॥রফিকুল ইসলাম॥ রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলায় পদ্মা নদীর ব্যাপক ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। দেবগ্রাম ও দৌলতদিয়া ইউনিয়নের অনেক এলাকা ইতিমধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। প্রায় প্রতিদিনই নদী ভাঙ্গনে বিলীন হয়ে যাচ্ছে গ্রামের ঘর-বাড়ী, গাছপালা, ফসলী জমি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
গতকাল ৯ই সেপ্টেম্বর দুপুরে দৌলতদিয়া ইউনিয়নের ঢল্লাপাড়া গ্রামে পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, পদ্মা নদীর প্রবল স্রোতে নতুন নতুন এলাকা ভেঙ্গে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।
ঢল্লাপাড়া গ্রামের নিয়ামত মীর মালত(৬৮) বলেন, ৪৫ বছর পূর্বে তাদের বাড়ী প্রায় ৫কিলোমিটার দূরের বিশ্বনাথপুর গ্রামে ছিল। পদ্মা নদীর ভাঙ্গনের ফলে ঢল্লাপাড়া গ্রামে এসে নতুন বাড়ী নির্মাণ করি। এখানেও ভাঙ্গনের ফলে গত ১সপ্তাহে গ্রামের ৪শতাধিক ঘর-বাড়ী বিলীন হয়ে গেছে। অবশিষ্ট যে ৫০টি বাড়ী রয়েছে তাও যে কোন সময় পদ্মায় বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। দরিদ্র পরিবারগুলোর মানুষ ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে।
দৌলতদিয়া ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি মোঃ সেলিম রেজা বলেন, উত্তর দৌলতদিয়ার ১৭টি মৌজার মধ্যে ১২টি মৌজাই পদ্মায় বিলীন হয়ে গেছে। পদ্মা নদীর ভাঙ্গনে গত ৫বছরে কয়েকটি ওয়ার্ড বিলীন হয়ে যাওয়ায় দৌলতদিয়া ও দেবগ্রাম ইউনিয়নের স্থানীয় নির্বাচন বন্ধ রয়েছে। গ্রামের অভাবী লোকেরা ভিটে বাড়ী ও ফসলী জমি হারিয়ে মহাসড়ক, বেড়ীবাঁধ ও রেললাইনের পাশে আশ্রয় নিয়েছে। তারা ঘর-বাড়ী হারিয়ে এখন মানবেতর জীবন-যাপন করছে।
দৌলতদিয়া ইউনিয়নের ঢল্লাপাড়া, আফসার শেখের পাড়া, নোহাই মন্ডল পাড়া, কিয়ামদ্দিন মেম্বারের পাড়া, কাচারীডাঙ্গা, ইছাইল শিবরামপুর, দেবগ্রাম, বেথুরী, মধু সরদার পাড়া, জয়নাল মিস্ত্রীর পাড়া, মুন্সীপাড়া, আমিন মন্ডলের পাড়া প্রভৃতি গ্রাম পদ্মা নদীর প্রবল ভাঙ্গনে মানচিত্র থেকে মুছে গেছে।
দেবগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ আতর আলী সরদার ও দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ নুরুল ইসলাম মন্ডল পদ্মা নদীর ভাঙ্গন থেকে তাদের এলাকা রক্ষার জন্য জোর দাবী জানিয়েছেন।
গত শুক্রবার শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ও রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ আলহাজ্ব কাজী কেরামত আলী, জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলী, গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আবু নাসার উদ্দিন ও রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা লঞ্চযোগে ভাঙ্গন এলাকা পরিদর্শন করেন।
এ সময় পদ্মার তীরবর্তী এলাকার হাজার হাজার গ্রামবাসী প্রতিমন্ত্রীর নিকট বলেন, তারা ত্রাণের চাল ও টাকা চান না। তারা চান পদ্মা নদীর ভাঙ্গন থেকে রক্ষার জন্য নদী শাসন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে নদী ভাঙ্গন রক্ষার জন্য দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।