শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০১:৪৪ অপরাহ্ন
Logo
সংবাদ শিরোনাম ::
বিশ্বব্যাপী ওমিক্রন সংক্রমণ বৃদ্ধিতে আইসোলেশন মেয়াদ অর্ধেক করার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ওমিক্রন ভেরিয়েন্ট ডেল্টা ও বিটার তুলনায় তিন গুণের বেশী পুনঃ সংক্রমন ঘটাতে পারে : গবেষণা প্রতিবেদন জাতিসংঘ ভবনের বাইরে এক বন্দুকধারী গ্রেফতার শান্তি চুক্তির পঞ্চম বার্ষিকী উপলক্ষে কলম্বিয়া সফর জাতিসংঘ মহাসচিব সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানগণের সাক্ষাৎ করোনা ভাইরাসের সংক্রমন বেড়ে যাওয়ায় অস্ট্রিয়ায় লকডাউন করোনা সংক্রমণ বাড়ায় ইউরোপের বিভিন্ন দেশে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ ভারতে নতুন করে ১০ হাজার ৩০২ জন করোনায় আক্রান্ত নভেম্বর মাসজুড়ে করাঞ্চলে কর মেলার সেবা পাবেন করদাতারা ঔপনিবেশিক আমলের ফৌজদারী কার্যবিধি যুগোপযোগী হচ্ছে

ভোট চাইতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মানুষের দ্বারে দ্বারে যেতে বললেন প্রধানমন্ত্রী

  • আপডেট সময় রবিবার, ৮ জুলাই, ২০১৮

॥স্টাফ রিপোর্টার॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের আগামী সাধারণ নির্বাচনের জন্য ভোট চাইতে এখন থেকেই মানুষের দ্বারে দ্বারে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগই দেশের একমাত্র রাজনীতিক দল যাঁরা দেশের মানুষের কথা চিন্তা করে তাদের কল্যাণের জন্য কাজ করে। মানুষ কিন্তু ভুলে যায় এজন্য আমাদের উন্নয়ন দেশের মানুষের কাছে তুলে ধরতে হবে, তাদের বোঝাতে হবে, তাদের কাছে বারবার যেতে হবে। প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা শনিবার গণভবনে আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভার তৃতীয় পর্যায়ে প্রদত্ত ভাষণে এসব কথা বলেন। সভায় আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের স্বাগত বক্তৃতা করেন। দলের দপ্তর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ শোক প্রস্তাব পাঠ করেন। দলের প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ এবং উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন,‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেই দেশের মানুষের উন্নতি হয়। গ্রামের অর্থনীতি আজ উন্নত হয়েছে এবং জনগণের আয় বাড়ায় তারা সুখে স্বাচ্ছন্দ্যে থাকতে পারছে, ডিজিটাল বাংলাদেশের সুফল ভোগ করতে পারছে-এ কথাগুলো সবাইকে বলতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ ব্যতীত কোনো রাজনীতিক দলই দেশের দরিদ্র মেহেনতি জনগণের জন্য কিছু করেনি। দেশের মানুষের দোড়গোঁড়ায় স্বাস্থ্যসেবাকে নিয়ে যাওয়ায় তাঁর সরকারের উদ্যোগ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটা মানুষও আর ক্ষুধায় কষ্ট পাবে না, একটা মানুষও আর গৃহহীন থাকবে না, সবাই প্রয়োজনীয় শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যসেবা পাবে।

