োগ আকৃষ্ট করে শিল্পোৎপাদনের মাধ্যমে রফতানি আয় বৃদ্ধি এবং বিপুলসংখ্যক কর্মসংস্থান তৈরি করা সম্ভব। এ লক্ষ্যকে সামনে রেখে এই প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
প্রকল্প ব্যয়ের ২ হাজার ৫৮২ কোটি ১৮ লাখ টাকার মধ্যে বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে সংস্থান করা হবে ৪৫৪ কোটি ৩৫ লাখ টাকা এবং প্রকল্প সাহায্য হিসেবে জাপানের আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা জাইকা ২হাজার ১২৭ কোটি ৮২ লাখ টাকার বৈদেশিক সহায়তা দেবে। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ(বেজা) প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে।
পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, দেশের সুষম উন্নয়ন নিশ্চিত করতে সরকার ২০১৫ থেকে ২০৩০ সাল পর্যন্ত ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠনের পরিকল্পনা নিয়েছে। এর মধ্যে ২০১৮ সালের জুনে মোট ৭৯টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৫৬টি সরকারীভাবে এবং অবশিষ্ট ২৩টি বেসরকারিভাবে প্রতিষ্ঠা করা হবে।
একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রী রেল, সড়ক ও নৌপথে সমন্বিত যোগাযোগ নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার নির্দেশ দিয়েছেন বলে পরিকল্পনামন্ত্রী জানান।
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সড়কে আমরা প্রচুর প্রকল্প হাতে নিয়েছি, এখন রেল ও নৌ পথের দিকে নজর দিতে হবে। সড়কের প্রকল্প আমরা নেবো না তা নয়, কিন্তু রেল ও নৌ পথে বেশি জোর দিতে চাই। যোগাযোগের ক্ষেত্রে জাতীয় গ্রীড তৈরি করতে হবে।’
এম এ মান্নান বলেন, তাঁতীরা যেন সহজে ঋণ পায়, এজন্য প্রধানমন্ত্রী সারাদেশের তাঁতীদের তালিকা তৈরি করার নির্দেশ দিয়েছেন। একই সঙ্গে সরকার প্রধান ঢাকাসহ আশপাশের নদীগুলোকে রক্ষা করতে সিটি করপোরেশনকে আরো সজাগ হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
একনেকে অনুমোদিত অন্য প্রকল্পসমূহ হলো- তাঁতীদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নে চলতি মূলধন সরবরাহ ও তাঁতের আধুনিকায়ন প্রকল্প, এর খরচ ধরা হয়েছে ১৫৮ কোটি টাকা। কন্দাল ফসল উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১৫৬ কোটি টাকা। জয়পুরহাট জেলায় তুলশী গঙ্গা, ছোট যমুনা, চিড়ি ও হারাবতী নদি পুনঃখনন প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ১২৩ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। উপজেলা, ইউনিয়ন ও গ্রাম সড়কে অনুর্ধ্ব ১০০ মিটার সেতু নির্মাণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ১হাজার ৯৮৩ কোটি টাকা। ঢাকা সিটি নেইবারহুড আপগ্রেডিং প্রকল্পে ব্যয় হবে ৮৮০ কোটি ৪৬ লাখ টাকা।
এছাড়া সমগ্র দেশে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মন্দির ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন ও সংস্কার প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ২২৮ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের প্রোফাইল প্রণয়নে খরচ ধরা হয়েছে ১৬৪ কোটি টাকা।