॥আসহাবুল ইয়ামিন রয়েন॥ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতীয় গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টে(অনুর্ধ্ব-১৭) রাজবাড়ী জেলা পর্যায়ের খেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান গতকাল ১৫ই সেপ্টেম্বর বিকালে কাজী হেদায়েত হোসেন স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়।
জেলা প্রশাসক ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি মোঃ শওকত আলীর সভাপতিত্বে উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের প্রতিমন্ত্রী এবং রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব কাজী কেরামত আলী।
সম্মানিত বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন রাজবাড়ী-২ আসনের সংসদ সদস্য মোঃ জিল্লুল হাকিম এবং সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য কামরুন নাহার চৌধুরী।
এ সময় রাজবাড়ী পৌরসভার মেয়র মহম্মদ আলী চৌধুরী, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এডঃ এম.এ খালেক, কালুখালী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী সাইফুল ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(সার্বিক) রেবেকা খান, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আশেক হাসান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(সদর সার্কেল) রেজাউল করিম, সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ সাঈদুজ্জামান খান, বালিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী অফিসার এস.এম মাসুম রেজা, গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আবু নাসার উদ্দিন, কালুখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ তোফায়েল আহমেদ, পাংশা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, জেলা আওয়ামী লীগ ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার সহ-সভাপতি হেদায়েত আলী সোহরাব, জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনারগণ, বিভিন্ন সরকারী দপ্তরের কর্মকর্তাগণ, বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানগণ, জেলা ক্রীড়া সংস্থার বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাগণসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম শফি।
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আলহাজ্ব কাজী কেরামত আলী বলেন, দেশব্যাপী যার নামে টুর্নামেন্টটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে তিনি হলেন আমাদের স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এই কথাটি মাথায় রেখে আমাদেরকে অবশ্যই টুর্নামেন্টটি সফল করতে হবে। খেলাধুলা এমন একটি জিনিস যার মাধ্যমে দেহ-মন সুস্থ ও সুন্দর থাকে এবং যুবসমাজ মাদক, সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ, ইভটিজিংয়ের মতো অপরাধ থেকে দূরে থাকে। এই বিষয়টি গভীরভাবে উপলদ্ধি করেই জাতির জনকের কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের সার্বিক উন্নয়নের পাশাপাশি যুবকদের খেলাধুলায় আরও উদ্বুদ্ধ করার জন্য ও ভবিষ্যতে যাতে খেলাধুলার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেশের সুনাম অর্জিত হয় সেই লক্ষ্যে এই টুর্নামেন্টের আয়োজন করেছেন। শুধু এই ধরনের টুর্নামেন্টই নয়, আমি আশা করবো স্থানীয় পর্যায়েও বিভিন্ন টুর্নামেন্টের আয়োজন করা হবে।
তিনি আরো বলেন, আমি জেলার ক্রীড়া সংগঠকদের অতীতের ন্যায় আমার বাবা মরহুম কাজী হেদায়েত হোসেনের নামে যে ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজন করা হতো সেই টুর্নামেন্ট আয়োজনের উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। রাজবাড়ীর খেলার ফান্ড যাতে আরও বৃদ্ধি পায় সেই লক্ষ্যে এই কাজী হেদায়েত হোসেন স্টেডিয়ামকে আরও সম্প্রসারণ করার জন্য যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীকে অনুরোধ জানানোর প্রেক্ষিতে তিনি তা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি সকলকে ভালো খেলা উপহার দেয়ার মাধ্যমে টুর্নামেন্ট সফল করার আহ্বান জানান। বক্তব্যের শেষে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে টুর্নামেন্টের জেলা পর্যায়ের প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করেন।
