শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ১২:৪৬ অপরাহ্ন
Logo
সংবাদ শিরোনাম ::
বিশ্বব্যাপী ওমিক্রন সংক্রমণ বৃদ্ধিতে আইসোলেশন মেয়াদ অর্ধেক করার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ওমিক্রন ভেরিয়েন্ট ডেল্টা ও বিটার তুলনায় তিন গুণের বেশী পুনঃ সংক্রমন ঘটাতে পারে : গবেষণা প্রতিবেদন জাতিসংঘ ভবনের বাইরে এক বন্দুকধারী গ্রেফতার শান্তি চুক্তির পঞ্চম বার্ষিকী উপলক্ষে কলম্বিয়া সফর জাতিসংঘ মহাসচিব সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানগণের সাক্ষাৎ করোনা ভাইরাসের সংক্রমন বেড়ে যাওয়ায় অস্ট্রিয়ায় লকডাউন করোনা সংক্রমণ বাড়ায় ইউরোপের বিভিন্ন দেশে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ ভারতে নতুন করে ১০ হাজার ৩০২ জন করোনায় আক্রান্ত নভেম্বর মাসজুড়ে করাঞ্চলে কর মেলার সেবা পাবেন করদাতারা ঔপনিবেশিক আমলের ফৌজদারী কার্যবিধি যুগোপযোগী হচ্ছে

