॥আসহাবুল ইয়ামিন রয়েন॥ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, ঢাকা ও রাজবাড়ী সদর উপজেলা নির্বাচন অফিসের আয়োজনে সদর উপজেলার ভোটগ্রহণকারী কর্মকর্তাদের দুই দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ কর্মসূচীর উদ্বোধন অনুষ্ঠান গতকাল ২২শে ডিসেম্বর বেলা ১২টায় সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়।
প্রধান অতিথি হিসেবে প্রশিক্ষণ কর্মসূচীর উদ্বোধন করেন ও বক্তব্য রাখেন রিটার্নিং অফিসার ও জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলী।
জেলা নির্বাচন অফিসার মোঃ হাবিবুর রহমানের সভাপতিত্বে উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন পুলিশ সুপার আসমা সিদ্দিকা মিলি,বিপিএম-সেবা। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সদর উপজেলা নির্বাচন অফিসার মোঃ ফকরুদ্দিন শিকদার।
এ সময় নির্বাচন উপলক্ষে গঠিত জেলা ভিজিলেন্স ও অবজারভেশন টিমের সদস্য রাজবাড়ী সরকারী আদর্শ মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর দিলীপ কুমার কর, বৃহত্তর ফরিদপুরের আঞ্চলিক নির্বাচন অফিসার মোঃ নূরুজ্জামান তালুকদার, সহকারী রিটার্নিং অফিসার ও সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ সাইদুজ্জামান খান, গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাচন অফিসার মোঃ রফিকুল ইসলাম, প্রশিক্ষণ কর্মসূচীর প্রশিক্ষক ও প্রশিক্ষণ গ্রহণকারী সদর উপজেলার প্রিজাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসারগণসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
অন্ষ্ঠুানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক ও জেলা রিটার্নিং অফিসার মোঃ শওকত আলী ভোট গ্রহণকারী কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে দিক-নির্দেশনামূলক বক্তব্যে বলেন, নির্বাচন কমিশনের সংশোধিত তফসীল অনুযায়ী আগামী ৩০শে ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ইতিমধ্যে নির্বাচন কমিশন তার সকল প্রাথমিক কাজ সম্পন্ন করে চূড়ান্ত পর্যায়ের নির্বাচনী প্রস্তুতি সম্পন্ন করছে। তারই ধারাবাহিকতায় আজকে সদর উপজেলার সকল প্রিজাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসারদের প্রশিক্ষণ শুরু হচ্ছে। যেহেতু একজন প্রিজাইডিং অফিসার একটি কেন্দ্রের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী সেহেতু আমি আশা করবো তারা তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব সততা, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সাথে পালন করবেন। নির্বাচনের দিন সকাল ৮টা থেকে ভোট গ্রহণ শুরু হবে বিধায় আপনারা অবশ্যই আপনাদের প্রয়োজনীয় নির্বাচনী উপকরণসহ কেন্দ্রের নিরাপত্তার দায়িত্বপ্রাপ্তদের নিয়ে নির্বাচনের আগের দিনই কেন্দ্রে অবস্থান গ্রহণ করবেন। প্রয়োজনে এই প্রশিক্ষণের শেষে আপনাদের যাকে যে কেন্দ্রের দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে সেই কেন্দ্র পরিদর্শন করে কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠান প্রধানসহ সংশ্লিষ্টদের সাথে সার্বিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করে রাখবেন। যে সকল প্রতিষ্ঠান কেন্দ্র হবে সেই প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের জেলা রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় থেকে আগেই জানানো হয়েছে। কোন অবস্থাতেই কোন কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রিজাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসার এবং নিরাপত্তার দায়িত্বপ্রাপ্তরা প্রার্থী বা অন্য কারো কাছ থেকে কেন্দ্রে অবস্থানকালীন সময়ে কোন প্রকার খাবার গ্রহণ করবেন না। নিজেদের ব্যবস্থাপনায় আপনারা খাবারের ব্যবস্থা করবেন। জাতীয় সংসদ নির্বাচন যেহেতু অন্য যে কোন নির্বাচনের চেয়ে আলাদা সেহেতু প্রত্যেক আসনের প্রার্থী অনুযায়ী ব্যালট পেপার ছাপানো হবে। কেন্দ্রে যাওয়ার আগে আপনাদের নির্বাচন কাজে ব্যবহৃত সকল মালামাল সহকারী রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় থেকে চেক করে নিয়ে যাবেন, যাতে কোন প্রকার সমস্যায় পড়তে না হয়। প্রত্যেক কেন্দ্রে ভোট কক্ষ অনুযায়ী প্রতি কক্ষের জন্য প্রত্যেক প্রার্থীর একজন করে পোলিং এজেন্ট থাকবে। পোলিং এজেন্ট একবার ভোট কেন্দ্রে ঢোকার পর কোন অবস্থাতেই বাইরে যেতে পারবে না। যদি তারা ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার আগেই একেবারে বাইরে চলে যেতে চায় তবে তার কাছ থেকে কারণ উল্লেখসহ লিখিত রেখে তাকে যেতে দিবেন। যারা পোলিং এজেন্ট হবেন তাদের নির্বাচন কমিশন থেকে কার্ড ইস্যু করা হবে। ভোটকেন্দ্রে যারা ঢুকবেন তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশী গুরুত্ব পাবেন ভোটারগণ।
তিনি আরো বলেন, পর্যবেক্ষকগণ শুধু ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করতে পারবেন, তারা কারো সাথে কোন বিষয়ে কোন কথা বলতে পারবেন না। যারা সাাংবাদিক হিসেবে পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য ভোট কেন্দ্রে প্রবেশ করবেন তারা নির্বাচনী “সাংবাদিক নীতিমালা” মেনে দায়িত্ব পালন করবেন। তাদের যদি কোন তথ্য জানার প্রয়োজন হয় তাহলে তারা প্রিজাইডিং অফিসারের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে পারবেন। আপনাদের নিরাত্তায় পুলিশ, আনসার, র্যাব, বিজিবি ও সেনাবাহিনী দায়িত্ব পালন করবে। কোন পরিস্থিতিতে ভোটকেন্দ্রে অতিরিক্ত নিরাপত্তার প্রয়োজন হলে আপনারা জেলা রিটার্নিং অফিসারকে জানাবেন, সঙ্গে সঙ্গে আপনাদের জন্য আরো অতিরিক্ত নিরাপত্তর ব্যবস্থা করা হবে। আপনাদের মনে রাখতে হবে এই নির্বাচন জাতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন। নির্বাচন কমিশন থেকে যার উপর যে দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে তা সততা ও নিষ্ঠার সাথে সঠিকভাবে পালন করে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা মোতবেক একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে সকলকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।
পুলিশ সুপার আসমা সিদ্দিকা মিলি বিপিএম-সেবা তার বক্তব্যে বলেন, আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জেলা পুলিশ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় তার উপর অর্পিত সকল দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করবে। প্রত্যেক কেন্দ্রে আনসার সদস্যদের পাশাপাশি অবস্থা বুঝে এক বা একাধিক পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করবে। এছাড়াও সকল নির্বাচনী কেন্দ্র এলাকায় জেলা পুলিশের পর্যাপ্ত সংখ্যক স্ট্রাইকিং ফোর্স টহলরত অবস্থায় থাকবে। এর পাশাপাশি স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে র্যাব, বিজিবি, সেনাবাহিনীসহ মোবাইল কোর্ট থাকবে। যে কোন পরিস্থিতিতে আপনারা তাদের সাহায্য নিতে পারবেন। আপনারা কোন পরিস্থিতিতেই ভীত না হয়ে আপনাদের উপর অপিত দায়িত্ব পালন করবেন। আমরা জেলা প্রশাসন ও জেলা পুলিশসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সকলে অত্যন্ত সুন্দর ও সমন্বিতভাবে কাজ করছি। সুতরাং আমরা আশা করি রাজবাড়ী-১ ও ২ আসন থেকে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা মেনে আমাদের উপর অর্পিত সকল দায়িত্ব সঠিকভাবে পালনের মাধ্যমে একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুন্দর নির্বাচন উপহার দিতে পারব।
দুই দিনের এই প্রশিক্ষণ কর্মসূচীতে রাজবাড়ী সদর উপজেলার ১০৫ জন প্রিজাইডিং অফিসার, ৫১০ জন সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার এবং ১হাজার ২০জন পোলিং অফিসার অংশগ্রহণ করছেন। আজ ২৩শে ডিসেম্বর প্রশিক্ষণ কর্মসূচী সমাপ্ত হবে।
উল্লেখ্য, রাজবাড়ী-১ আসনের সদর উপজেলার ১০২টি ভোট কেন্দ্রের ৪৭৯টি স্থায়ী ও ২৬টি অস্থায়ীসহ মোট ৫০৫টি ভোট কক্ষের মাধ্যমে রাজবাড়ী সদর উপজেলায় মোট ২ লক্ষ ৫৯ হাজার ৮৬৯ জন ভোটারের যার মধ্যে ১ লক্ষ ৩০ হাজার ৫৮৩ জন পুরুষ ও ১ লক্ষ ২৯ হাজার ২৮৬ জন মহিলার ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।