॥দেবাশীষ বিশ্বাস॥ সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ এর কতিপয় ধারা সংশোধনের দাবীতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের ডাকা কর্মবিরতির দ্বিতীয় দিনে গতকাল ২৯শে অক্টোবর কার্যত স্থবির হয়ে পড়ে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার প্রবেশদ্বার হিসেবে খ্যাত দৌলতদিয়া ঘাট। গণপরিবহন শূন্য হয়ে পড়ে মহাসড়ক। কোন স্থান থেকে ছেড়ে আসেনি দূরপাল্লার কোন যাত্রীবাহী বাস কিংবা পণ্যবাহী পরিবহন। ফলে সাধারণ মানুষকে সীমাহীন দুর্ভোগ আর পথে পথে ভোগান্তি পোহাতে হয়।
দৌলতদিয়া টিকিট কাউন্টারের একজন কর্মকর্তা জানান, ভোর ৬টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত মাত্র ১২টি অ্যাম্বুলেন্স নদীর পারর হওয়ার জন্য টিকেট ক্রয় করেছে।
বিআইডব্লিউটিসি’র দৌলতদিয়া ঘাট শাখার ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) মোঃ শফিকুল ইসলাম জানান, দেশের ব্যস্ততম এই নৌরুট দিয়ে গড়ে প্রায় আড়াই হাজারের মতো যানবাহন পারাপার হলেও কর্মবিরতিতে সেই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫শ’র মতো।
ভোগান্তির বর্ণনা দিয়ে মাগুরা থেকে আসা কিশোর কুমার বিশ্বাস নামের এক যাত্রী বলেন, মাগুরা থেকে ব্যাটারী চালিত অটোরিক্সায় ১০০ টাকা ভাড়া দিয়ে মধুখালী পর্যন্ত আসি। সেখান থেকে ফরিদপুরে আসতে ১৫০ টাকা এবং ফরিদপুর থেকে দৌলতদিয়ায় আসতে লেগেছে আরও ১৫০ টাকা। মাগুরা থেকে দৌলতদিয়ার সাধারণ ভাড়া ১০০ টাকা হলেও পরিবহন শ্রমিকদের কর্মবিরতির কারণে সেখানে ভাড়া লাগলো ৪০০ টাকা। রাস্তায় ব্যক্তিগত গাড়ী ও অ্যাম্বুলেন্স ছাড়া কোন গাড়ী নেই। সাধারণ মানুষের জন্য ব্যাটারী চালিত আটোরিক্সা ও মাহেন্দ্রই ভরসা। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, শ্রমিকদের কাছে আজ সাধারণ মানুষ জিম্মি।
ঢাকার সাভার থেকে আসা আলম হাওলাদার বলেন, ভোর ৪টায় রওনা দিয়ে ১০টার সময় দৌলতদিয়ায় এসে পৌঁছেছি। এখান থেকে মাহেন্দ্র গাড়ীতে করে যত দূর যাওয়া যায় তত দূর যেতে হবে। তারপর আবার ভেঙ্গে ভেঙ্গে গন্তব্যে পৌঁছাতে হবে। তিনিও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এই অবস্থা কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না।
রাজবাড়ী জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি রকিবুল ইসলাম পিন্টুর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, মঙ্গলবার ভোর ৬টায় আমাদের ৪৮ ঘন্টার কর্মবিরতি শেষ হবে। এই সময়ের মাঝে সরকার যদি দাবী মেনে না নেয় তাহলে ২/১দিন পর আলোচনা সাপেক্ষে আররও বড় ধরনের কর্মসূচী ঘোষণা করা হবে। ওই কর্মসূচীতে কর্মবিরতির পাশাপাশি সড়ক অবরোধ করাও হতে পারে।
উল্লেখ্য, সড়ক দুর্ঘটনার সকল মামলা জামিনযোগ্য করা, শ্রমিকদের অর্থদন্ড কমানো, দুর্ঘটনার তদন্ত কমিটিতে শ্রমিক প্রতিনিধি রাখা, ড্রাইভিং লাইসেন্সে শিক্ষাগত যোগ্যতা ৫ম শ্রেণী করা, ওজনস্কেলে জরিমানা কমানে ও শাস্তি বাতিল করা, পুলিশী হয়রানী বন্ধ করা, গাড়ীর রেজিস্ট্রেশনের সময় শ্রমিকের নিয়োগপত্রে সংশ্লিষ্ট সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের স্বাক্ষর থাকার ব্যবস্থা, সকল জেলার শ্রমিকদের ব্যাপক হারে প্রশিক্ষণ দিয়ে ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু করাসহ বিভিন্ন দাবীতে দেশব্যাপী পরিবহন শ্রমিকরা এই কর্মবিরতির কর্মসূচী পালন করছে।