॥আবুল হোসেন॥ রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার উজানচর ইউনিয়নের ওমেদ বেপারী পাড়া খালের ওপর নির্মিত সেতুর দুই পাশের মুখ ভরাট করে বসতভিটা তৈরী করেছে স্থানীয়রা।
পানি প্রবাহ বন্ধ হওয়ায় সামান্য বৃষ্টিতে খাল উপচে রাস্তায় জলাবদ্ধতা তৈরী হচ্ছে। ভোগান্তির শিকার হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দা ও পথচারী। এলাকাবাসী খালটি পুঃন উদ্ধারসহ সেতুর দুই মুখ খুলে দেওয়ার দাবী জানিয়েছে।
গোয়ালন্দ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সুত্র জানায়, চলাচলের সুবিধার্থে দীর্ঘদিন ধরে উপজেলার উজানচর ইউনিয়নের ৮নম্বর ওয়ার্ড ওমেদ বেপারী পাড়া-বারেক মাঝির বাড়ির নিকট খালের ওপর সেতু নির্মাণের দাবী জানিয়ে আসছিল এলাকাবাসী। পরবর্তীতে ২০১০-২০১১ অর্থ বছরে খালটির ওপর দুর্যোগ ও ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর সেতু নিমাণ করে। ৩৬ ফুট দৈর্ঘের সেতুটি নির্মাণের প্রাক্কলিত ব্যয় ছিল ১৮ লাখ ৯৬ হাজার ১৫৪ টাকা। রাজবাড়ীর মের্সাস সুজন এন্টার প্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠান সেতুটি তৈরী করেন।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, প্রায় ৩০ বছরের বেশি সময় আগে ওমেদ বেপারী পাড়ায় খালের সৃষ্টি। খাল দিয়ে নিচু এলাকায় জমে থাকা পানি প্রবাহিত হয়ে উজানচর মরা পদ্মা নদীতে গিয়ে মিশত। খালটির ওপর সেতু নির্মিত হলে প্রতিদিন উজানচর, দৌলতদিয়া ইউনিয়নসহ গোয়ালন্দ শহরের অনেক মানুষ গণি শেখের পাড়াসহ চরাঞ্চলে যাতায়াত করে। চরাঞ্চলের মানুষ ঘোড়ার গাড়িতে কৃষিপণ্য, উৎপাদিত ফসল আনা নেওয়া করে। স্থানীয় কিছু মানুষ গত ৮/৯বছর ধরে ভরাট করে বসত বাড়ি করতে থাকে। সেতুর দুই পাশে দীর্ঘদিন খালি থাকায় আশপাশের নিচু এলাকার পানি খালে গিয়ে পড়তো। বর্ষাকালে অনেকে পাটের আঁশ পচার জন্য খাল ব্যবহার করতো। এক মাস আগে সেতু সংলগ্ন স্থানীয় বক্কার শেখ, বারেক শেখ ওরফে বারেক মাঝি ও মোতালেব শেখের পরিবার স্যালো ইঞ্জিন চালিত ড্রেজার(মাটি খননের যন্ত্র) দিয়ে ভরাট করে। সেতুর দুই পাশের মুখ বন্ধ করে বসতভিটা তৈরী করে। এখন সামান্য বৃষ্টিতেই পাকা সড়কের ওপর হাঁটু পানির জলাবদ্ধতা হচ্ছে। এতে স্থানীয়দের পাশাপাশি পথচারীদের নানা ধরনের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
স্থানীয় আলাল সরদার, খয়ের আলী শেখসহ কয়েকজন বলেন, আমরা খাল ফিরে পেতে চাই। কয়েক বছর আগে কিছু বসত-বাড়ি করায় সরকার স্থিতিবস্থা জারি করেছিল। তা অমান্য করে স্থানীয় অনেকে খাল ভরাট করে ঘর-বাড়ি করে। পানি বের হওয়ার কোন জায়গা না থাকায় বৃষ্টির পানি রাস্তায় জমে জলাবদ্ধতা তৈরী হচ্ছে।
স্থানীয় ৮নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আক্কাছ আলী সরদার অভিযোগ করেন, খাল থাকা অবস্থায় আশপাশের সব পানি খালে গিয়ে পরতো। বর্ষাকালে অনেক কৃষক এই খালে পাট পচাতো। কিছুদিন আগে কয়েক পরিবার ড্রেজার দিয়ে বালু ফেলে ভরাট করে ফেলায় এমন অবস্থা হয়েছে বৃষ্টি নামলেই রাস্তা তলিয়ে যায়।
স্থানীয় ইউপি সদস্য নিখিল চন্দ্র রায় বলেন, খালটি ভরাট করে ফেলায় একদিকে যেমন সেতুর পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। পাশাপাশি বৃষ্টির পানি রাস্তায় জমে জলাবদ্ধতা তৈরী হচ্ছে। সমস্যা সমাধানে বিষয়টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে জানানো হয়েছে।
মাটি ভরাট প্রসঙ্গে বারেক শেখ ওরফে বারেক মাঝি বলেন, যার যার বাড়ির সামনে সবাই খাল ভরাট করে বসত ভিটা করেছে। বাড়ির সামনে খালে আমার নিজস্ব জায়গা। প্রায় এক লাখ ২৮ হাজার টাকা খরচ করে ৯০ হাজার ঘন মিটার বালুমাটি ফেলে ভরাট করেছি। যদি কেউ না ভরাট করতো তাহলে আমিও ভরতাম না।
এ প্রসঙ্গে গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আবু নাসার উদ্দিন বলেন, এভাবে সরকারী খাল ভরাট করার এখতিয়ার কারো নেই। এছাড়া সেতুর দুই পাশের মুখ ভরাট করার বিষয়টি জানানেই। বিষয়টি খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।