॥কাজী তানভীর মাহমুদ॥ দরিদ্র পরিবারের সন্তান হওয়ায় অর্জন করা হয়নি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা। তবে অভাব-অনটনের মাঝে নানা ঘাত-প্রতিঘাতে জীবন যুদ্ধে বিজয়ী হওয়ার প্রবল ইচ্ছে ছিলো। স্বল্প শিক্ষিত বলে জোটেনি কোন চাকরী। তাই বলে জীবনতো আর থেমে থাকবে না। নিজের পায়ে দাঁড়াতে শুরু হলো টার্কি পালন। নিজের পৈত্রিক ভিটায় টার্কি পালন শুরুর বছর খানেক পর থেকেই আসতে শুরু করলো সফলতা। টার্কি পালন করে আজ সে স্বাবলম্বী। সততা আর নিরলস পরিশ্রম দিয়ে ঘুরিয়েছে নিজের ভাগ্যের চাকা। একই সাথে বদলে দিয়েছে স্থানীয় কয়েকজন বেকারের ভাগ্য।
ভাগ্য বদলের এই বাস্তব চিত্রটি রাজবাড়ী জেলার পাংশা উপজেলার সরিষা ইউনিয়নের বৃত্তিডাঙ্গা গ্রামের রোস্তম আলীর ছেলে সোহরাব হোসেনের(৩৭)। সোহরাব হোসেন ১০ শতাংশ জমিতে গড়ে তুলেছেন তার টার্কির খামার। খামারে ছোট-বড় মিলিয়ে ২শতাধিক টার্কি পালন করছেন। খামারে ১দিন বয়সের বাচ্চা থেকে প্রাপ্ত বয়স্ক টার্কি রয়েছে, যেগুলোর প্রতিটির ওজন প্রায় ১২ কেজি উপরে।
আলাপকালে সোহরাব হোসেন বলেন, বছর খানেক আগে নরসিংদী জেলা থেকে ২২দিন বয়সের ২৮৩টি টার্কির বাচ্চা কিনে এনে নিজের পৈত্রিক ১০ শতাংশ জমির উপরে খামার শুরু করি। ৬মাস পর থেকে টার্কিগুলো ডিম দেয়। ডিম ফুটিয়ে বাচ্চা উৎপাদন করি। তারপর থেকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। বর্তমানে ১ দিনের বাচ্চা ২৫০ টাকা, ৮ দিনের বাচ্চা ৩০০ টাকা, ১৫ দিন থেকে ১ মাস বয়সী বাচ্চা ৫০০ টাকা, ২ মাস বয়সী বাচ্চা ১ হাজার টাকা, ডিম প্রতি পিচ ১শ টাকা ও প্রতি কেজি মাংস ৫শ টাকা করে বিক্রি করছি। রাজবাড়ীর বিভিন্ন উপজেলাসহ পার্শ্ববর্তী ফরিদপুর, মাগুরা, যশোর, কুষ্টিয়া জেলা থেকে আগ্রহীরা বাচ্চা কিনে নিয়ে যাচ্ছে। প্রতি মাসে খামারের বাচ্চা ও বড় টার্কি বিক্রি হয় প্রায় দেড় লক্ষ টাকার। খাবার ও শ্রমিক খরচ বাদে মাসে ৫০ থেকে ৭০ হাজার টাকার মত আয় হয়।
কালুখালী উপজেলার মৃগী থেকে টার্কির বাচ্চা কিনতে আসা সোহেল খান বলেন, ইন্টারনেটে টার্কি পালন দেখে আগ্রহী হয়েছি। এখন এসেছি টার্কির বাচ্চা কিনতে।
পাংশা উপজেলার কলিমহর ইউনিয়নের হাটবনগ্রামের মকিদুল ইসলাম বলেন, আমি টার্কির ডিম কিনতে এসেছি। ডিম থেকে বাচ্চা উৎপাদন করে টার্কি পালন করবো।
পাংশা থেকে আসা আরেক টার্কি পালনকারী সাবু বলেন, সোহরাব ভাইকে দেখে আগ্রহী হয়ে নিজের বসতবাড়ীতে ৫০টি টার্কি পালন করছি। টার্কি পালন খুব লাভজনক।
জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা মোঃ আবু বকর সিদ্দিক বলেন, টার্কি পালন এখন একটি লাভজনক ব্যবসা। সোহরাব হোসেনের টার্কি খামারটি আমি পরিদর্শন করেছি। সে একজন সফল টার্কি খামারী। প্রতিদিনই রাজবাড়ীর বিভিন্ন এলাকা থেকে টার্কি পালন বিষয়ে জানতে খামারীরা আসছে। অনেক বেকার যুবক টার্কি পালন করে স্বাবলম্বী হয়েছে। টার্কি মুরগি পালনে জেলা প্রাণী সম্পদ দপ্তর থেকে খামারীদের বিভিন্ন পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে।