॥স্পোটর্স রিপোর্টার॥ আলোচনা-সমালোচনা, তর্ক-বিতর্ক, আনন্দ-বেদনা, অশ্রু বিসর্জনের মাধ্যমে গত ১৫দিনের লড়াইয়ের মধ্যদিয়ে গত ২৮শে জুন শেষ হয়েছে ২০১৮ সালের রাশিয়া বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্ব।
আজ ৩০শে জুন থেকে শুরু হবে ১৬ দলের নকআউট পর্ব। এই পর্বে ১৬টি দল কিভাবে নকআউট পর্বে উঠে এলো তার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা-
১। ক্রেয়েশিয়া ঃ বিশ্বকাপের শুরুতে কঠিনতম গ্রুপের তালিকায় ঠাঁই পেয়েছিল ‘ডি’ গ্রুপটি। এই গ্রুপ থেকে নিজেদের তিন ম্যাচের সবক’টিতেই জয় তুলে নিয়ে গ্রুপ সেরা হিসেবে নকআউট পর্ব নিশ্চিত করেছে ক্রোয়েশিয়া। তাদের কাছে হারের ওই তালিকায় লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনাও রয়েছে। দলটির তারকা খেলোয়াড় লুকা মদ্রিচ এখন পর্যন্ত টুর্নামেন্ট সেরাদের তালিকায় রয়েছেন।
২। বেলজিয়াম ঃ শুরুতেই পানামা ও তিউনিশিয়ার বিপক্ষে জয় নিয়ে নকআউট পর্ব নিশ্চিত করেছিল বেলজিয়াম। ইংল্যান্ডের বিপক্ষের ম্যাচটি গ্রুপের শেষ ম্যাচ হওয়ায় সেখানে দ্বিতীয় সারির দল নিয়ে মাঠে নামে বেলজিয়াম। যেখানে ছিলে না দুর্দান্ত ফর্মে থাকা এবং সর্বোচ্চ গোলদাতার দৌড়ে এগিয়ে থাকা রোমলু লুকাকু এবং এডেন হ্যাজার্ড। একই ম্যাচে ইংল্যান্ডও তাদের সেরা একাদশকে বিশ্রামে রেখে মাঠে নামিয়েছিল দ্বিতীয় সারির দল। ওই ম্যাচেও বেলজিয়াম ইংলিশদের হারিয়ে গ্রুপ সেরা হিসেবে নকআউট পর্ব নিশ্চিত করে।
৩। উরুগুয়ে ঃ গ্রুপের সর্বোচ্চ পয়েন্ট নিয়ে নকআউট পর্ব নিশ্চিত করা দলটিকে এখন পর্যন্ত কঠিন কোন প্রতিরোধের মুখে পড়তে হয়নি। দিয়েগো গোডিনের নেতৃত্বাধীন দলটি অবশ্য এখনো পর্যন্ত একটি গোলও হজম করেনি। দলের হয়ে দারুণ দক্ষতা দেখিয়ে চলেছেন লুইস সুয়ারেজ ও এডিনসন কাভানি। করেছেন তিনটি করে গোল।
৪। ব্রাজিল ঃ নেইমারের অভিনয় ক্লান্তিকর মনে হয়েছে। তবে যতই তিন যাচ্ছে ততই যেনো তিনি আরো ক্ষুরধার হয়ে উঠছেন। ইতোমধ্যে পরিপূর্ণ ফিটনেস ফিরে পেয়েছেন নেইমার। দলের আক্রমণভাগের গোড়াপত্তনে থাকা ফিলিপ কুটিনহো ও পাওলিনহোকেও অকার্যকর মনে হয়েছে। তারপরও কোস্টারিকা ও সার্বিয়াকে হারিয়ে শেষ ষোলতে ঠাঁই করে নেয় ব্রাজিল। দলটির এখন মূল চিন্তার বিষয় মার্সেলোর ইনজুরি।
৫। ইংল্যান্ড ঃ সামান্য প্রত্যাশা নিয়েই বিশ্বকাপে এসেছিল তারুণ্য নির্ভর ইংল্যান্ড দলটি। তবে বিলম্বিত গোলে তিউনিশিয়াকে হারানোর পর পানামাকে ৬-১ গোলে বিধ্বস্ত করে দলটি। যদিও বেলজিয়ামের কাছে হেরে সেই ধারাবাহিকতায় ছেদ পড়েছে। কিন্তু গোল্ডেন বুটের দৌড়ে সবাইকে ছাড়িয়ে যাওয়া তারকা হ্যারি কেনসহ সেরা দলটি মাঠে নামেনি ওই ম্যাচে। ক্রমেই আরো বেশী আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠছে ইংল্যান্ড।
