॥তনু সিকদার সবুজ॥ রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলার নারুয়া ইউনিয়নে মোবাইল ফোন চুরির অভিযোগে স্কুল পড়–য়া ২জন শিশুকে রশি দিয়ে বেঁধে অমানবিকভাবে মারপিট করা হয়েছে।
গতকাল ৮ই ফেব্রুয়ারী বিকালে স্থানীয় অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য জুলফিকার শেখ ও মোবাইল ফোন মেরামতকারী সুমন নামের এক যুবক তাদেরকে নারুয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের পূর্ব পাশের মাঝিপাড়া মন্দিরের সামনের একতলা একটি ভবনে আটকে রেখে রশি দিয়ে বেঁধে মারপিট করে। মারপিটের শিকার ওই ২ শিশু হলো নারুয়া ইউনিয়নের বিলধামু গ্রামের ফরিদ মোল্লার ছেলে বিজয় মোল্লা(১১) এবং একই গ্রামের সাদেক আলীর ছেলে আসিফ আলী(৭)। তাদের মধ্যে বিজয় বিলধামুর আবুল কাসেম মন্ডল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণীর এবং আসিফ মধুপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১ম শ্রেণীর ছাত্র।
আহত বিজয় মোল্লা জানায়, সে গত ৭ই ফেব্রুয়ারী সকালে নারুয়া বাজারের মোবাইল ফোন মেরামতকারী সুমনের কাছে একটি নষ্ট ফোন মেরামত করতে দেয়। সুমন তার ফোনটি শুক্রবার সকালে দিবে বলে জানায়। তার কথা মতো গতকাল শুক্রবার সকালে সে ও আসিফ সুমনের দোকানে ফোন আনতে গিয়ে দোকান বন্ধ পায়। দোকান বন্ধ পেয়ে তারা সুমনের বাড়ীতে যায়। সেখানেও তাকে না পেয়ে ফিরে আসার সময় পথে একটি মোবাইল ফোন পড়ে থাকতে দেখে সেটা নেয়। মোবাইলটি নেওয়ার পর তারা স্থানীয় কয়েকজনকে বিষয়টি অবগত করে বাড়ী ফিরে আসে। বিকালে সুমনের দোকানে ফোন আনতে গেলে সুমন ও জুলফিকার তাদের দু’জনকে দড়ি দিয়ে বেঁধে রেখে মারপিট করতে থাকে। চিৎকার করলে তারা ভয় দেখিয়ে বলে সবার সামনে বলবি তোরা ফোন চুরি করেছিস, না বললে তোদেরকে পুলিশে ধরিয়ে দিবো। তখন তারা ভয়ে ফোন চুরি করার কথা স্বীকার করে।
বিজয়ের বাবা ফরিদ মোল্লা বলেন, ছেলেকে মারপিটের কথা শুনে দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি দু’জনের শরীরের বিভিন্ন স্থানে মারপিটের ফলে রক্ত জমে আছে। সেখান থেকে তাদেরকে উদ্ধার করে স্থানীয় পল্লী চিকিৎসকের কাছ থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বাড়ীতে নিয়ে আসি। আমার ছেলে নির্দোষ। মিথ্যা অপবাদ দিয়ে দুই শিশুকে নির্যাতন করা হয়েছে। আমি এর শাস্তি চাই।
অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য জুলফিকার শেখ বলেন, মোবাইল চুরির সন্দেহে তাদেরকে আটক করে কয়েকটি চড়-থাপ্পড় মারলে তারা মোবাইল চুরির কথা স্বীকার করে। পরে তাদেরকে অভিভাবকদের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। চুরিকৃত মোবাইল ফোনটি তারা আমাদেরকে ফেরত দিয়েছে।
বালিয়াকান্দি থানার ওসি একেএম আজমল হুদা বলেন, এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে কেউ এ বিষয়ে অভিযোগ করেনি। যদি অভিযোগ করে তাহলে দোষী প্রমাণ হলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মাসুম রেজা বলেন, বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। যদি এ ধরনের কোন ঘটনা ঘটে থাকে তাহলে ভুক্তভোগীদের পরিবার আইনী সহায়তা চাইলে আমার পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।