সম্মানিত বিশেষ অতিথির বক্তব্যে রাজবাড়ী-২ আসনের সংসদ সদস্য মোঃ জিল্লুল হাকিম বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজকে জাতির জনকের নামে তৃণমূল থেকে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত যে টুর্নামেন্টের আয়োজন করেছেন তা আমাদের সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে সফল করতে হবে। খেলাধুলা যুবসমাজকে মন্দ কাজ করা থেকে বিরত রাখে। এই খেলাধুলার যেমন ভালো দিক আছে তেমনি খারাপ দিকও আছে। আমাদের খারাপ দিকগুলোকে পরিহার করে ভালো দিকগুলোকে গ্রহণের মাধ্যমে যাতে খেলাকে আরও আকর্ষনীয় ও সুন্দর করা যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। রাজবাড়ীতে ১৯৭৪ সালে অনুষ্ঠিত ফুটবল টুর্নামেন্টে আমরা পাংশা থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলাম। কিন্তু বিভিন্ন কারণে আজ পর্যন্ত আমাদের সেই টুর্নামেন্টের চ্যাম্পিয়ন ট্রফি দেয়া হয়নি। এরপর বঙ্গবন্ধুর শাহাদতবরণের কারণে পরবর্তীতে ট্রফিটি কি কারণে আর দেয়া হলো না তা জানা সম্ভব হয়নি। অতীতের মতো এই ধরনের ঘটনা যেন আর না ঘটে আমি সেই কামনাই করি। বর্তমানে যে টুর্নামেন্ট আয়োজন করা হয়েছে তা সুন্দরভাবে পরিচালনা করার জন্য আমি টুর্নামেন্ট কমিটির সভাপতি ও সেক্রেটারীর প্রতি বিশেষভাবে আহ্বান জানাচ্ছি।
সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য কামরুন নাহার চৌধুরী লাভলী বলেন, খেলাধুলা যুবসমাজকে মাদক থেকে দূরে রেখে সুস্থ ও সুন্দরভাবে বেঁচে থাকতে শেখায়। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উদ্যোগের ফলে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর নামে আজকে যে ফুটবল টুর্নামেন্টটি হচ্ছে সেটি তরুণ সমাজকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে ভবিষ্যতের পথচলাকে আরও সুন্দর ও সফল করবে বলে আমি বিশ্বাস করি। তিনি খেলায় অংশগ্রহণকারী সকলকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিার নেতৃত্বে দেশের সার্বিক উন্নয়নে সম্মিলিতভাবে কাজ করার আহ্বান জানান।
সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলী বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে আজকে যে টুর্নামেন্ট শুরু হলো তা নিঃসন্দেহে একটি মহৎ উদ্যোগ। আর এই মহৎ উদ্যোগের মাধ্যমে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী দেশের তৃণমূল পর্যায়ের খেলোয়াড়দেরকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তাদের প্রতিভা বিকশিত করার সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছেন। এর মাধ্যমে একজন ভালো খেলোয়াড় তার নৈপুন্য প্রদর্শনের মাধ্যমে ইউনিয়ন পর্যায় থেকে উপজেলা পর্যায়, উপজেলা পর্যায় থেকে জেলা পর্যায়, জেলা পর্যায় থেকে বিভাগীয় পর্যায়, বিভাগীয় পর্যায় থেকে জাতীয় পর্যায়ে ও জাতীয় পর্যায় থেকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খেলার সুযোগ পাচ্ছে। আমরা আশা করবো রাজবাড়ী জেলার খেলোয়াড়দের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের খেলায় পূর্বের যে সফলতা ছিল বর্তমান প্রজন্মের খেলোয়াড়রাও সেই সফলতাকে আরও উচ্চে নিয়ে যাবে বলে উল্লেখ করেন। তিনি খেলায় অংশগ্রহণকারী সকল খেলোয়াড়দের মাঠে শতভাগ শৃঙ্খলা বজায় রেখে ভালো খেলা উপহার দেয়া ও খেলা পরিচালনাকারী রেফারীদের শতভাগ নিরপেক্ষ থেকে খেলা পরিচালনার আহ্বান জানান। এছাড়াও তিনি খেলা সংশ্লিষ্ট সকলকে টুর্নামেন্ট শতভাগ সফল করার আহ্বান জানান।
উল্লেখ্য যে, বক্তব্য পর্বের আগে প্রধান অতিথি ও সম্মানিত বিশেষ অতিথিগণসহ অন্যান্য অতিথিগণ জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে জাতীয়, ক্রীড়া ও অংশগ্রহণকারী দলগুলোর পতাকা উত্তোলন করেন। এরপর উদ্বোধনী খেলায় অংশগ্রহণকারী খেলোয়াড়দের সাথে পরিচয় পর্ব শেষে বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে টুর্নামেন্টের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।
উদ্বোধনী খেলায় রাজবাড়ী সদর ও কালুখালী উপজেলা দল নির্ধারিত সময়ে ১-১ গোলে অমীমাংসিতভাবে খেলা শেষ করে। পরবর্তীতে ট্রাইব্রেকারে কালুখালী উপজেলা দল ৪-২ গোলে রাজবাড়ী সদর উপজেলাকে পরাজিত করে বিজয়ী হয়। আগামী ২২শে সেপ্টেম্বর বিকালে ফাইনাল খেলা ও পুরস্কার বিতরণের মধ্য দিয়ে টুর্নামেন্টের জেলা পর্যায়ের খেলা সমাপ্ত হবে।