শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ০৭:২৯ অপরাহ্ন
Logo
সংবাদ শিরোনাম ::
বিশ্বব্যাপী ওমিক্রন সংক্রমণ বৃদ্ধিতে আইসোলেশন মেয়াদ অর্ধেক করার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ওমিক্রন ভেরিয়েন্ট ডেল্টা ও বিটার তুলনায় তিন গুণের বেশী পুনঃ সংক্রমন ঘটাতে পারে : গবেষণা প্রতিবেদন জাতিসংঘ ভবনের বাইরে এক বন্দুকধারী গ্রেফতার শান্তি চুক্তির পঞ্চম বার্ষিকী উপলক্ষে কলম্বিয়া সফর জাতিসংঘ মহাসচিব সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানগণের সাক্ষাৎ করোনা ভাইরাসের সংক্রমন বেড়ে যাওয়ায় অস্ট্রিয়ায় লকডাউন করোনা সংক্রমণ বাড়ায় ইউরোপের বিভিন্ন দেশে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ ভারতে নতুন করে ১০ হাজার ৩০২ জন করোনায় আক্রান্ত নভেম্বর মাসজুড়ে করাঞ্চলে কর মেলার সেবা পাবেন করদাতারা ঔপনিবেশিক আমলের ফৌজদারী কার্যবিধি যুগোপযোগী হচ্ছে

রাজবাড়ীতে ৩দিনব্যাপী ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলার জমকালো সমাপনী

  • আপডেট সময় রবিবার, ২২ জানুয়ারী, ২০১৭

॥আসহাবুল ইয়ামিন রয়েন॥ রাজবাড়ী জেলা প্রশাসনের আয়োজনে শহরের বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ খুশি রেলওয়ে ময়দানে আয়োজিত ৩দিনব্যাপী ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলা গতকাল শনিবার রাত ৮টায় জমকালো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও নয়নাভিরাম আতশবাজি প্রদর্শনীর মাধ্যমে সমাপ্ত হয়েছে।
গতকাল ২১শে জানুয়ারী বিকেলে মেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন এবং মেলার স্টলসহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক(প্রশাসন) ও এটুআই প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক কবির বিন আনোয়ার।
জেলা প্রশাসক জিনাত আরা’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন পুলিশ সুপারের প্রতিনিধি অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোঃ আজাদ রহমান।
ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলা মেলার তাৎপর্য তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(সার্বিক ও রাজস্ব) মোঃ আশরাফ হোসেন। এ সময় এটুআই প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক কবির বিন আনোয়ারের সহধর্মিনী, মেলার সঞ্চালক ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মোঃ মানোয়ার হোসেন মোল্লা, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাগণ, জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনারগণ, বিভিন্ন সরকারী বিভাগের কর্মকর্তাগণ, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষকগণ, সুধীজনসহ মেলার দর্শনার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। তিন দিনের এই মেলায় মিডিয়া পার্টনার হিসেবে রাজবাড়ী জেলার বহুল প্রচারিত দৈনিক মাতৃকন্ঠ বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশসহ সংবাদ প্রচারের দায়িত্ব পালন করে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক(অতিরিক্ত সচিব) ও এটুআই প্রকল্পের মহাপরিচালক কবির বিন আনোয়ার বলেন, বাংলাদেশে বিভিন্ন সময়ে কৃষি মেলা, বৃক্ষ মেলা, গৃহায়ন মেলাসহ আনাচে-কানাচে বিভিন্ন মেলার আয়োজন করা হলেও ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলা অন্যান্য মেলার চেয়ে একটু ভিন্ন তাৎপর্য বহন করে। কারণ সারা দেশে এই মেলার মাধ্যমে ডিজিটাল প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহারের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় সরকারের বিভিন্ন সেবা সহজে পৌঁছে দেওয়াসহ ভবিষ্যত প্রজন্মকে এর মাধ্যমে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী ও উন্নত বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখিয়েছেন। আমাদের