বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:১৫ পূর্বাহ্ন
Logo
সংবাদ শিরোনাম ::
বিশ্বব্যাপী ওমিক্রন সংক্রমণ বৃদ্ধিতে আইসোলেশন মেয়াদ অর্ধেক করার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ওমিক্রন ভেরিয়েন্ট ডেল্টা ও বিটার তুলনায় তিন গুণের বেশী পুনঃ সংক্রমন ঘটাতে পারে : গবেষণা প্রতিবেদন জাতিসংঘ ভবনের বাইরে এক বন্দুকধারী গ্রেফতার শান্তি চুক্তির পঞ্চম বার্ষিকী উপলক্ষে কলম্বিয়া সফর জাতিসংঘ মহাসচিব সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানগণের সাক্ষাৎ করোনা ভাইরাসের সংক্রমন বেড়ে যাওয়ায় অস্ট্রিয়ায় লকডাউন করোনা সংক্রমণ বাড়ায় ইউরোপের বিভিন্ন দেশে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ ভারতে নতুন করে ১০ হাজার ৩০২ জন করোনায় আক্রান্ত নভেম্বর মাসজুড়ে করাঞ্চলে কর মেলার সেবা পাবেন করদাতারা ঔপনিবেশিক আমলের ফৌজদারী কার্যবিধি যুগোপযোগী হচ্ছে

জনসংখ্যা বোঝা নয়,দেশের সম্পদ

  • আপডেট সময় শনিবার, ১১ আগস্ট, ২০১৮

॥ মুহাম্মদ ফয়সুল আলম ॥ আমাদের সমস্যা ও সীমাবদ্ধতার মাঝেও অমিত সম্ভাবনা রয়েছে যা এ দেশকে উন্নয়ন ও অগ্রগতির পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। এজন্য চাই বৈশ্বিক ভাবনার সাথে সামঞ্জস্য রেখে সময়োপযোগী সুদূরপ্রসারী সঠিক পরিকল্পনা ও তার যথার্থ বাস্তবায়ন। গত ১১ই জুলাই ছিল বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস। অতিরিক্ত জনসংখ্যা সম্পদ নয়, বোঝা। অপুষ্টি, অপর্যাপ্ত শিক্ষার সুযোগ, বেকারত্ব, চিকিৎসাসেবার অপ্রতুলতা ইত্যাদি সমস্যার মূলে রয়েছে অতিরিক্ত জনসংখ্যা। এবার পালিত হয়েছে ২৯তম বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস। মানুষের মাঝে সচেতনতা বাড়ানোর উদ্দেশ্য নিয়ে ১৯৮৯ সাল থেকে জাতিসংঘের উদ্যোগে বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস পালিত হয়ে আসছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো এবারও বাংলাদেশে দিবসটি পালিত হয়েছে। এবছর দিবসটির প্রতিপাদ্য হলো- “ঋধসরষু চষধহহরহম রং ধ ঐঁসধহ জরমযঃ” (পরিকল্পিত পরিবার, সুরক্ষিত মানবাধিকার)। ১৯৮৭ সালের ১১ই জুলাই বিশ্বের জনসংখ্যা ৫০০ কোটিতে উন্নীত হয়। এর ফলে ইউএনডিপি’র গভর্ন্যান্স কাউন্সিল প্রতিবছর দিনটিকে বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস হিসেবে পালন করার প্রস্তাব করে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বিশ্বজুড়ে দিবসটি পালনের সিদ্ধান্ত হয়।
সখিনা বেগম ছয় সন্তানের মা। থাকেন রাজধানীর তেজগাঁওয়ে, রেললাইন বস্তিতে। স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করে অন্যত্র চলে যান। ফলে সাতজনের সংসার সামলানোর পুরো ভার এসে পড়ে সখিনার ওপর। কিন্তু এতে ক্ষোভ নেই। বস্তির অদূরেই কারওয়ান বাজারে সবজি বিক্রি করে সংসার চালান। সখিনা বলছেন, আমার ১০টা পোলাপাইন হইলে কী ফালাইতে পারতাম?
