বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ১১:৪৩ অপরাহ্ন
Logo
সংবাদ শিরোনাম ::
বিশ্বব্যাপী ওমিক্রন সংক্রমণ বৃদ্ধিতে আইসোলেশন মেয়াদ অর্ধেক করার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ওমিক্রন ভেরিয়েন্ট ডেল্টা ও বিটার তুলনায় তিন গুণের বেশী পুনঃ সংক্রমন ঘটাতে পারে : গবেষণা প্রতিবেদন জাতিসংঘ ভবনের বাইরে এক বন্দুকধারী গ্রেফতার শান্তি চুক্তির পঞ্চম বার্ষিকী উপলক্ষে কলম্বিয়া সফর জাতিসংঘ মহাসচিব সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানগণের সাক্ষাৎ করোনা ভাইরাসের সংক্রমন বেড়ে যাওয়ায় অস্ট্রিয়ায় লকডাউন করোনা সংক্রমণ বাড়ায় ইউরোপের বিভিন্ন দেশে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ ভারতে নতুন করে ১০ হাজার ৩০২ জন করোনায় আক্রান্ত নভেম্বর মাসজুড়ে করাঞ্চলে কর মেলার সেবা পাবেন করদাতারা ঔপনিবেশিক আমলের ফৌজদারী কার্যবিধি যুগোপযোগী হচ্ছে

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায় সাবেক মন্ত্রী বাবর-পিন্টুসহ ১৯জনের মৃত্যুদন্ড॥তারেকসহ ১৯জনের যাবজ্জীবন

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ১১ অক্টোবর, ২০১৮

॥স্টাফ রিপোর্টার॥ একুশ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বিএনপি নেতা লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ১৯জনের মৃত্যুদন্ড এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমানসহ ১৯জনের যাবজ্জীবন কারাদন্ডের আদেশ দিয়েছে আদালত।
এছাড়া মামলার অন্য ১১জন আসামীকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়েছে। রাজধানীর নাজিমউদ্দিন রোডে পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে স্থাপিত ঢাকার ১নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিনের আদালতে একুশে আগস্টের ওই ঘটনায় দায়েরকৃত পৃথক মামলায় একই সঙ্গে বিচার অনুষ্ঠিত হয়। গত ১৮ই সেপ্টেম্বর উভয় পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হলে রায় ঘোষণার জন্য গতকাল ১০ই অক্টোবর তারিখ ধার্য করে আদেশ দেয় আদালত। সে অনুযায়ী আজ জনাকীর্ণ আদালতে রায় ঘোষণা করা হয়। আদালতের কার্যক্রম শুরুর পূর্বেই কারাগারে থাকা ৩১জন আসামীকে এজলাসে হাজির করা হয়। ১৮জন আসামী এখনো পলাতক।
রায়ে মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত ১৮জন আসামী হলেন ঃ সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লুৎজ্জামান বাবর, বিএনপি-জামায়াত জোটের সাবেক উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টু, তার ভাই মাওলানা তাজউদ্দিন, হুজির সাবেক আমির মাওলানা শেখ আবদুস সালাম, কাশ্মীরি জঙ্গি আব্দুল মাজেদ ভাট, আবদুল মালেক ওরফে গোলাম মোহাম্মদ ওরফে জিএম, মাওলানা শওকত ওসমান, মহিবুল্লাহ ওরফে অভি, মাওলানা আবু সাঈদ ওরফে ডাঃ জাফর, আবুল কালাম আজাদ ওরফে বুলবুল, মোঃ জাহাঙ্গীর আলম, হাফেজ মাওলানা আবু তাহের, হোসাইন আহম্মেদ তামিম, মঈন উদ্দিন শেখ ওরফে মুফতি মঈন ওরফে আবু জান্দাল, মোঃ রফিকুল ইসলাম ওরফে সবুজ, মোঃ উজ্জল, এনএসআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল(অবঃ) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল(অবঃ) আবদুর রহিম, হানিফ পরিবহনের মালিক হানিফ।
পরিকল্পনা ও অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে হত্যা করার অভিযোগে দন্ড বিধির ৩০২/১২০(খ)/৩৪ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে তাদের মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত করা হয়। মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত ফাঁসিতে ঝুলিয়ে রাখার নির্দেশ দেয়ার পাশাপাশি প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে জরিমানা করেন আদালত।