সকলের জানা উচিত বাঙালীদের প্রাচীন ইতিহাস সম্পর্কে। আমাদের শিক্ষা, সাংস্কৃতিক ও জীবনযাত্রার মান পাঁচ হাজার বছর আগেই অনেক উন্নত ছিল। সেই সময়ে আমাদের দেশের মানুষ আমাদের প্রচীন নগরীর রাজধানী মহাস্থানগড়ে পাকা দালন-কোঠায় বাস করত। আর তৎকলীন মিশরের রাজধানী কায়রোর মানুষের মতো মসলিন নামক অতি উন্নত কাপড় পরিধান করত। শুধু সেটাই নয় আমাদের পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারে তেরশ বছর আগে থেকে এই উপমহাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের শিক্ষর্থীরা উন্নত শিক্ষা গ্রহণ করত। কিন্তু সেই সময় ইউরোপ, আমেরিকার মানুষ অন্ধকার যুগে বসবাস করত। আর পাঁচ হাজার বছর আগে অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপসহ আমেরিকার মানুষতো পোষক দূরে থাক আদিম যুগের মানুষের মতো বসবাস করত। এখন প্রশ্ন হলো মাত্র দুইশত বছর আগে আবিষ্কৃত দেশের মানুষ আমাদের থেকে উন্নত হলো কিভাবে। এর প্রধান কারণ আমাদের এই নদী বিধৌত সম্পদের স্বর্গরাজ্য দক্ষিণ এশিয়ার মানুষ প্রতিটি পদে পদে বহিঃশক্তি দ্বারা শোষিত হয়েছে। যার কারণে তারা অধিক সম্পদশালী ও জ্ঞানী হওয়া সত্ত্বেও শোষিত হওয়াও বারবার উপনিবেশিক শক্তির সাথে আন্দোলন করার কারণে আমরা আর নিজেদের উন্নয়ন ঘটাতে পারিনি। আমাদের আরো উন্নয়ন না হওয়ার কারণ আমরা যখন পাকিস্তানী শাসক গোষ্ঠীর কাছ থেকে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা লাভ করেছিলাম তখন বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল উন্নয়নের মাধমে দেশকে সোনার বাংলা গড়ার। তিনি যখন যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশকে উন্নত দেশের মতো প্রশাসন, বিভিন্ন সরকারী বিভাগ সম্প্রসারণ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, বাংলা একাডেমীসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে দেশের মানুষকে সর্বোচ্চ সেবা প্রদানের স্বপ্ন দেখছিলেন ঠিক তখনই এদেশের কিছু কুলাঙ্গার আমাদের স্বাধীনতা বিরোধী শত্রুর সাথে আঁতাত করে জাতির জনককে স্বপরিবারে হত্যার মাধ্যমে এদেশের উন্নয়নকে থামিয়ে দিয়েছিল। এরপর কোন উন্নয়ন তো হয়ইনি বরং এদেশে শাসনের নামে স্বাধীনতা বিরোধী বিভিন্ন শক্তি ক্ষমতায় এসে দেশকে শোষনের আর সন্ত্রাসীদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত করে। তাদের শোষন থেকে মুক্তি পেয়ে ২০০৮ সালে এদেশের স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি বঙ্গবন্ধু কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী দেশের শাসনভার গ্রহণ করেই ভবিষ্যত পরিকল্পনা গ্রহণের মাধ্যমে দেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশে রুপান্তর করার ঘোষণা দেন। তখন ডিজিটাল বাংলাদেশের উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা দেখে অনেকে হাসি-ঠাট্টা করেছিল। কিন্তু তাদের সেই হাসি-ঠাট্টাকে ম্লান করে দিয়ে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী দেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপান্তরের কাজ প্রায় শেষ করে এনেছেন। এখন সারা বিশ্বের কাছে ডিজিটাল বাংলাদেশ স্বপ্ন নয় বরং বাস্তব। আমরা বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে ২০২১ সালে দেশের পঞ্চাশ বছরের রজত জয়ন্তিতে প্রত্যেক মানুষের দোরগোড়ায় ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে সকল সুবিধা পৌঁছে দিতে বদ্ধপরিকর। তিনি সকলকে ডিজিটাল উদ্ভাবনী প্রযুক্তি ব্যবহারে নিজেদের দক্ষ করে তোলার আহবান জানান। যাতে আমরা সকলে সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে ২০২১ সালের মধ্যে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হসিনার ডিজিটাল মধ্যম আয়ের বাংলাদেশ ও ২০৪১ সালের মাধ্যে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের বিশ্বের বুকে উন্নত সোনার বাংলাদেশ হিসেবে নিজেদের আত্মপ্রকাশ ঘটাতে পারি।