পাংশা উপজেলার হাবাসপুর কে.রাজ উচ্চ বিদ্যালয়ের শতবর্ষ পূর্তি উৎসবেব উদ্বোধন

  • আপডেট সময় শনিবার, ২১ জানুয়ারী, ২০১৭

॥মোক্তার হোসেন॥ স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন,এমপি বলেছেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ আজ উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিনক্ষণ নির্ধারন করে জাতির উন্নয়নে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ২০২১ সালের মধ্যে দেশ মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে গড়ে উঠবে। দেশে ক্ষুধা-দারিদ্রতা থাকবে না। ২০৪১ সালের মধ্যে দেশ উন্নত দেশে পরিণত হবে। লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করে যে ভাবে দেশের উন্নয়ন অব্যাহত রয়েছে তাতে আগামী ২বছরের মধ্যে দেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে।
গতকাল ২০শে জানুয়ারী দুপুরে রাজবাড়ী জেলার পাংশা উপজেলার হাবাসপুর ইউপির হাবাসপুর কে.রাজ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে বিদ্যালয়ের শতবর্ষ পূর্তি উৎসব উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
এলজিআরডি মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষা বান্ধব প্রধানমন্ত্রী। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত বিনা বেতনে শিক্ষার ব্যবস্থা করেছেন। স্বাক্ষরতার হার ১০০% -এ পৌঁছে যাবে। ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর হার কমাতে হবে। এ লক্ষ্যে প্রতিটি স্কুলে মিড’ডে মিলের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। অধিক জনসংখ্যাকে শিক্ষার মাধ্যমে জনসম্পদে পরিণত করা হবে। শিক্ষাই উন্নয়নের প্রধান হাতিয়ার। দক্ষ মানব সম্পদ গড়ে তুলতে জগতে শিক্ষার বিকল্প নাই। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ গ্রামীণ জনপদে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে ভূমিকা রাখছে।
তিনি আরো বলেন, স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করণের লক্ষ্যে গত ২৮শে ডিসেম্বর ১৩১ বছরের ইতিহাসে ১ম বারের মতো জেলা পরিষদের নির্বাচন হয়েছে। পর্যায়ক্রমে জেলা পরিষদ হবে উন্নয়নের কেন্দ্র বিন্দু। শেখ হাসিনাই একমাত্র রাষ্ট্রনায়ক যিনি ২০২১ সালের মধ্যে ক্ষুধামুক্ত দেশ গঠন করবেন। আগামীবার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে প্রত্যেকটি বিদ্যালয় জাতীয়করণ করা হবে। বাংলাদেশে ভূমিহীন, ক্ষুধার্ত লোক থাকবে না। ২০৪১ সালের মধ্যে আমরা উন্নত দেশে পরিণত হব। এখনকার মাথাপিছু আয় ১৪৬৬ ডলার থেকে ৬৫৫৪ ডলার হবে। সার্বিক উন্নয়নে গ্রামের লোককে শহরে না এনে শহরকে গ্রামে নিয়ে যাব। বিদ্যুতের উন্নয়নে ১৩বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ হয়েছে। বিদ্যুতায়নের ফলে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ সকল ক্ষেত্রে অগ্রগতি দ্রুত এগিয়ে যাবে।
এলজিআরডি মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন, হাবাসপুর কে.রাজ উচ্চ বিদ্যালয়ের উন্নয়নে ৫শত আসন বিশিষ্ট কমিউনিটি সেন্টার নির্মানের ঘোষণা দিয়ে বলেন, এটি প্রশাসনিক রুম, অফিস রুম ও ক্লাসরুম হিসেবে ব্যবহার করা যাবে।
হাবাসপুর কে. রাজ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন কৃতি ছাত্র ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য্য প্রফেসর ড.কে.এম মোহসীনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে হাবাসপুর কে.রাজ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন কতি ছাত্র, সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আবু হেনা এবং রাজবাড়ী-২ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ জিল্লল হাকিম বক্তব্য রাখেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আবু হেনা বলেন, ছাত্র-ছাত্রীদের মনের মধ্যে আলো জ্বালাতে হবে। আগেকার দিনে ভালো শিক্ষক ছিলো তাই শিক্ষার মান ছিলো। আজকে অনেকেই জিপিএ-৫ পায় কিন্তু শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন আছে। আলোকিত মানুষ হওয়ার জন্য ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতি আহবান জানান তিনি।
বিশেষ অতিথি রাজবাড়ী-২ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ জিল্লুল হাকিম বলেন, মাত্র ৪দিন আগে মাননীয় মন্ত্রীকে এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে আমন্ত্রন জানানো হয়। সাদরে আমন্ত্রন গ্রহন করায় মাননীয় মন্ত্রীকে ধন্যবাদ ও অভিনন্দন।
এমপি মোঃ জিল্লুল হাকিম হাবাসপুর কে. রাজ উচ্চ বিদ্যালয়ের উন্নয়নে ইতিপূর্বে ৮৭ লাখ টাকা বরাদ্দ প্রদানের কথা উল্লেখ করেন এবং বিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নয়নে সহযোগিতা প্রদানের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নির্মল কুমার সাহা।
অনুষ্ঠানে রাজবাড়ী জেলা প্রশাসক জিনাত আরা, ফরিদপুর জেলা প্রশাসক উম্মে সালমা তানজিয়া, রাজবাড়ী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফকীর আব্দুল জব্বার, ফরিদপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ লোকমান হোসেন মৃধা, রাজবাড়ীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(সদর সার্কেল) মোঃ আজাদ রহমান, পাংশা উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোঃ ফরিদ হাসান ওদুদ, পাংশা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম নজরুল, পাংশা থানার ওসি এস.এম শাহজালাল, এসিল্যান্ড মোঃ রাশেদুর রহমান, রাজবাড়ী-২ আসনের প্রাক্তন জাতীয় সংসদ সদস্য মোঃ আব্দুল মতিন মিয়া, ড.এম.এ মাজেদ, পাংশা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পাংশা সরকারী কলেজের উপাধ্যক্ষ একেএম শফিকুল মোরশেদ আরুজ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পাংশা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ হাসান আলী বিশ্বাস, বাহাদুরপুর ইউপি চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবীর শাকিল, হাবাসপুর ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুল আলীম মন্ডল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, কাশিম বাজার এস্টেটের প্রজাহিতৈশী জমিদার মহারাজা মণীন্দ্র চন্দ্র নন্দী হাবাসপুরে জমিদারী পরিদর্শনে এলে এলাকাবাসীর অনুরোধে উচ্চশিক্ষা বিস্তারের লক্ষ্যে মহারাজা ১৯১৮ সনে বিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। তাঁরই এস্টেটের নামানুসারে স্কুলটির নামকরণ করা হয় হাবাসপুর কাশিম বাজার রাজ উচ্চ বিদ্যালয়। শিক্ষা-দীক্ষায় অনুন্নত জনগণের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে একজন উচ্চ শিক্ষিত ব্যক্তি (কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এম.এ ডিগ্রীপ্রাপ্ত) ভোলানাথ সাহা প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বভার গ্রহণ করায় মহারাজা খুবই আশান্বিত হন এবং স্কুলের সব ধরণের সাহায্য-সহযোগিতার জন্য প্রতিশ্রুতি প্রদান করেন। ব্যক্তিগত লোভ-লালসা পরিত্যাগ করে প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক ভোলানাথ সাহা এলাকার নিবেদিতপ্রাণ জনগণের সহযোগিতায় বিদ্যালয়টিকে জেলার অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিদ্যালয়ে পরিণত করেন। যে এলাকায় ১০০ বছর আগে চিঠি পড়ার লোক পাওয়া দুরুহ ছিল, সেখানে বিদ্যালয়টি সৃষ্টি করেছে সচিব, ডাক্তার, প্রকৌশলী, অধ্যাপক, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ অনেক আলোকিত মানুষ। সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার আবু হেনা, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের প্রাক্তন সদস্য ও বর্তমানে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য প্রফেসর ড. কে.এম মোহসীন, আণবিক শক্তি কমিশনের সাবেক পরিচালক ড. মোঃ সানাউল্লাহ, সাবেক সচিব মোঃ হাবিবুর রহমান, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক মহাপরিচালক ড. এম.এ মাজেদসহ আরও অনেকেই এ বিদ্যালয়ের কৃিত ছাত্র। এ বিদ্যালয়ের অনেক ছাত্র ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন, তাদের মধ্যে ৬জন শহীদ হন। তাদের ভূমিকা বিদ্যালয়কে গৌরবান্বিত করেছে। এই বিদ্যালয়েরই প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী মিলে এলাকায় প্রথিতযশা সাহিত্যিক ও বিজ্ঞানী ড. কাজী মোতাহার হোসেনের নামে একটি ডিগ্রী কলেজ গড়ে তুলেছে।
হাবাসপুর কে.রাজ উচ্চ বিদ্যালয়ের শতবর্ষ পূর্তি উৎসব উপলক্ষে দুইদিন ব্যাপী জাক জমকপূর্ণ কর্মসূচী ঘিরে এলাকায় উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে। উৎসবকে ঘিরে হাবাসপুরে প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রীদের মিলন মেলা বসেছে। সন্ধ্যায় মনোজ্ঞ সাস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। আজ ২১শে জানুয়ারী দু’দিন ব্যাপী কর্মসূচীর সমাপ্ত হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো খবর
error: আপনি নিউজ চুরি করছেন, চুরি করতে পারবেন না !!!!!!