যাবজ্জীবন কারাদন্ডপ্রাপ্তরা হলেন ঃ তারেক রহমান, খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক উপদেষ্টা হারিছ চৌধুরী, বিএনপি নেতা ও সাবেক এমপি কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, হুজি সদস্য হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া, শাহাদাৎ উল্লাহ ওরফে জুয়েল, মাওলানা আবদুর রউফ, মাওলানা সাব্বির আহমেদ, আরিফ হাসান ওরফে সুমন, আবু বকর ওরফে হাফেজ সেলিম মাওলাদার, মোঃ আরিফুল ইসলাম আরিফ, মহিবুল মুত্তাকিন ওরফে মুত্তাকিন, আনিসুল মুরছালিন ওরফে মুরছালিন, মোঃ খলিল, জাহাঙ্গীর আলম বদর, মোঃ ইকবাল, লিটন ওরফে মাওলানা লিটন, মুফতি শফিকুর রহমান, মুফতি আব্দুল হাই, রাতুল আহমেদ ওরফে রাতুল বাবু। তাদেরকে দন্ডবিধির ৩০২/১২০(খ)/৩৪ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড দেয়ার পাশাপাশি প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরও ১বছর সশ্রম কারাদন্ড দেয়া হয়।
এছাড়া পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক(আইজিপি) মোঃ আশরাফুল হুদা ও শহুদুল হক, খালেদা জিয়ার ভাগ্নে লেফটেন্যান্ট কমান্ডার(অবঃ) সাইফুল ইসলাম ডিউক, লেফটেন্যান্ট কর্নেল(অবঃ) সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার, মেজর জেনারেল(অবঃ) এটিএম আমিন, ডিএমপির সাবেক উপ-কমিশনার(দক্ষিণ) খান সাঈদ হাসান, আরেক সাবেক উপ-কমিশনার(পূর্ব) ওবায়দুর রহমান খান, সাবেক আইজিপি খোদা বক্স চৌধুরী, সিআইডির সাবেক বিশেষ সুপার মোঃ রুহুল আমিন, সাবেক এএসপি আবদুর রশিদ, সাবেক এএসপি মুন্সি আতিকুর রহমানকে দুই বছর করে কারাদন্ড ও ৫০হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাস করে সশ্রম কারাদন্ড দেয়া হয়েছে। আরেকটি ধারায় খোদা বক্স চৌধুরী, রুহুল আমিন, আবদুর রশিদ ও মুন্সি আতিকুর রহমানকে ৩বছর করে কারাদন্ড ও ৫০হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ৬মাস করে কারাদন্ড দিয়েছে আদালত।
১৪টি বিবেচ্য বিষয় নির্ধারণ করে তা পর্যালোচনা, সাক্ষ্য-তথ্য প্রমাণের আলোকে এ মামলার রায় ও আদেশ দেয়া হয়েছে বলে আদালতের রায়ে বলা হয়।
রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাস বিরোধী সমাবেশে ২০০৪ সালের ২১শে আগস্ট ভয়াবহ, বর্বরোচিত ও নৃশংস গ্রেনেড হামলার ঘটনায় আনা মামলার আইনি কার‌্যক্রম তুলে ধরা হলো।
ঘটনা ঃ রাজধানী ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে ২০০৪ সালের ২১শে আগস্ট বিকাল ৫টা ৪০মিনিটে।
ঘটনায় হতাহত ঃ তৎকালীন মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের পতœী আইভি রহমানসহ ২৪জন নিহত হন। এতে অল্পের জন্য শেখ হাসিনা প্রাণে বেঁচে গেলেও গ্রেনেডের প্রচন্ড শব্দে তার শ্রবণশক্তিতে আঘাতপ্রাপ্ত হয়। ভয়াবহ ওই ঘটনায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ, দলের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মী, আইনজীবী, সাংবাদিকসহ ৫শতাধিক মানুষ আহত হন।
মামলা দায়ের ঃ বর্বরোচিত ও নৃশংস ওই গ্রেনেড হামলার ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে মতিঝিল থানায় মামলা দায়ের করে। মামলার বাদী মতিঝিল থানা পুলিশের ওই সময়ের সাব-ইন্সপেক্টর(এস.আই) শরীফ ফারুক আহমেদ।
অভিযোগপত্র ঃ ঘটনার প্রায় চার বছর পর ২০০৮ সালের ৯ই জুন অভিযোগপত্র (চার্জশীট) দেয়া হয়। রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে এ মামলা অধিকতর তদন্তের আদেশ হয় ২০০৯ সালের ১২ই আগস্ট। তদন্ত শেষে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেয়া হয় ২০১১ সালের ২রা জুলাই।
অভিযোগ গঠন ঃ প্রথম অভিযোগপত্রের আলোকে অভিযোগ গঠন করা হয় ২০০৮ সালের ২৯শে সেপ্টেম্বর। সম্পূরক অভিযোগপত্র আমলে নেয়ার পর অভিযোগ গঠন করা হয় ২০১২ সালের ১৮ই মার্চ।
আসামী সংখ্যা ঃ ওই ঘটনায় হত্যা, হত্যা চেষ্টা, ষড়যন্ত্র, ঘটনায় সহায়তাসহ বিভিন্ন অভিযোগে একটি মামলা যাতে আসামী সংখ্যা মোট ৫২জন (ইতোমধ্যে অন্য মামলায় তিন আসামীর মৃত্যুদন্ড কার্যকর হওয়ায় এখন আসামী ৪৯জন)। একই ঘটনায় ১৯০৮ সালের বিস্ফোরক দ্রব্যাদি আইনে(সংশোধনী-২০০২) অপর একটি মামলায় আসামী সংখ্যা ৩৮জন। আসামীদের মধ্যে ৩৮জন উভয় মামলায়ই আসামী। এর মধ্যে এখন হত্যা মামলায় ৪৯জন ও বিষ্ফোরক আইনের মামলায় ৩৮জন আসামী।
