॥আসহাবুল ইয়ামিন রয়েন॥ ট্রাফিক সপ্তাহ-২০১৮ উপলক্ষে ‘আইন মেনে চালাবো গাড়ী, নিরাপদে ফিরবো বাড়ী’-শ্লোগানকে সামনে রেখে রাজবাড়ী জেলা পুলিশের আয়োজনে ৫ই আগস্ট সকালে বর্ণাঢ্য র্যালী ও পথসভা অনুষ্ঠিত হয়।
সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের আয়োজনে কালেক্টরেট চত্বর থেকে র্যালীটি বের হয়। র্যালীতে জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলী, পুলিশ সুপার আসমা সিদ্দিকা মিলি,বিপিএম-সেবা, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফকীর আব্দুল জব্বার, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(সার্বিক) রেবেকা খান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(সদর সার্কেল) মোঃ রেজাউল করিম, সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার(সদর) মোঃ আছাদুজ্জামান, সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার(পাংশা সার্কেল) মোঃ ফজলুল করিম, সদর থানার ওসি মোঃ তারিক কামালসহ জেলা পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাগণ, বিভিন্ন সরকারী দপ্তরের কর্মকর্তাগণ, সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপ ও শ্রমিক ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ, জেলা মাইক্রোবাস-প্রাইভেট কার মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের রোভার স্কাউট ও গার্লস গাইডের সদস্যগণ এবং সাধারণ শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন।
র্যালীটি শহর প্রদক্ষিণ শেষে এই স্থানে এসে শেষ হয়। এরপর বেলা ১১টায় কালেক্টরেটের আম্রকানন চত্বরে অনুষ্ঠিত হয় পথসভা।
পুলিশ সুপার আসমা সিদ্দিকা মিলি,বিপিএম-সেবা’র সভাপতিত্বে পথসভায় বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলী।
অন্যান্যদের মধ্যে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফকীর আব্দুল জব্বার এবং অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(সার্বিক) রেবেকা খান বক্তব্য রাখেন। পথসভাটি সঞ্চালনা করেন সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার(পাংশা সার্কেল) মোঃ ফজলুল করিম।
এ সময় বিভিন্ন পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তা, বিভিন্ন সরকারী দপ্তরের কর্মকর্তাগণ, বিআরটিএ’র কর্মকর্তা, জেলা সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মুরাদ হাসান ও অন্যান্য নেতৃবৃন্দ, মাইক্রোবাস-প্রাইভেট কার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কাজী টিটনসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ, সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মোঃ রকিবুল ইসলাম পিন্টু, সাধারণ সম্পাদক মোঃ আব্দুর রশিদ ও অন্যান্য নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের রোভার স্কাউট ও গার্লস গাইডের সদস্যগণ এবং সাধারণ শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলী তার বক্তব্যে বলেন, সম্প্রতি ঢাকায় বাস দুর্ঘটনায় দু’জন শিক্ষার্থীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে আমাদের ছাত্রসমাজ নিরাপদ সড়কের দাবীতে আন্দোলনে নেমেছিল। তাদের এই দাবীকে আমরা সাধুবাদ জানাই। কারণ নিরাপদ সড়ক বাস্তবায়ন করার ক্ষেত্রে তারা আমাদের চক্ষুকে উন্মোচিত করেছে। শুধু আমরাই নয় আজকে ছাত্রসমাজ যে দাবীগুলো উত্থাপন করেছে সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের সব যৌক্তিক দাবী মেনে নিয়ে তা বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়েছেন। যদিও কারও মৃত্যু কোন কিছু দিয়েই পূরণ করা যায় না তারপরও প্রধানমন্ত্রী নিহত ওই ২শিক্ষার্থীর পিতামাতাসহ পরিবারের সদস্যদের সমবেদনা জানিয়েছেন ও তাদেরকে ২০লক্ষ টাকা করে মোট ৪০ লক্ষ টাকার সঞ্চয়পত্রসহ ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য ৫টি বাস দিয়েছেন। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের দাবী অনুযায়ী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনের রাস্তায় স্পিডব্রেকার নির্মাণসহ নিরাপত্তামূলক বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। সকল দাবী মেনে নেওয়ার পরও লক্ষ্য করা যাচ্ছে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার লক্ষ্যে কিছু স্বার্থান্বেষী মহল বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় গুজব ছড়ানোর মাধ্যমে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। যার বাস্তব প্রমাণ বিভিন্ন মিডিয়ায় এসেছে। আমি শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অনুরোধ করবো কোন রকম গুজবে কান না দিয়ে ঠিকমতো লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার জন্য। শিক্ষার্থীদের কাজ পড়াশোনা করে তাদের উজ্জল ভবিষ্যৎ গড়ে তোলা। গাড়ীর লাইসেন্স চেক করা সংশ্লিষ্ট সরকারী বিভাগের কাজ। এখন থেকে রাস্তায় যাতে কোন ফিটনেস ও কাগজপত্র বিহীন গাড়ী ও ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া চালক গাড়ী চালাতে না পারে সে জন্য জেলা পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ ও বিআরটিএ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসন থেকে জেলা পুলিশের ট্রাফিক বিভাগকে সব ধরণের সহযোগিতা প্রদান করা হবে বলে উল্লেখ করেন।
এছাড়াও তিনি তার বক্তব্যে সকল সরকারী বেসরকারী ও ব্যক্তি মালিকানাধীন সকল ধরণের যানবাহনের মালিককে তাদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ লাইসেন্স নিয়ে রাস্তায় গাড়ী বের করার আহ্বান জানান।
পুলিশ সুপার আসমা সিদ্দিকা মিলি বিপিএম-সেবা বলেন, ঢাকায় বাস দুর্ঘটনায় দু’জন শিক্ষার্থীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে আমাদের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নেমেছিল। সহপাঠীদের এভাবে অকাল মৃত্যু হলে প্রতিক্রিয়া হওয়াই স্বাভাবিক। সেই প্রতিক্রিয়াই তারা আন্দোলনে নেমেছিল। এ ঘটনায় ইতিমধ্যে মামলা দায়ের হয়েছে। অভিযুক্ত বাসের মালিক, চালক ও হেলপারদের আটক করা হয়েছে। বিক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থীদের ৯টি দাবী ছিল, তার সবই মেনে নেয়া হয়েছে। তা সত্ত্বেও সোশ্যাল মিডিয়ায় যেভাবে গুজব ও অপপ্রচার চালানো হচ্ছে, কোমলমতি শিক্ষার্থীদের উস্কানি দেয়া হচ্ছে তা অত্যন্ত দুঃখজনক। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের আবেগকে পুঁজি করে কাউকে নোংরামি করার সুযোগ দেয়া হবে না। ঢাকায় আমাদের পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা আক্রান্ত হয়েছে। তারপরও তারা ধৈর্য্য ধরে পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছে। যেভাবে উচ্ছৃঙ্খলতা করা হয়েছে, পুলিশের যানবাহনের উপরে উঠে লাফালাফি করা হয়েছে তা আমরা আমাদের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আশা করিনি। কারণ তারাই ভবিষ্যতে দেশ পরিচালনা করবে, আমাদেরকে নেতৃত্ব দেবে। ইন্ধন দিয়ে তাদেরকে ভুল পথে পরিচালিত করার চেষ্টা করা হয়েছে। যাই হোক আমরা চাই শিক্ষার্থীরা তাদের লেখাপড়ায় মনোনিবেশ করুক।
তিনি আরো বলেন, পুলিশের যানবাহনগুলোর কাগজপত্র সেন্ট্রালি রাখা হয়। ড্রাইভারদের কাছে দেয়া থাকে না। তাদের কাছে শুধু ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকে। বিষয়টি জানা না থাকার কারণে অনেক ক্ষেত্রে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। বিআরটিএ’র কর্মকর্তাদের বিশেষভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি, আপনারা ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করে কাগজপত্র ইস্যু করবেন। ট্রাফিক বিভাগের পক্ষ থেকে যানবাহনের কাগজপত্র পরীক্ষার ক্ষেত্রে প্রয়োজনে স্কাউট সদস্যদের সহযোগিতা নেয়া হবে। সবার সহযোগিতায় আমরা পরিবহন সেক্টরের শৃঙ্খলা বজায় রাখবো।
উল্লেখ্য, র্যালী ও পথ সভা শেষে রাজবাড়ী শহরের বিভিন্ন গুরুত্ব সড়কে, জাতীয় মহাসড়ক ও আঞ্চলিক মহাসড়কে জেলা পুলিশ ও জেলা ট্রাফিক বিভাগের উদ্যোগে যানবাহনের কাগজপত্র পরীক্ষা করাসহ ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন ও লাইসেন্স বিহীন চালকের মোটরযান আইনে মামলা করা হয়।