॥দেবাশীষ বিশ্বাস॥ রাজবাড়ী সদর উপজেলার মিজানপুর ইউনিয়নের উপর দিয়ে প্রবাহিত পদ্মা নদীর তীর সংরক্ষণ এলাকা গোদার বাজারে সিসি ব্লক দ্বারা নির্মিত অংশের ভাঙ্গন মেরামতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৭০ কোটি টাকা।
নদীর গতি-প্রকৃতির পরিবর্তন ও তীব্র স্রোতসহ অপরিকল্পিত ড্রেজিংয়ের কারণে ২০১৮ সালের বর্ষা মৌসুমে রাজবাড়ীর শহর রক্ষা বেড়িবাঁধের এই ১কিলোমিটার অংশে ভাঙ্গনের সৃষ্টি হয়। ভাঙ্গন প্রতিরোধে ২০১২ সালে ৩৯ কোটি টাকা ব্যয়ে সিসি ব্লক দ্বারা পদ্মার তীরের ২.০৪ কিলোমিটার এলাকা সংরক্ষণ করা হয়। ৭বছর সুরক্ষিত ছিল সিসি ব্লক দ্বারা নির্মিত ওই এলাকা। কিন্তু ২০১৮ সালের শুষ্ক মৌসুমে মোংলা-রূপপুর নৌপথ সচল রাখার জন্য রাজবাড়ী সদর উপজেলার মিজানপুর ইউনিয়নের গোদার বাজার ও সিলিমপুর এলাকার নদী তীরবর্তী সিসি ব্লক দ্বারা নির্মিত স্থানের পাশ দিয়েই অপরিকল্পিতভাবে ড্রেজিং (নদী খনন) করে বিআইডব্লিউটিএ কর্র্তৃপক্ষ। উত্তোলিত বালু পদ্মার মাঝপথে ফেলে ড্রেজিংয়ের কাজ সম্পন্ন করা হয়। বর্ষা মৌসুমে উজান থেকে ভাটির দিকে স্রোত প্রবাহিত হলে মাঝ নদীতে বাঁধাগ্রস্ত হয়ে আঘাত হানে ড্রেজিংকৃত সিসি ব্লকের পাশ দিয়ে। ফলে তীব্র স্রোতে ভেঙ্গে যায় সিসি ব্লক দ্বারা নির্মিত ১কিলোমিটার অংশ।
অপরিকল্পিত ড্রেজিংয়ের বিষয়ে মিজানপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা রহমত মুন্সী বলেন, খনন করার সময় আমরা বাঁধা দিয়েছিলাম কিন্তু তারা সেই বাধা উপেক্ষা করে ড্রেজিং করে যায়। ভরা মৌসুমে উজান থেকে ভাটির দিকে আসা ¯্রােত মাঝ নদীতে বাঁধাগ্রস্ত হয়ে আঘাত আনে। এতে গোদারবাজার এলাকায় সিসি ব্লক দ্বারা শহর রক্ষা বেড়িবাঁধের সংরক্ষণ করা স্থান ভেঙ্গে যায়।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ শফিকুল ইসলাম বলেন, ভাঙ্গনের অন্যতম একটি কারণ ছিল ড্রেজিং। বর্ষা মৌসুমের ভাঙ্গন কবলিত এলাকাসহ ২.০৪ কিলোমিটার বাঁধ মেরামতে ব্যয় ধরা হচ্ছে প্রায় ৭০ কোটি টাকা। এ বছরের মধ্যে টাকা পেলে ক্ষতিগ্রস্ত স্থান মেরামত করা হবে।
বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে রাজবাড়ী সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এডঃ এম.এ খালেক বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং বিআইডব্লিটিএ’র যোগসাজশেই পদ্মার এই ভাঙ্গন। একদিকে ড্রেজিংয়ের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে, অন্যদিকে এই ভাঙ্গন মেরামতের জন্য ৭০ কোটির টাকার যে কথা শোনা যাচ্ছে সেটি সম্পূর্ণরুপে রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয় মাত্র। দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে রাষ্ট্রের এই ক্ষতি চলতেই থাকবে।
এ বিষয়ে রাজবাড়ী-২ আসনের সংসদ সদস্য মোঃ জিল্লুল হাকিম বলেন, গত বছর এই অপরিকল্পিত ড্রেজিংয়ের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সাথে কথা হয়েছিল। তিনি তৎকালীন নৌমন্ত্রী শাজাহান খানকে বিষয়টি দেখার জন্য বলেছিলেন। কিন্তু তিনি তা করেন নাই। এখন তিনি আর নৌমন্ত্রী নেই। আমাদের আবার পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। মাঝ নদী দিয়ে পরিকল্পিতভাবে খনন করার জন্য ড্রেজিং বিভাগকে বাধ্য করতে হবে।