সাক্ষ্য গ্রহণ তথা বিচার শুরু ঃ ২০১২ সালের ৯ জুলাই। সাক্ষ্য শেষ ঃ মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা শেষ হয় ২০১৭ সালের ৩০শে মে।
সাক্ষী সংখ্যা ঃ এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে ২২৫জন সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দেয়। আসামীপক্ষ সাক্ষীদের জেরা করেছে। গত বছরের ৩০শে মে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা(আইও) সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার আব্দুল কাহার আকন্দের জেরা শেষের মধ্য দিয়ে সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়।
সাফাই সাক্ষ্য ঃ আসামীপক্ষ ২০জন সাফাই সাক্ষ্য দেয়। রাষ্ট্রপক্ষ তাদের জেরা করেছে।
যুক্তিতর্ক শুরু ঃ ২০১৭ সালের ২৩শে অক্টোবর। শেষ ১৮ই সেপ্টেম্বর।
জবানবন্দী ঃ মামলার সাক্ষীদের মধ্যে ঘটনার বিষয়ে ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন ১৪জন।
আসামীদের মধ্যে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী ঃ ১৩জন আসামীর ১৪টি।
আসামী গ্রেফতার ও পলাতক ঃ ২১শে আগস্টের ঘটনায় পৃথক মামলায় মোট আসামীর সংখ্যা ৫২জন। এর মধ্যে ৩জন আসামীর অন্য মামলায় মৃত্যুদন্ড কার্যকর হওয়ায় তাদেরকে মামলা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। ৩জন আসামী হলেন ঃ জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, জঙ্গি নেতা মুফতি হান্নান ও তার সহযোগী শরীফ সাহেদুল আলম বিপুল।
আসামী ৪৯জনের মধ্যে ৩১জনকে সকালে গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ঢাকায় আদালতে নিয়ে আসা হয়। পলাতক রয়েছেন বাকি ১৮জন ঃ তারা মাওলানা তাজউদ্দিন, তারেক রহমান, হারিছ চৌধুরী, শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, মোঃ হানিফ, মহিবুল মুত্তাকীন, আনিসুল মুরসালিন, মুফতি শফিকুর রহামন, রাতুল আহমেদ বাবু ওরফে রাতুল বাবু, জাহাঙ্গীর আলম বদর, মোঃ খলিল, মোঃ ইকবাল, মাওলানা লিটন , মুফতি আবদুল হাই, সাবেক সেনা কর্মকর্তা এটিএম আমিন ও সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দার, সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা ওবায়দুর রহমান খান ও খান সাঈদ হাসান।
সত্য আড়াল করে ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে বিএনপি-জোট আমলে সাজানো তদন্ত হয়। শুরু থেকেই তদন্তের গতি ভিন্ন খাতে নেয়ার চেষ্টা করে তৎকালীন সরকার। শৈবাল সাহা পার্থ নামের এক তরুণকে আটক করে তাঁকে ফাঁসানোর চেষ্টা করা হয়। তদন্তের নামে পুরো ঘটনাকে বিতর্কিত করার চেষ্টা হয়। ঘটনা তদন্তে ২০০৪ সালের ২২শে আগস্ট বিচারপতি মোঃ জয়নুল আবেদীনকে চেয়ারম্যান করে এক সদস্যের বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করে চারদলীয় জোট সরকার। সেই কমিশনও বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের অপপ্রচারের পথ ধরেই চলেছিল।
জজ মিয়া উপাখ্যান ঃ ঘটনার ১০ মাসের মাথায় ২০০৫ সালের ৯ই জুন নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার বীরকোট গ্রামের বাড়ি থেকে জজ মিয়া নামের এক যুবককে সিআইডি আটক করে। ১৭দিন রিমান্ডে রেখে জজ মিয়ার কাছ থেকে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী আদায় করে এবং তদন্তের নামে ‘আষাঢ়ে গল্প’ প্রচার করেন মামলার তৎকালীন তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির এএসপি আবদুর রশিদ ও তৎকালীন বিশেষ পুলিশ সুপার রুহুল আমিন। সিআইডির এএসপি মুন্সি আতিকুর রহমান তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার পর তিনিও সাজানো ছকে কথিত তদন্তকে এগিয়ে নিয়ে যান। যা রায়ে প্রমাণ হয়েছে বলে জানান এ মামলার বিশেষ পিপি আবু আব্দুল্লাহ ভূঁইয়া।

নিউজটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো খবর
error: আপনি নিউজ চুরি করছেন, চুরি করতে পারবেন না !!!!!!