॥বালিয়াকান্দি প্রতিনিধি॥ রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলার সদর ইউনিয়নের বাহিরচর এলাকায় ভাটি খাল ও চন্দনা নদীর দুই পাড়ে বিনা চাষেই রাই সরিষা ফসলের বাম্পার ফলন হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চন্দনা নদী থেকে বের হয়ে গড়াই নদীতে মিলিত হয়েছে ভাটি খাল। বকচর, বাহিরচরের মধ্য দিয়ে এই ভাটি খাল বয়ে গেছে। ভাটি খালের তীরবর্তী এলাকার অধিকাংশ মানুষই কৃষি কাজের সাথে সম্পৃক্ত। বাহিরচর এলাকার চাষীরা খালের পানি কমার পর কোন রকমের চাষ ছাড়াই খালের দুই পাড়ের ভেজা মাটিতে রাই সরিষার বীজ ছিটিয়ে দিয়েছিল। চন্দনা নদীর দুই তীরেও দেখা গেছে এভাবে রাই সরিষার আবাদ। কোন রকম পরিচর্যা ছাড়াই এখন সেই রাই সরিষার বীজ থেকে চারা গজিয়ে বড় হয়ে ফুল ধরেছে। হলুদ ফুলে ভরে গেছে খাল ও চন্দনা নদীর দুই পাড়। ফুলের মৌ মৌ গন্ধ সুবাস ছড়াচ্ছে পুরো এলাকায়। আকৃষ্ট করছে মৌমাছিসহ প্রকৃতি প্রেমীদের। অসংখ্য মৌমাছির দল গুণগুণিয়ে মধু আহরণে ব্যস্ত। খালের দুই পাড়ের যে সকল কৃষকরা এই রাই বুনেছিল তাদের মুখে এখন দেখা দিয়েছে হাসি। ভালো ফলনের সম্ভাবনা দেখতে তারা আনন্দিত। রাই দুইভাবে চাষ করা যায়। হাল চাষ করে এবং ছিটিয়ে। নদীর তীরে সাধারণত এভাবে ছিটিয়ে চাষ করে কৃষকরা। এতে সার, সেচ কিংবা লাঙ্গল কিছুই লাগে না। খরচও অনেক কম হয়। এছাড়াও একই সময়ে জমিতে জৈব সারের অভাব পূরণ হয়ে যায়। কৃষক বাড়তি খরচের হাত থেকে রক্ষা পায়। ফলে বিনা চাষে রাই ফসলের আবাদ দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। শুধু বীজ ছিঁটিয়ে দিতে হয় বলে কৃষক এ রাই ফসলের নাম দিয়েছে ‘বিনা চাষে রাই’ বা ‘ছিটা রাই’।
বাহিরচর গ্রামের কৃষক জালাল উদ্দিন বলেন, বর্ষার পানি কমার সাথে সাথে আমরা কাদার উপরে চাষ ছাড়াই রাই সরিষা, খেসারী বা মটর কলাইয়ের বীজ ছিটিয়ে ফসল উৎপাদন করে থাকি। এতে আমাদের সংসারের সারা বছরের তেল ও ডালের প্রয়োজন মেটানো ছাড়াও বাজারে বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হই। এ ছাড়াও রাই ভাঙ্গিয়ে খৈল ও গাছ থেকে ভূষি তৈরী হয়-যা গরুর খাদ্য ও জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার করা হয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা রোগ-বালাই দেখা না দিলে বিনা চাষে বোনা এই রাই সরিষা থেকে এবার ভালো ফলনের আশা করছি।
বালিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ সাখাওয়াত হোসেন জানান, উপজেলায় এ বছর প্রায় ২৫০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ করেছে কৃষকেরা। এছাড়াও বিভিন্ন খাল, বিল ও চন্দনা নদীর তীরে বিনা চাষে রাই সরিষার ফসল উৎপাদন করে কৃষকরা লাভবান হচ্ছে।