॥স্পোর্টস ডেস্ক॥ ঝরে পড়া বড় দলগুলোর তালিকায় যোগ হলো না ব্রাজিলের নাম। দলের প্রাণভোমরা নেইমারের নৈপুণ্যে মেক্সিকোকে হারিয়ে রাশিয়া বিশ্বকাপের কোয়ার্টার-ফাইনালে উঠে গেছে পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা।জার্মানিকে ছাড়িয়ে বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ গোল ব্রাজিলের সামারায় সোমবার অনেক সুযোগ তৈরি করে ২-০ গোলে জিতেছে তিতের দল। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে দলকে এগিয়ে দেওয়া নেইমারই ম্যাচের শেষ দিকে রবের্তো ফিরমিনোর গোলটি বানিয়ে দেন। ব্যবধান আরও বাড়েনি গোলরক্ষক গিলের্মো ওচোয়ার নৈপুণ্যে। অন্যপ্রান্তে ব্রাজিলের গোল পোস্টে বেগই পেতে হয়নি আলিসনকে। ম্যাচের আগের দিন কোচ তিতে জানিয়েছিলেন সেরা ছন্দে ফিরেছেন নেইমার। প্রমাণ পাওয়া গেল এই ম্যাচেই। পুরো ম্যাচে খেলেছেন মেক্সিকোর রক্ষণ নিয়ে। কখনও পায়ের কারিকুরি, কখনও গতিতে ভুগিয়েছেন। ম্যাচ জুড়ে ক্রমাগত প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়দের ফাউলের শিকার হয়েছেন। রেফারির সহানুভূতি পাওয়ার জন্য অতিঅভিনয়ও তার নৈপুণ্যকে ম্লান করতে পারবে না।
সামারা অ্যারেনায় ম্যাচের শুরুর দিকে নেইমার জোরালো শটে গোলরক্ষক গিলের্মো ওচোয়ার পরীক্ষা নিয়েছিলেন। এরপর থেকে আক্রমণ আর দ্রুত প্রতিআক্রমণে ব্রাজিলের রক্ষণভাগকে ব্যতিব্যস্ত রাখে মেক্সিকো। তবে গোল লক্ষ্য করে শটগুলো সফলতার সঙ্গেই ঠেকান ফিলিপে লুইস, মিরান্দারা। বেগ পেতে হয়নি আলিসনকে। ২৫তম মিনিটে পায়ের কারিকুরিকে ডিফেন্ডারদের কাটিয়ে খুব কাছ শট নিয়েছিলেন নেইমার। কিন্তু তৎপর ওচোয়া হাত লাগিয়ে সেই চেষ্টা ব্যর্থ করে দেন। এরপর থেকে যেন খেলায় ফেরে ব্রাজিল। ৩২তম মিনিটে আবারও ডিফেন্ডারদের ছিটকে ডি-বক্সে ঢুকে শট নিয়েছিলেন নেইমার। কিন্তু এবারও ওচোয়াকে ফাঁকি দেওয়া যায়নি। দ্বিতীয়ার্ধের তৃতীয় মিনিটে আবারও মেক্সিকোর রক্ষাকর্তা ওচোয়া। এবার ঠেকান ডি-বক্সের ভেতর থেকে ফিলিপে কৌতিনিয়োর নেওয়া জোরালো শট। অবশেষে ৫১তম মিনিটে নেইমারের পা থেকেই আসে কাঙ্ক্ষিত গোল। শুরুটাও পিএসজির তারকা এই ফরোয়ার্ডের। ডি-বক্সের ঠিক বাইরে তার বুদ্ধিদীপ্ত ব্যাক হিলে বল পেয়ে সামনে এগিয়ে বাঁ দিক থেকে নিচু ক্রস বাড়ান উইলিয়ান। বল গোলরক্ষকের বাড়ানো হাত আর গাব্রিয়েল জেসুসের পা ফাঁকি দিলেও নেইমার বুটের তলা দিয়ে জালে পাঠান। বিশ্বকাপে ব্রাজিলের এটি ২২৭তম গোল। মোট গোলে জার্মানিকে টপকে এককভাবে শীর্ষে উঠল সবশেষ ২০০২ সালে বিশ্বকাপ জেতা দলটি। আট মিনিট পর ব্যবধান বাড়ানোর সুবর্ণ সুযোগ নষ্ট করেন পাওলিনিয়ো। ডি-বক্সের ভেতর থেকে বার্সেলোনার মিডফিল্ডারের জোরালো শট ওচোয়া বরাবর যায়। ৬১তম মিনিটে কার্লোস ভেলার দূরপাল্লার শট আস্থার সঙ্গেই ফেরান আলিসন। দুই মিনিট পর আবারও ওচোয়া মেক্সিকোকে ম্যাচে রাখেন উইলিয়ানের জোরালো শট কর্নারের বিনিময়ে ঠেকিয়ে। ৬৮তম মিনিটে পাল্টা আক্রমণে আবারও মেক্সিকোর রক্ষণে আতঙ্ক ছড়ান উইলিয়ান। দুর্দান্ত গতিতে বাঁ দিক দিয়ে এগিয়ে ক্রস বাড়িয়েছিলেন। নেইমারের শট এক ডিফেন্ডারে পায়ে লেগে পোস্টের সামান্য বাইরে দিয়ে যায়। নেইমারের সহায়তায় ব্যবধান বাড়ে নির্ধারিত সময়ের দুই মিনিট আগে। ফের্নান্দিনিয়োর বাড়ানো বল ধরে দৌড়ে বাঁ দিক থেকে ডি-বক্সে ঢুকে বুটের টোকায় বল বাড়ান গোলমুখে। একটু আগেই বদলি হিসেবে নামা ফিরমিনোর কেবল টোকা দিয়ে বলটা জালে পাঠাতে হয়। মেক্সিকোর কাছেই হারা বর্তমান চ্যাম্পিয়ন জার্মানি বাদ পড়েছিল গ্রুপ পর্ব থেকে। শেষ ষোলো থেকে বিদায় নেয় আর্জেন্টিনা, স্পেন ও পর্তুগাল। আর কোনো চমক উপহার দিল না ফেভারিটের তকমা বয়ে চলা ব্রাজিল। দারুণ এই জয়ে একটাই কেবল আক্ষেপ ব্রাজিলের; হলুদ কার্ড দেখায় শেষ আটে খেলতে পারবেন না মিডফিল্ডার কাসেমিরো। তিতের অধীনে এই নিয়ে ২৫ ম্যাচের ২০টিতে জিতল ব্রাজিল। সুইজারল্যান্ডের সঙ্গে ড্রয়ে টুর্নামেন্ট শুরু করার পর জিতল টানা তিন ম্যাচ। ১৯৯০ সালের পর থেকে এখন পর্যন্ত হওয়া সাত বিশ্বকাপের সবকটিতে অন্তত কোয়ার্টার-ফাইনালের ওঠার ধারাবাহিকতা ধরে রাখল ব্রাজিল। এর মধ্যে দুটিতে (১৯৯৪ ও ২০০২) চ্যাম্পিয়ন হয়েছে তারা।
অন্যদিকে, আরও একবার শেষ ষোলো থেকে ছিটকে পড়ার হতাশা যোগ হলো মেক্সিকো শিবিরে। ১৯৯০ আসরের পর থেকে সবকটি বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্ব পার হয়ে একবারও পারল না শেষ আটে উঠতে।