একই বস্তির আরেকজন শিউলি, সেও একাধিক সন্তানের মা। মনে করেন, অধিক সন্তান কোনো সমস্যা নয়। পোলাপান মানুষ করতে পারলে সম্পদ। এহন সবতো মানুষ হয় না। দুয়েকটা অমানুষও হয়। হাতের পাঁচ আঙ্গুল কী সমান হয়? অবশ্যই এই ধারণার সঙ্গে একমত নন একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে নেটওয়ার্কিং ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মরত খন্দকার ফাইজুস সালেহীন। যিনি গত বছরই বিয়ে করেছেন এবং তার স্ত্রী সন্তানসম্ভবা। সালেহীন বলছেন, তারা বাস্তবিক কারণেই এক সন্তানের পক্ষে।
বাংলাদেশে তৃতীয় বিশ্বের একটি উন্নয়নশীল দেশ। স্বাধীনতার পর ধ্বংসস্তূপ থেকেই দেশটির পথচলা শুরু। ছিল না অবকাঠামো, ছিল না কোনো প্রতিষ্ঠানও। স্বাধীনতার পর থেকে অজস্র বাঁধাবিপত্তি পেরিয়ে বাংলাদেশকে এগিয়ে যেতে হয়েছে। একসময় বিশ্বে দুর্ভিক্ষে জর্জরিত দেশ হিসেবে বাংলাদেশের পরিচয় ছিল, যা এখন ইতিহাস। স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি আশাব্যঞ্জক। সামাজিক উন্নয়ন সূচকগুলোতে বিস্ময়কর অগ্রগতি হয়েছে বাংলাদেশের। যেমন শিশু মৃত্যুর হার কমেছে, মেয়েদের বিদ্যালয়ে যাওয়ার হার বেড়েছে অনেক। বিশ্বব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় প্রকৃতঅর্থে তিনগুণ বেড়েছে, আর গড় আয়ু ১৯৭১-১৯৭২ সালের ৪৭বছর থেকে ২০১৭ সালে ৭২.০৫ বছরে উন্নীত হয়েছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ৩ শতাংশ থেকে দেড় শতাংশে নেমে এসেছে। গণসাক্ষরতার হার দ্বিগুণ হয়েছে।
বাংলাদেশের উন্নয়ন এখন বিস্ময়। জনসংখ্যার বিচারে আমাদের দেশ অষ্টমস্থানে রয়েছে। কোথাও কোথাও আবার নবমও উল্লেখ করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যুরো অভ স্ট্যাটিসটিকস (বিবিএস)-এর হিসাবে আমাদের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ২৭ লাখ এবং বিশ্বের জনসংখ্যা ৭৫০ কোটি। আমাদের দেশের সীমিত সম্পদকে কাজে লাগিয়ে দেশের জনসংখ্যাকে সম্পদে পরিণত করতে হবে। ওয়ার্ল্ড হেলথ অরগানাইজেশন (ডব্লিউএইচও)-এর হিসাব মতে, প্রতি মিনিটে ২৫০টি শিশু জন্মগ্রহণ করে আর বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করে ৯টি শিশু। এক জরিপে দেখা গেছে যে, বর্তমানে জন্মগ্রহণকারী ১০০ জন শিশুর মধ্যে ৯৭জন জন্মগ্রহণ করে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে। এমনিতেই দেশগুলো অধিক জনসংখ্যার দেশ। সেদিক থেকে বিশ্বের অনেক দেশ জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশকে এখন রোল মডেল বলে মনে করে।
বাংলাদেশ এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম জিডিপি অর্জনকারী দেশ। বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৭.৪ শতাংশ। বিবিএস’র হিসাবে এরই মধ্যে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭.৬৫। অতএব চলতি অর্থবছরের প্রবৃদ্ধি প্রাথমিক হিসাবে বাজেটের লক্ষ্যমাত্রাকেও ছাড়িয়ে গেছে।
বাংলাদেশে কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। এ সুযোগ কাজে লাগাতে জনশক্তিকে আরও দক্ষ করতে হবে। কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে তরুণ যুব বেকারদের বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্ত করে তাদের কাজে লাগাতে হবে। নদী মাতৃক বাংলাদেশের সিংহভাগ অঞ্চলের মাটিই উর্বর ও আবাদযোগ্য। তাই আমাদের কৃষিক্ষেত্রে দক্ষ জনশক্তির মাধ্যমে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারলে উৎপাদন বৃদ্ধি করা আমাদের জন্য সহজ। কৃষি, খাদ্য এবং জন্ম নিরোধে বাংলাদেশের সাফল্য উল্লেখযোগ্য। কৃষিকে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির চালিকাশক্তি বলা হচ্ছে। দেশের ৮০০ থেকে ৯০০ কোম্পানি নিজস্ব উদ্যোগে সফটওয়্যার তৈরি করে রফতানি করছে। পর্যাপ্ত দক্ষ জনবল ও সুযোগ-সুবিধা পেলে সফটওয়্যার রফতানিও তৈরি পোশাকের মতো বেকারত্ব দূর করে দেশের উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করবে বলে আশা করা যায়।
