॥মোক্তার হোসেন॥ রাজবাড়ী জেলার পাংশা উপজেলার দক্ষিণাঞ্চলের সরিষা ইউপির পালেরডাঙ্গী গ্রামে গত ৩রা জানুয়ারী রাতে ২৫/৩০ জনের একদল অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী দাবীকৃত চাঁদা না পেয়ে বাড়িতে ঢুকে সদর উদ্দিন(৬৫) ও আনোয়ার হোসেন(১৮) নামের চাচা ভাতিজাকে বেধরক মারধর করেছে।
রড দিয়ে বেধরক মারধর করার ফলে চাচা সদর উদ্দিন ও আনোয়ার হোসেনের হাঁটু, পিঠ, মাজা, উরুসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুরুতর কাটা-ফাটা, ভাঙ্গা ও ফুলা জখম হয়েছে। ঘটনার রাতেই থানা পুলিশের সহযোগিতায় এ্যাম্বুলেন্সযোগে গুরুতর আহত অবস্থায় তাদেরকে পাংশা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
জানাযায়, গত শুক্রবার রাত সোয়া ১০টার দিকে মুখোশ পরিহিত অস্ত্রধারী বাহিনীর সন্ত্রাসী দল পালের ডাঙ্গী গ্রামের সদর উদ্দিনের বাড়িতে ঠুকে তাকে ডেকে ঘর থেকে বের করে উঠানে ফেলে বেধরক মারধর করে। এছাড়া ঘরের দরজা ভেঙ্গে আমজাদ হোসেনের ছেলে আনোয়ার হোসেনকে ঘর থেকে বের করে উঠানে ফেলে বেধরক মারধর করে সন্ত্রাসীরা।
পাংশা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহত সদর উদ্দিনের ছেলে আব্দুল কাদের জানান, গত শুক্রবার রাতে হামলা মারধরের আগে দুই দফায় মোবাইল ফোনে চাঁদা দাবী করে সন্ত্রাসীরা।
তিনি জানান, ৬মাস আগে প্রথমবার ২লাখ টাকা এবং ১৫দিন আগে দিতীয় দফায় ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবী করে সন্ত্রাসীরা। গত শুক্রবার ঘটনার রাতে মারধর করে ফিরে যাওয়ার সময় সন্ত্রাসীরা ১রাউন্ড ফাঁকা গুলি করে এবং ২লাখ টাকা চাঁদা দাবী করে চাঁদার টাকা প্রদানের জন্য ১টি মোবাইল ফোন নম্বর দিয়ে যায়। ঘটনার সময় বাড়ীর লোকজন চিৎকার করলে সন্ত্রাসীরা ১রাউন্ড ফাঁকা গুলি করে এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করে।
এদিকে পালের ডাঙ্গী গ্রামে রাতে বাহিনীর তান্ডবের খবর পেয়ে পাংশা থানা পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে যায়। তখন পুলিশের সহযোগিতায় এ্যাম্বুলেন্সযোগে গুরুতর আহত সদর উদ্দিন ও তার ভাতিজা আনোয়ার হোসেনকে পাংশা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ঘটনার পর থেকে ভুক্তভোগী পরিবারের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
স্থানীয় লোকজন জানায়, গত ২২শে জানুয়ারী দিনে-দুপুরে কসবামাজাইল ইউপিতে দুই পক্ষের লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষ, বসত বাড়িতে অগ্নিসংযোগ-লুটতরাজ এবং প্রতিপক্ষের গুলিতে ইলিয়াস হোসেন(২৫) নামের এক কলেজ ছাত্র গুলিবিদ্ধ হয়। এছাড়া এর আগে গত কয়েক মাসের মধ্যে সরিষা ইউপির পালেরডাঙ্গী গ্রামের মৃত সুজন মন্ডলের ছেলে ব্যবসায়ী জালাল মন্ডল, নজরুল ইসলাম ওরফে পতাই, খামারডাঙ্গী গ্রামের কাশেম মন্ডল, আন্দুলিয়া গ্রামের হানিফ মন্ডল ও নাওরা-বনগ্রামের সঞ্জিব চক্রবর্তী ওরফে চেতন ঠাকুর, পাশ্ববর্তী কসবামাজাইল ইউপির কুঠিমালিয়াট গ্রামের মান্নান মহুরী, শরিফ মোল্লা, বাবু মন্ডল, খায়রুল ইসলাম অরফে ডাবুল, সাগর রায়, উজ্জল মন্ডল ও টুটুল মন্ডল, দীঘলহাট গ্রামের অলোক শিকদার ও পূর্ব নটাভাঙ্গা গ্রামের ওসমান মন্ডলের বাড়ীতে রাতে বাহিনীর সন্ত্রাসীরা হানা দিয়ে মারধর ও মালামাল লুন্ঠন করে।
কসবামাজাইল ইউপির অপরাধ দমনে একটি পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র রয়েছে। পুলিশ বিভিন্ন সময়ে অভিযান চালিয়ে অবৈধ অস্ত্র-গুলি উদ্ধারসহ কয়েকজন অপরাধীকে গ্রেপ্তারও করে। কিন্তু পুলিশের তৎপরতার মুখেও মাঝে মধ্যে রাতে বাহিনীর তৎপরতাও বৃদ্ধি পায়। দক্ষিণাঞ্চলের সন্ত্রাসী মাস্টার বাহিনীর অব্যাহত চাঁদা দাবীর কারণে কেউ কেউ গ্রাম ছেড়ে স্বপরিবারে পাংশা শহরে বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করছেন বলে জানা গেছে।