শেখ হাসিনা বলেন, জনগণের কাছে গিয়ে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ভোট চাইতে হবে। যাতে তারা অতীতের মতো আবারও আওয়ামী লীগকে ভোট দেয়। দল এবং সহযোগী সংগঠনের অভ্যন্তরীণ মতভেদ এবং দ্বন্দ্ব এখনই মিটিয়ে ফেলার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আপনাদের মনে রাখতে হবে আগামীর নির্বাচন অতীতের যেকোনো সময়ের চাইতেই কঠিন হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোনো আসন নিয়ে অমনোযোগী হওয়ার সুযোগ নেই, কোনো আসন নিয়ে অমনোযোগী হওয়ার মানেই হবে সে আসনে পরাজয়, যার কারণে আমাদের সরকার গঠনের সুযোগ ব্যর্থ হয়ে যেতে পারে। তাঁর সরকারের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের উদ্যোগ টেনে এনে এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, মনে রাখবেন, আওয়ামী লীগ যদি আবার ক্ষমতায় আসতে না পারে তা হলে এই বিচার বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তিনি বলেন, তারা (বিএনপি-জামায়াত) আবার মানুষের ওপর, তাদের জানমালের ওপর আক্রমণ শুরু করে দেবে, দারিদ্র্য বাড়িয়ে শিক্ষার হার কমিয়ে ফেলবে, সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের কর্মসূচি, উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সব বন্ধ করে দেবে, অতীতে যেমনটি করেছিল। সরকারপ্রধান বলেন, কাজেই আপনাদের শুধু আওয়ামী লীগকেই নয়, এর সহযোগী সংগঠনগুলোকেও শক্তিশালী করে তুলতে হবে। এসময় কারাবন্দি খালেদা জিয়া অসুস্থতার ‘ভান’ করছেন বলে সন্দেহ প্রকাশ করেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, তার (খালেদার) দুর্নীতির কাহিনি আছে। অসুস্থতার ভান করে কোর্টে হাজিরা দেয় না। হাজিরা দিলেই ধরা খাবে। সেজন্যই হাজিরা দেয় না; এটা হলে বাস্তবতা। জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় দন্ড নিয়ে বন্দি বিএনপি চেয়ারপারসনের জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলার শুনানিতে অনুপস্থিতিকে কেন্দ্র করে একথা বলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী। গত ১৩ মার্চ দাতব্য ট্রাস্ট মামলার অন্যতম আসামি জিয়াউল ইসলাম মুন্নার পক্ষে আংশিক যুক্তিতর্ক হয়। এরপর বিচারক কয়েকটি তারিখ রাখলেও কোনোদিনই খালেদা জিয়াকে হাজির করা হয়নি। তারিখ নির্ধারণ হলেই খালোদার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই) এজেন্টরা বাংলাদেশে আসবেন বলে প্রধানমন্ত্রী জানান। জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছরের সাজার রায়ের পর গত ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে খালেদা কারাবন্দি; তাকে রাখা হয়েছে পুরানো ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোডের পুরোনো কারাগারে। ৭৩ বছর বয়সী খালেদা গুরুতর অসুস্থ বলে তার ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা দেখে এসে দাবি করেছেন। তারা তাকে বেসরকারি ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তির সুপারিশ করেছেন। এরপর কারা কর্তৃপক্ষ তাকে সরকারি হাসপাতাল বিএসএমএমইউ কিংবা সিএমএইচে নিতে চাইলেও তিনি সেখানে যেতে রাজি হননি। বিএনপি নেতারা দাবি করছেন, চিকিৎসা না দিয়ে তাদের নেত্রীকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে সরকার।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ হলে হাসপাতালেই যেতেন, কোনো হাসপাতাল, তা দেখতেন না। শেখ হাসিনা বলেন, অসুখ তো তার আছেই। হার্টের অপারেশন করে আসছে, অনেককিছু করে আসছে। ক্ষমতায় থাকতে আমেরিকায় গিয়ে চিকিৎসা করে আসছে, সৌদিতে চিকিৎসা আমরা দেখেছি। ২০০১ সালে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলেন। এছাড়াও সৌদি আরবে হাঁটুর চিকিৎসা করান তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, কিন্তু, কোর্টে হাজিরা দিতে পারবে না, এমন তো অবস্থা না। কিন্তু, সেটা করছে। কেন? কারণ, আমেরিকার এফবিআইয়ের লোকেরা বসে আছে সাক্ষী দেবার জন্য। সে যে দুর্নীতি করেছে, সে সাক্ষী দেওয়ার জন্য বসে আছে। তারিখ পেলেই তারা চলে আসে। বিএনপি অভিযোগ করে আসছে, রাজনীতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলায় দন্ড দিয়ে তাদের নেত্রীকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, শাস্তি হয়েছে, জেলে গেছে। এখানে তো আমাদের কোনো দায় নাই। ১০ বছর ধরে মামলা চলেছে। বিএনপির যাঁরা আইনজীবী.. এত জাঁদরেল-জাদঁরেল আইনজীবী, তারা কী করল? তারা তো ব্যর্থ হয়েছে; এটা প্রমাণ করতে যে, খালেদা জিয়া দুর্নীতি করে নাই। এভাবে কেউ এতিমের টাকা চুরি করে খেতে পারে? এটা কেউ পারে না। অথচ এতিমখানার জন্য টাকা এনে, সেই টাকা কীভাবে নয়-ছয় করেছে; আপনারা সেটা দেখেছেন। একটা এতিমকে একটা টাকা দিতে পারল না। বর্ধিত সভায় উপস্থিত আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ায় বিশ্ব সমর্থন অর্জন করেছি। এই সমর্থন নিয়েই এগিয়ে যেতে হবে। বছর শেষে নির্বাচনের জন্য দলের ভেতরে বিভেদ ভুলে সবাইকে প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান জানান আওয়ামী লীগ সভানেত্রী। সংগঠনের দ্বন্দ্ব ভুলে যেতে হবে। সামনে নির্বাচন অনেক কঠিন হবে। আগামি নির্বাচনে সবাইকে প্রস্তুত হতে হবে। রাজনৈতিক জোট অটুট রাখার উপর জোর দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা জোট করেছিলাম, অবশ্যই আমাদের জোট বজায় রাখতে হবে। যেন সবাই আমাদের বিরুদ্ধে চলে না যায়, সেজন্য। সংসদ নির্বাচনে দল থেকে যাদের মনোনয়ন দেওয়া হবে, তাদের পক্ষে সবাইকে কাজ করার নির্দেশ দেন তিনি। নমিনেশন দেওয়ার সময় আমরা তৃণমূলের সাথে কথা বলি। ইতোমধ্যে তিনদফা সার্ভে আমাদের হয়ে গেছে। এই সার্ভে করে আমরা যাকে নমিনেশন দেব, যাকেই নমিনেশন দেব, তার পক্ষে সকলকে একযোগে কাজ করতে হবে। যেন নৌকা কোনোভাবেই না হারে। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার কারণে ‘অধিক আত্মবিশ্বাসী’ না হতেও দলের নেতা-কর্মীদের সতর্ক করেন শেখ হাসিনা। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকলে একটা ভাব হয়ে যায়; সব সিটে তো আমরা জিতব। ওই একটা সিটে না জিতলে কী হবে? মনে রাখতে হবে; একটা সিট হারালে আমরা সরকার গঠন করতে পারব না। এই কথা মনে রেখে সকলকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে কাজ করতে হবে। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

নিউজটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো খবর
error: আপনি নিউজ চুরি করছেন, চুরি করতে পারবেন না !!!!!!