এ মুহুর্তে বাংলাদেশে ১৫ বছর থেকে ৬০ বছর বয়সের মানুষ বেশি, যারা কর্মক্ষম। দেশের বিশাল জনসংখ্যাকে বৈজ্ঞানিক উপায়ে চাষাবাদ, প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণ, জনশক্তি রফতানির প্রক্রিয়া সহজিকরণসহ সহজশর্তে ঋণের মাধ্যমে জাতীয় উন্নয়নে অংশগ্রহণের সুযোগ করে দিতে হবে। যার জন্য দরকার সঠিক কর্মপরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন।
জনসংখ্যা হ্রাস-বৃদ্ধির সাথে রয়েছে উন্নয়নের সরাসরি সম্পর্ক। পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচি এক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে। পরিবার পরিকল্পনা একটি প্রযুক্তি, যেখানে উন্নয়নের পূর্বশর্তকে বিবেচনায় রেখে সকল বৈষম্যের অবসান ঘটিয়ে এটি মানবতার কল্যাণ বয়ে আনতে পারে। কায়রো সম্মেলনে(১৯৯৪) জনসংখ্যা ও স্থিতিযোগ্য উন্নয়নের অব্যাহত ধারা বজায় রাখার লক্ষ্যে পরিবার-পরিকল্পনা কর্মসূচিতে উন্নয়নধর্মী বিভিন্ন কার্যক্রমকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে- যার মধ্যে আছে স্বাস্থ্য, চাকুরি এবং জনগণের মর্যাদাপূর্ণ অবস্থান।
বাংলাদেশে জনসংখ্যাকে নিয়ন্ত্রণে রাখার সর্বাত্মক উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার পরপরই জনসংখ্যা বৃদ্ধিকে বাংলাদেশের এক নম্বর সমস্যা হিসেবে ঘোষণা করেন। সে আলোকে ১৯৭৬ সালে প্রণীত হয় জাতীয় জনসংখ্যানীতি। ১৯৯৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্ব জনসংখ্যা দিবসের বাণীতে বলেন, “জনসংখ্যা বিস্ফোরণরোধ এবং দেশের সার্বিক উন্নয়নে আমাদের সকলকে দলমত নির্বিশেষে একযোগে কাজ করতে হবে। আমাদের সম্মিলিত প্রয়াস জনসংখ্যা সমস্যা উত্তরণের মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তিসম্পন্ন ও উন্নত বাংলাদেশ গঠনে সহায়ক হবে বলে আমাদের বিশ্বাস।” এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, জনসংখ্যা সমস্যা থেকে উত্তরণে আমরা সচেতন।
বাড়ি বাড়ি পরিদর্শনের মাধ্যমে প্রত্যেকটি দম্পতির তথ্য সংগ্রহ করা এবং দম্পতি রেজিস্টারে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। পরিবার পরিকল্পনা খাতে ডিজিটাল বাংলাদেশ কার্যক্রম বাস্তবায়নে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের সেবাসমূহ জনগণের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে এবং মানবসম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করছে। পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচী কেন্দ্র, বিভাগ, জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন তথা গ্রাম পর্যায়ে সর্বত্র এখন ডিজিটাল সেবার আওতাধীন। পরিবার পরিকল্পনা হচ্ছে ভবিষ্যতের জন্য একটি বিনিয়োগ এবং সকল উন্নয়ন কর্মসূচির জন্য একটি মৌলিক ও মূখ্য এজেন্ডা।
পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচীতে বাংলাদেশের সাফল্য অনুকরণীয়। আমাদের সাফল্যের পেছনে রয়েছে সরকারের দৃঢ় অঙ্গীকার। সরকারী-বেসরকারীভাবে আমরা যদি উন্নয়নের স্বার্থে সুপরিকল্পিতভাবে সুসংবদ্ধ, সুসংকল্পবদ্ধ, দৃঢ় প্রত্যয়ী ও কঠোর পরিশ্রমী হতে পারি তবে জনশক্তি দিয়েই আমাদের সাফল্য নিশ্চিত। -পিআইডি প্রবন্ধ।

নিউজটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো খবর
error: আপনি নিউজ চুরি করছেন, চুরি করতে পারবেন না !!!!!!