॥শিহাবুর রহমান॥ রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলার ঠাকুর নওপাড়া গ্রামের ভ্যান চালক সুবীর হত্যা মামলার ৪বছর পর হত্যাকান্ডের দায় স্বীকার করেছে তার স্ত্রী কমলা দাস(৩৬)।
স্বামীর অত্যাচার সইতে না পেরে তাকে ৪জন মিলে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর গাছের সাথে ঝুলিয়ে রাখেন বলে গতকাল ১৪ই ফেব্রুয়ারী দুপুরে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী প্রদান করেন কমলা দাস। জবানবন্দী শেষে তাকে কারাগারে প্রেরন করা হয়। এরআগে এ হত্যা মামলার সাক্ষী ছিলেন কমলা দাস।
জবানবন্দীতে কমলা দাস দোষ স্বীকার করে বলেন, ৭/৮ বছর আগে ধার দেনা করে তিনি লেবাননে যান। এর কিছুদিন পর এলাকার কিছু মানুষ তার স্বামী সুবীর কুমার দাসকে ভুল বুঝায় যে তোর স্ত্রী সেখানে খারাপ কাজ করছে। এর এক বছর পর সম্পূর্ণ দেনা শোধ না হতেই তার স্বামী তাকে দেশে ফিরিয়ে আনে। দেশে ফিরিয়ে আনার পর সুবীর তাকে ভুল বুঝতে থাকে এবং খুব অবিশ^াস করতে থাকে। সুবীর তাকে বলতো বিদেশে তুই অবৈধ কাজ করেছিস। এখন দেশে অবৈধ কাজ করে আমাকে টাকা দিবি। এরপর তার স্বামী তাকে প্রচন্ড মারপিট করে তাকে অনৈতিক কাজে নামাতে বাধ্য করে। তিনি বিদেশে যাওয়ার সময় তার স্বামী আজিজুল, বিল্লাল ও আলালদের কাছ থেকে টাকা ধার নিয়েছিল। তারা বাড়ীতে আসতে থাকে এবং তাদের সাথে তার স্বামী তাকে অবৈধ কাজ করতে বাধ্য করে। এক পর্যায়ে সে সহ্য করতে না পেরে আজিজুলদের সাথে তার স্বামী সুবীরকে হত্যার পরিকল্পনা করে। এরপর ঘটনার দিন (২০১৪ সালের ১৪ই অক্টোবর দিবাগত রাত ৮/৯টার দিকে খাওয়ার দাওয়ার পর সে তার স্বামীকে জানায় একজন লোক আসবে কিছু টাকা দিবে। এই কথা বলে রাত ১২টার দিকে সে তাকে বাড়ীর পাশে একটি মেহগনি বাগানে নিয়ে যায়। সেখানে সে তার স্বামীর পা চেপে ধরে। বিল্লাল হাত চেপে ধরে। আলাল বুকের উপর বসে এবং আজিজুল শ^াসরোধ করে তাকে হত্যা করে। এরপর তার মৃত দেহ গলায় রশি লাগিয়ে গাছের সাথে ঝুলিয়ে রাখে। পরে বাড়ীতে গিয়ে সে তার স্বামীর ভাই প্রবীর কুমারকে জানায় তোর ভাইকে পাওয়া যাচ্ছে না। এরপর ওই রাতে পরিবারের লোকজন সুবীরকে খোঁজাখুজি করে। পরদিন সুবীর লাশের খোজঁ পায় তারা।
এদিকে এ হত্যাকান্ডের পর নিহতের ভাই প্রবীর কুমার দাস বাদী হয়ে গত ১৫/১০/২০১৪ তারিখে একই এলাকার শফিজ উদ্দিনের ছেলে আলম ওরফে আলাম (৩৮)সহ অজ্ঞাত দুইজনকে আসামী করে বালিয়াকান্দি থানায় ৩০২/৩৪ দঃ বিঃ ধারায় মামলা দায়ের করে। এ হত্যা মামলায় ৩জন পুলিশ অফিসার মামলার তদন্ত করেন। সর্বশেষে এস.আই জাকির হোসেন আলম ওরফে আলামকে অভিযুক্ত করে ও গৌতম সরকারের ছেলে গোপাল সরকার(২৪) অব্যাহতি দিয়ে গত ১/৪/২০১৬ তারিখে আদালতে চার্জশীট প্রদান করেন। ওই চার্জশীটে নিহতের স্ত্রী কমলা দাসকে সাক্ষী রাখা হয়। কিন্তু চার্জশীটের বিরুদ্ধে আদালতে নারাজী দেন মামলার বাদী প্রবীর কুমার দাস। পরবর্তীতে এ মামলার তদন্তভার দেয়া হয় সিআইডিকে।
গতকাল ১৪ই ফেব্রুয়ারী সকালে রাজবাড়ী জেলা সিআইডির পুলিশ পরিদর্শক শেখ মোঃ আকতারউজ্জামান ঘটনার সাথে জড়িত থাকার সন্দেহে নিহতের স্ত্রী কমলা দাসকে গ্রেফতার করে ১৬৪ধারায় জবানবন্দীর জন্য আদালতে প্রেরণ করেন। আদালতে পাপমুক্তির জন্য কমলা দাস এ হত্যার দায় স্বীকার করেন। তবে ঘটনার সাথে জড়িত অন্যান্যরা এখনো পলাতক রয়েছেন।