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক কবির বিন আনোয়ার রাজবাড়ী মতো ছোট জেলায় এতো সুন্দর ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলা আয়োজনের জন্য জেলা প্রশাসনসহ অংশগ্রহণকারী সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে ভবিষ্যতে যাতে এই ধরণের কার্যক্রম অব্যাহত থাকে সে বিষয়ের উপর গুরুত্বারোপ করেন। এছাড়াও তিনি ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলা উপলক্ষে দৈনিক মাতৃকন্ঠে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশের জন্য জেলা প্রশাসক ও পত্রিকার প্রশংসা করেন।
সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক জিনাত আরা ডিজিটাল মেলায় অংশগ্রহণকারী সকলকে মেলা সুন্দরভাবে সমাপ্ত করার জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানান।
এ ছাড়াও তিনি মেলার মিডিয়া পার্টনার হিসেবে দৈনিক মাতৃকন্ঠে মেলা সম্পর্কিত প্রচারনাসহ বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন সম্প্রতি অনুষ্ঠিত উন্নয়ন মেলায়ও মিডিয়া পার্টনার হিসেবে দৈনিক মাতৃকন্ঠ বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশসহ ব্যাপক প্রচারণায় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছিল।
জেলা প্রশাসক জিনাত আরা ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলার মাধ্যমে জেলার সকল বিভাগ তাদের ডিজিটাল কার্যক্রমে আরো অগ্রগতি সাধনকল্পে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে সে বিষয়ের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
বক্তব্য পর্ব শেষে মেলার বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষর্থীদের মধ্যে বিজয়ীসহ শ্রেষ্ঠ ডিজিটাল তথ্য সম্বলিত স্টল হিসেবে জেলা নির্বাচন অফিসকে পুরস্কার প্রদান করা হয়।
এ ছাড়াও মেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে শ্রেষ্ঠ তরুণ উদ্ভাবক হিসেবে টিম ডড়ৎশরহমউধঃধ কে শুভেচ্ছা স্মারক প্রদান করা হয়। টিমের ৩সদস্য সাফিক মাহমুদ রেশাদ, মেহেদী হাসান ও ফারজানা আহমেদের প্রজেক্টটি ছিল প্রতিবন্ধী সহায়ক রোবট।
মেলায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(শিক্ষা ও আইসিটি) মোঃ মানোয়ার হোসেন মোল্লার কথা ও সুরে জেলার থিম সং(জেলার ব্যান্ড লোগো পদ্মা কন্যা নিয়ে রচিত গান) অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি, সভাপতি ও বিশেষ অতিথিসহ সকলে সম্মিলিতভাবে পরিবেশন করেন। পরে নয়নাভিরাম আতশবাজী প্রদর্শনীর মাধ্যমে মেলা সমাপ্ত হয়।
এছাড়াও গতকাল শনিবার সমাপনী দিনে সকালে জেলা প্রশাসন ও মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের আয়োজনে মাদক বিরোধী গণসচেতনতামূলক সাইকেল শোভাযাত্রা বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ খুশি রেলওয়ে ময়দান থেকে উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক জিনাত আরা।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(শিক্ষা ও আইসিটি) মানোয়ার হোসেন মোল্লা ও জেলা শিক্ষা অফিসার সৈয়দ সিদ্দিকুর রহমানসহ জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনারগণ ও বিভিন্ন স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা সাইকেল শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করেন। শোভাযাত্রাটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে কালেক্টরেটের আম্রকানন চত্ত্বরে এসে শেষ হয়।
উল্লেখ্য, গত ১৯শে জানুয়ারী বিকেলে ৩দিনব্যাপী ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলা শুরু হয়েছিল।

নিউজটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো খবর
error: আপনি নিউজ চুরি করছেন, চুরি করতে পারবেন না !!!!!!