॥পাংশা প্রতিনিধি॥ রাজবাড়ী জেলার পাংশা উপজেলার কসবামাজাইল ইউপিতে গত ৩দিন ধরে উত্তেজনার পর গতকাল ২২শে জানুয়ারী দুপুরে দুই পক্ষের সংঘর্ষে অগ্নিসংযোগ, ভাংচুর-লুটতরাজ এবং ইলিয়াস হোসেন নামের এক কলেজ ছাত্র গুলিবিদ্ধ হয়েছে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ৫রাউন্ড গুলি ছোড়ে। খবর পেয়ে র্যাবও ঘটনাস্থলে গিয়ে টহল দেয়। এখন পর্যন্ত এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে এবং ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
জানাযায়, গত ২০শে জানুয়ারী নাদুরিয়া ঘাটে লটাভাঙ্গা ও শান্তিখোলা গ্রামের ছেলেদের মধ্যে গোলযোগ হয়। ওই ঘটনার জের ধরে গত ৩দিন ধরে বিভিন্ন সময়ে পরস্পর দু’গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ, মারধর, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। গত শনিবার বিকেলে সংঘর্ষ বাঁধলে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং রাতে পাংশা থানা পুলিশ কসবামাজাইল ইউপির ৫নং ওয়ার্ডের মেম্বার খায়রুল ইসলাম ও লটাভাঙ্গা গ্রামের বাবলু নামের এক ব্যক্তিকে আটক করে। তবে রাতেই ইউপি মেম্বার খায়রুল ইসলামকে থানা থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
এদিকে গতকাল রবিবার সকালে ইউপি নির্বাচনের বিদ্রোহী প্রার্থী জজ আলী বিশ্বাস ও বিজয়ী চেয়ারম্যান কামরুজ্জামানের পক্ষের লোকজনের মধ্যে পুনরায় সংঘর্ষ বাধে। সংঘর্ষে দীঘলহাটের কাশেম মন্ডলের ছেলে আলামীন এবং জয়নাল মেম্বারের পিতা তোয়াক্কেল আহত হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ে। এতে ইউপি চেয়ারম্যান কামরুজ্জামানের সমর্থিত লোকজন ধারালো অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে গত ইউপি নির্বাচনে পরাজিত বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী ও পাংশা উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য জজ আলী বিশ্বাসের শান্তিখোলা গ্রামের বাড়িতে হামলার চেষ্টা করলে উভয় গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া এবং আতংক ছড়িয়ে পড়ে।
এ সময় উভয় পক্ষের লোকজন ঢাল-সড়কি ও দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে পারস্পর মুখোমুখী হয়। এ সময় প্রতিপক্ষের গুলিতে ইলিয়াস হোসেন(২৫) নামের এক কলেজ ছাত্র গুলিবিদ্ধ হয়। তার পিতার নাম আমোদ আলী বিশ্বাস। গুলিবিদ্ধ ইলিয়াস হোসেন জর্জ আলী বিশ্বাসের ভাতিজা। তাকে প্রথমে শৈলকূপা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তকে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হেেছ বলে জানা গেছে।
এদিকে খবর পেয়ে রাজবাড়ীর সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মোঃ আসাদুজ্জামান এবং পাংশা থানার ওসি এস.এম শাহজালালের নেতৃত্বে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ৫রাউন্ড সর্টগানের গুলি ছোড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
এছাড়া বেলা সাড়ে ১১টার দিকে একদল সন্ত্রাসী ধারালো অস্ত্র ও লাঠিসোটা নিয়ে জোটবদ্ধ হয়ে দীঘলহাট গ্রামের পল্লব দত্তের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে ৩টি বসত ঘর পুড়িয়ে দেয় এবং লুটপাট করে বলে অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া দীঘলহাট গ্রামের বাবলু মুন্সীর বাড়িতে হামলা ভাংচুর ও লুটতরাজের ঘটনা ঘটে। বাবলু মুন্সীর বাড়ির কিছু গাছপালা কেটেও তছনছ করা হয়। এছাড়া আরো কয়েকটি ঘর বাড়ীতে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
পাংশা থানার ওসি এস.এম শাহজালাল বলেন, গত ইউপি নির্বাচনে পাংশার কসবামাজাইল ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে বিজয়ী হন কামরুজ্জামান খান। প্রতিদ্বন্দ্বি বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে পরাজিত হন উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য জজ আলী বিশ্বাস। নির্বাচনের পর থেকে উভয় পক্ষের মধ্যে বিরোধ চলছিল। গত শুক্রবার ইউনিয়নের নটাভাঙ্গা মাঠে দুই গ্রামের তরুনদের মধ্যে ক্রিকেট খেলায় জয়-পরাজয় নিয়ে উভয়ের মধ্যে অসন্তোষের জের ধরে গতকাল রবিবার দুপুরে নটাখোলা গ্রামে সংঘর্ষ শুরু হয়। সংবাদ পেয়ে পুলিশ দল নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে ৫রাউন্ড শর্টগানের গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনি। এ ঘটনায় প্রাথমিকভাবে ৩জনকে আটক করা হয়েছে।
বিকেলে ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে রাজবাড়ী পুলিশ সুপারের দায়িত্বপ্রাপ্ত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ তারিকুল ইসলাম জানান, এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্থদের থানায় অভিযোগ দিতে বলা হয়েছে। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।