॥কাজী তানভীর মাহমুদ॥ রাজবাড়ী সদর উপজেলার আলীপুর ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের পশ্চিম বারবাকপুর গ্রামে গতকাল ১৬ই আগস্ট দিবাগত রাত ১২টার দিকে ঘুমন্ত অবস্থায় শ্বাশুড়ী হাজেরা বেগম (৫০)কে গলা কেটে হত্যা ও পুত্রবধু স্বপ্না বেগম (২৩)কে কুপিয়ে জখম করেছে দুর্বৃত্তরা।
নিহত শাশুড়ী হাজেরা বেগম পশ্চিম বারবাকপুর গ্রামের কৃষক তমিজ উদ্দিন সেখের স্ত্রী। আহত পুত্রবধু স্বপ্না মালেয়শিয়া প্রবাসী হাফিজুল সেখের স্ত্রী। নিহত হাজেরা বেগমের স্বামী তমিজ উদ্দিন বলেন, আমার দুই ছেলে প্রবাসে থাকে। বাড়ীতে আমি, আমার স্ত্রী হাজেরা বেগম, এক ছেলের বউ স্বপ্না বেগম ও চার বছর বয়সী নাতী বসবাস করি। গত বৃহস্পতিবার দিনগত রাত ১০টার দিকে রাতের খাবার খেয়ে আমি আলাদা ঘরে ঘুমিয়ে পড়ি এবং আমার স্ত্রী, ছেলের বউ ও নাতী আরেকটি ঘরে ঘুমায়। রাত সাড়ে ১২টার দিকে ছেলের বউ স্বপ্না চিৎকার করে ডাক দিলে আমার ঘুম ভাঙ্গে। এ সময় আমি ওই ঘরে গিয়ে দেখি খাটের ওপর আমার স্ত্রীর গলাকাটা লাশ পড়ে আছে এবং ছেলের বউ স্বপ্নার দুই হাতে কোপের চিহ্ন রয়েছে। তবে পুত্রবধু ঘটনার সময় পাশেই ছিলো সে বলছে কিছুই জানেনা। তিনি আরো বলেন, আমার সঙ্গে কারো কোন শত্রুতা নেই। কে বা কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে তার ধারণা করতে পারছি না। কেন এমন ঘটনা ঘটলো সে বিষয়ে কিছুই বুঝতে পারছিনা। পুলিশ পুত্রবধু স্বপ্নাকে থানায় নিয়ে গেছে।
আহত পুত্রবধু স্বপ্না বেগম বলেন, আমি ঘটনার সময় পাশে থাকলেও ঘুমিয়ে ছিলাম। ঘর অন্ধকার থাকায় আমি কিছুই দেখিনি।
রাজবাড়ী থানার পরিদর্শক(তদন্ত) আব্দুল্লাহ আল তায়াবীর জানান, গলাকাটা লাশটি উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিহতের ছেলের বউ স্বপ্না বেগমকে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শনাক্তপূর্বক গ্রেফতারের জন্য পুলিশ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

উল্লেখ্য, এরআগে গত ২রা আগস্ট দিনগত রাতের কোন এক সময় রাজবাড়ী সদর উপজেলার পশ্চিম মূলঘরে দাদী শাহিদা বেগম(৪৫) ও নাতনী লামিয়া আক্তার (৭)কে নৃশংসভাবে গলা কেটে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। নিহত শাহিদা বেগমের পেডিকোটে ও পায়ে মানুষের বীর্যের চিহ্ন ছিল। ধারণা করা হচ্ছে ধর্ষণের পর তাকে হত্যা করা হয়েছে।
জোড়া হত্যাকান্ডের ঘটনায় গত ৩রা আগস্ট নিহত শিশু লামিয়ার বাবা গার্মেন্টেস কর্মী শহিদুল ইসলাম(৩২) বাদী হয়ে রাজবাড়ী সদর থানায় অজ্ঞাত আসামী করে মামলাটি দায়ের করেন। রাজবাড়ী সদর থানার মামলা নং-৪, ধারাঃ ৩০২/৩৪ পেনাল কোর্ড। থানার এস.আই মোঃ মেজবাউদ্দিন মামলাটির তদন্ত করছেন। তবে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত দীর্ঘ ১৫দিনেও হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন বা ঘটনায় সাথে জড়িও থাকার সন্দেহে কয়েকজন গ্রেফতার হলেও হত্যার দায় কেউ স্বীকার করেনি।
এ ঘটনার ৫দিন পর গত ৭ই আগস্ট রাত ১০টা থেকে রাত ১২টার যেকোন সময় রাজবাড়ী সদর উপজেলার বানিবহ ইউনিয়নের আটদাপুনিয়ায় নিজ বসত ঘরে দুই সন্তানের জননী গৃহবধু আদুরী আক্তার লিমা (২৫)কে গলাকেটে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনার পরদিন গত ৮ই আগস্ট নিহতের স্বামী রড মিস্ত্রি মিজানুর রহমান বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামী করে রাজবাড়ী থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। রাজবাড়ী থানার মামলা নং-৭, ধারাঃ ৩০২/৩৪ পেনাল কোর্ড। থানার এস.আই বদিয়ার রহমান মামলাটি তদন্ত করছেন। এ ঘটনায় পুলিশ ৩জনকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে কারাগারে পাঠালেও দীর্ঘ ১০দিনেও হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন বা হত্যার দায় কেউ স্বীকার করেনি।
এদিকে গত ১৫দিনের ব্যবধানে রাজবাড়ী সদর উপজেলার পাশাপাশি ৩টি ইউনিয়নে একইভাবে ৩জন নারী ও ১শিশুকে গলাকেটে হত্যার ঘটনায় প্রকৃত কিলার গ্রেফতার না হওয়ায় এলাকায় উদ্বেগ ও আতংক বিরাজ করছে।