॥আসহাবুল ইয়ামিন রয়েন॥ রাজবাড়ী জেলা প্রশাসনের আয়োজনে গতকাল ২২শে এপ্রিল সকাল ১০টায় কালেক্টরেটের সম্মেলন কক্ষে জেলা রাজস্ব সম্মেলন, জেলা কৃষি জমি ব্যবস্থাপনা ও বন্দোবস্ত এবং জেলা আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়নে গঠিত টাস্কফোর্স কমিটির সভাসহ মোট ৭টি সভা জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(রাজস্ব) মোঃ আব্দুর রহমান, এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী খান এ শামীম, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার হোসনে ইয়াসমিন করিমী, জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা নূরে সফুরা ফেরদৌস, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাগণ, জজ কোর্টের জিপি এডঃ মোঃ আনোয়ার হোসেন, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি)গণ, জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনারগণ, বিভিন্ন ইউনিয়নের ভূমি সহকারী কর্মকর্তাগণ এবং কমিটিগুলোর সদস্যগণসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলী তার বক্তব্যে বলেন, জেলার সরকারী রাজস্ব আদায়সহ বিভিন্ন সরকারী স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অগ্রগতি নিয়ে জেলা রাজস্ব সম্মেলনে মতবিনিময় করা হয়। তারই ধারবাহিকতায় চলতি মাসে এই অর্থ বছরের রাজস্ব আদায়ে উপজেলা ভূমি অফিস ভিত্তিক যে টার্গেট ছিল সেটা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, জেলার কয়েকটি উপজেলা তাদের টার্গেট পূরণ করেছে আর কয়েকটি তাদের টার্গেট পূরণ করতে পারেনি। আমি আশা করি, এই অর্থ বছর শেষ হওয়ার পূর্বে জেলার সকল উপজেলা তাদের নির্ধারিত সময়ে কর্ম ঘন্টার চেয়ে অধিক কাজের মাধ্যমে, প্রয়োজনে যাদের কাছে রাজস্ব অর্থ বকেয়া রয়েছে তাদের বাড়ী বাড়ী গিয়ে রাজস্ব আদায় করতে হবে। এরপরও যদি কাজ না হয় তবে প্রয়োজনে তাদের লীজসহ সকল বন্দোবস্ত বাতিল করে নতুন করে লীজ প্রদানের মাধ্যমে জেলার রাজস্ব আদায়ের টার্গেট পূরণ করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, রাজস্ব আদায়ের টার্গেট পূরণ না হলে কাউকে কোন প্রকার ছাড় দেয়া হবে না বলে সকলকে সতর্ক করেন। তিনি সকলকে তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালনসহ যারা ভূমি সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে ভূমি অফিসে সহযোগিতা বা পরামর্শ নিতে আসেন তাদেরকে সঠিক সময়ে ভূমি সংক্রান্ত সরকারী রাজস্বের টাকা পরিশোধে উৎসাহী করাসহ সঠিক পরামর্শ প্রদান এবং তারা যাতে ভূমি কর্মকর্তা ও অন্যদের কাছ থেকে কোন প্রকার হয়রানীর শিকার না হয় সে বিষয়ে সকলকে খেয়াল রাখতে বলেন। যে সকল ভূমি সহকারী কর্মকর্তাগরে বিরুদ্ধে অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন না করার অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি তার বক্তব্যে আরো বলেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা মোতাবেক প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি তত্বাবধানে পরিচালিত আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় রাজবাড়ী জেলার জন্য বরাদ্দপ্রাপ্ত যে ৭১১টি ঘর তৈরীর অনুমোদন পাওয়া গিয়েছিল সেই ৭১১টি ঘর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তৈরী ও বন্দোবস্ত প্রদানের মাধ্যমে রাজবাড়ী জেলা ঢাকা বিভাগের সকল জেলার মধ্যে প্রথম হয়েছে। রাজবাড়ী ছাড়া অন্য কোন জেলা বেশী ঘরের বরাদ্দ পেলেও তারা সেগুলো সময়মতো বন্দোবস্ত দিতে পারেনি। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফলে আমরা এই ভালো কাজের ক্ষেত্রে সফল হয়েছি। এই সকল সফলতার কারণে রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলায় ৪একর জমির উপর আরো নতুন একটি গুচ্ছগ্রামের আওতায় ৮০টি ঘর নির্মাণের জন্য সরকারী ১০৯টন চালের বরাদ্দ পাওয়া গেছে। যার আওতায় প্রতিটি পরিবারের জন্য ঘরসহ একটি টয়লেট ও ৫টি পরিবারের জন্য একটি করে টিউবয়েল থাকবে। অতি অল্প সময়ের মধ্যে নির্মাণ কাজ শুরু হবে ও ভূমিহীন পরিবারের মাঝে এই ঘরের বন্দোবস্ত দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, রাজবাড়ী সদর, পাংশা ও কালুখালী উপজেলায় তিন মাস আগে আশ্রয়ণ প্রকল্পের যে মাটি ভরাটের কাজ করার বরাদ্দ পাওয়া গিয়েছিল তার মধ্যে আমি সরেজমিনে রাজবাড়ী ও কালুখালী জেলার কাজের অগ্রগতি পরিদর্শন করেছি। যাতে রাজবাড়ী সদর উপজেলার আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাটি ভরাটের কাজ শতকরা ৫০ ভাগ সমাপ্ত হলেও কালুখালী উপজেলার মাটি ভরাটের কাজ এখনও শুরুই করা হয়নি। উপরন্তু কালুখালী আশ্রয়ণ প্রকল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমাকে অসত্য তথ্য প্রদান করেছেন যে কাজ শুরু হয়েছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। সরেজমিনে পরিদর্শন শেষে আমার কাছে মনে হয়েছে কর্মকর্তাসহ এর সাথে সংশ্লিষ্টদের গাফিলতি এই কাজ শুরু না হওয়ার প্রধান কারণ। তিনি এই আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাটি ভরাট কাজ শুরু করতে কেন দেরী হলো তার কারণ খুঁজে বের করা ও ব্যবস্থা গ্রহণসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে স্বল্প সময়ের মধ্যে কাজ শুরু করার নির্দেশ প্রদান করেন।
এছাড়াও সভাগুলোতে সরকারী স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়, নদী রক্ষা, ভূ-সম্পত্তি জবর দখলের অভিযোগ ও তদন্ত সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়নহ জেলার উন্নয়নে আরো কি কি কার যায় সে সকল বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়।