৬। সুইডেন ঃ সুইডেন এফ গ্রুপের শীর্ষ দল হিসেবে নকআউট পর্বে পৌঁছাবে-খুব কম মানুষই এমনটা ধারণা করেছিল। প্রথম ম্যাচে বিলম্বিত জয়ের পর জার্মানীর কাছে হেরে যায় সুইডেন। কিন্তু গ্রুপের শেষ ম্যাচে মেক্সিকোর বিপক্ষে অসাধারণ এক জয় সুইডিশদের গ্রুপ সেরা হিসেবে পৌঁছে দেয় নকআউট পর্বে। তারকা খেলোয়াড় জøাটার ইব্রাহিমোভিচকে ছাড়াও দলটির এই সফলতার মূলে রয়েছে উদ্দীপনা ও শৃঙ্খলা।
৭। স্পেন ঃ টুর্নামেন্ট শুরুর মাত্র দুই দিন আগে দলীয় কোচ জুলেন লোপেতেগুইকে বরখাস্ত করে স্পেন। যার মিশ্র প্রতিক্রিয়া হয় দলের মধ্যে। তারপরও পর্তুগালের বিপক্ষে অসাধারণ এক ম্যাচ খেলেছে স্পেন। তবে দলের রক্ষণ কৌশল এবং ডেভিড ডি গেয়ার ফর্মহীনতা দলের জন্য বড় ভয়। তাদের উন্নতি করার সুযোগ রয়েছে।
৮। পর্তুগাল ঃ তারকা খেলোয়াড় ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো একাই টেনে নিয়ে গেছেন পর্তুগালকে। করেছেন চার গোল। অবশ্য দুই বছর আগেই রিয়াল মাদ্রিদের এই ফুটবল সুপার স্টার প্রমাণ করেছিলেন একাই দলকে দীর্ঘ পথ টেনে নেয়ার দক্ষতা তার আছে। তবে ইরানের বিপক্ষে পেনাল্টি মিসের ঘটনাটিও কিছুটা আচড় পড়েছে রোনালদোর সফলতায়। ওই ম্যাচে ১-১ গোলে ড্র করে পর্তুগাল। যে কারণে প্রশ্ন উঠছে এই তারকা ফুটবলারের অনুপস্থিতি থাকলে কি করবে পর্তুগাল?
৯। কলম্বিয়া ঃ প্রথম ম্যাচের তৃতীয় মিনিটেই যদি কার্লোস সানচেজের লাল কার্ড দেখে মাঠছাড়া হয়ে জাপানের কাছে কলম্বিয়া না হারতো, তাহলে হয়তো এবারের আসরে ডার্ক হর্স হিসেবেই নকআউট পর্বে পৌঁছে যেতো কলম্বিয়া। পোল্যান্ডের বিপক্ষে অসাধারণ পারফরমেন্স দেখিয়েছেন হামেস রদ্রিগেজ। কিন্তু ইনজুরীর কারণে সেনেগালের বিপক্ষে শেষ ম্যাচে খেলতে পারেননি তিনি। তার ওই অনুপস্থিতি দলের জন্য একটি বড় ক্ষতি।
১০। মেক্সিকো ঃ সুইডেনের কাছে হারের বিষয়টি বাদ দিলে তারা যেভাবে প্রথম দুই ম্যাচে নিজেদের মেলে ধরেছিল তাতে সত্যিকারের হুমকি হয়েই বিশ্বকাপে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে মেক্সিকো। জার্মানিকে ১-০ গোলে হারিয়ে দেয়া দলটি অন্তত চার-পাঁচটি গোলের সুযোগ পেয়েছিল। বাঁ প্রান্ত দিয়ে অসাধারণ সব আক্রমণের রচয়িতা হার্ভিং লোজানো টুর্নামেন্টের সেরা তারকাদের কাতারে স্থান পাওয়ার উপযুক্ত।
১১। ফ্রান্স ঃ একসময়ের বিশ্বসেরা দলটি এখনো অপরাজিত আছে। তবে কৌশলগত এবং দুঃখজনক পারফরমেন্স বলে দিচ্ছে দিদিয়ের দেশ্যমের দলকে আরো অনেক কাজ করতে হবে, যাতে তাদের মেধাবী খেলোয়াড়দের বেশী করে কাজে লাগানো যায়।
১২। রাশিয়া ঃ দুর্দান্ত সূচনা, মাঝপথে দারুণ শক্তির প্রদর্শনী এবং হতাশ করা সমাপ্তি। সৌদি আরবের বিপক্ষে রোমাঞ্চকর জয় দিয়ে শুভ সূচনা করা রাশিয়া বাস্তবতার মুখ দেখেছে উরুগুয়ের বিপক্ষে লড়তে গিয়ে। তবে স্বাগতিক দলটি সন্দেহ বাতিকদের ভুল প্রমাণিত করেছে। নকআউট পর্বে স্পেনের মোকাবেলা করবে রাশিয়া।
১৩। সুইজারল্যান্ড ঃ বিতর্ক এবং নিষেধাজ্ঞার চোখ রাঙানি দলটিকে সত্যিকার অর্থেই বিপদের মুখে ফেলে দিয়েছিল। সার্বিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ জয়ের পর গ্রানিট ঝাকা ও জের্ডান শাকিরির বিতর্কিত উদযাপন এই বিতর্কের জন্ম দেয়। শেষ পর্যন্ত অবশ্য জরিমানা দিয়ে পাড় পেয়েছে দলের অগ্রযাত্রায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা এই দুই ফুটবলার। তারা দলের জন্য অনেক করেছে, তবে সত্যিকার অর্থে যথেষ্ট নয়।
১৪। ডেনমার্ক ঃ ফ্রান্সের সঙ্গে গোলশূন্য ড্র করা ডেনমার্কের হয়ে প্লেমেকার হিসেবে নিজের যোগ্যতার প্রমাণ দিয়ে গেছেন ক্রিস্টিয়ান এরিকসেন। যার মাধ্যমে তিনি প্রমাণ করেছেন তিনি বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়দের একজন। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ড্র করা দলটি পেরুকে হারিয়ে নকআউট পর্ব নিশ্চিত করে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তাদের ড্রয়ের মূল কারণ অবশ্য পেনাল্টি।
১৫। জাপান ঃ গ্রুপ পর্ব থেকে মাত্র চার পয়েন্ট লাভ করেছে জাপান। একমাত্র জয়টি তারা পেয়েছে কলম্বিয়ার বিপক্ষে। যারা ১০ জনের দল নিয়েই এক অর্থে গোটা ম্যাচ(৮৭ মিঃ) খেলেছে। ফেয়ার প্লে পয়েন্টের ভিত্তিতেই সেনেগালকে হটিয়ে নকআউটের টিকিট পেয়েছে জাপান। যে কারণে জাপানীদের ভাগ্যবান বলতেই হচ্ছে। তবে ঝুঁকিপূূর্ণ রক্ষণ নিয়ে একটি দল ভালো দলের মোকাবেলা করে খুব বেশী দূর যেতে পারে না।
১৬। আর্জেন্টিনা ঃ টিকে থাকা এবং ছিটকে পড়া থেকে মাত্র চার মিনিট দূরত্ব থেকে শেষ পর্যন্ত টিকে যায় আর্জেন্টিনা। গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচে আইসল্যান্ডের সঙ্গে ড্র করার পর ক্রোয়েশিয়ার কাছে হেরে এক প্রকার বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছিল লিওনেল মেসির দলটি। শেষ পর্যন্ত নাইজেরিয়ার বিপক্ষে ¯œায়ুক্ষয়ী এক ম্যাচের অন্তিম মুহুর্তের গোলে প্রাণ ফিরে পায় আর্জেন্টিনা। গ্রুপ পর্বে ধুঁকলেও দলটি এখনো পর্যন্ত বেশ শক্তিশালী। কারণ তাদের রয়েছে মেসির মতো বিশ্ব কাঁপানো ফুটবল তারকা।