রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:১৬ অপরাহ্ন
Logo
সংবাদ শিরোনাম ::
বিশ্বব্যাপী ওমিক্রন সংক্রমণ বৃদ্ধিতে আইসোলেশন মেয়াদ অর্ধেক করার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ওমিক্রন ভেরিয়েন্ট ডেল্টা ও বিটার তুলনায় তিন গুণের বেশী পুনঃ সংক্রমন ঘটাতে পারে : গবেষণা প্রতিবেদন জাতিসংঘ ভবনের বাইরে এক বন্দুকধারী গ্রেফতার শান্তি চুক্তির পঞ্চম বার্ষিকী উপলক্ষে কলম্বিয়া সফর জাতিসংঘ মহাসচিব সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানগণের সাক্ষাৎ করোনা ভাইরাসের সংক্রমন বেড়ে যাওয়ায় অস্ট্রিয়ায় লকডাউন করোনা সংক্রমণ বাড়ায় ইউরোপের বিভিন্ন দেশে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ ভারতে নতুন করে ১০ হাজার ৩০২ জন করোনায় আক্রান্ত নভেম্বর মাসজুড়ে করাঞ্চলে কর মেলার সেবা পাবেন করদাতারা ঔপনিবেশিক আমলের ফৌজদারী কার্যবিধি যুগোপযোগী হচ্ছে

উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের সাফল্য অর্জনে রাজবাড়ীতে প্রেস ব্রিফিং

  • আপডেট সময় বুধবার, ২১ মার্চ, ২০১৮

॥স্টাফ রিপোর্টার॥ স্বল্পোন্নত দেশের স্ট্যাটাস হতে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের যোগ্যতা অর্জনের ঐতিহাসিক সাফল্য উদ্যাপন উপলক্ষ্যে রাজবাড়ী জেলা প্রশাসন ও জেলা তথ্য অফিসের আয়োজনে গতকাল ২০শে মার্চ বেলা ১১টায় প্রেস ব্রিফিং জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলীর সভাপতিত্বে কালেক্টরেটের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়।
প্রেস ব্রিফিং-এ অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রেবেকা খান, সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার(ভূমি) সাদিয়া ইসলাম, জেলা তথ্য অফিসার মোঃ মোক্তার আলী মল্লিক, রাজবাড়ী প্রেসক্লাবের সভাপতি খান মোঃ জহুরুল হক, সাধারণ সম্পাদক খোন্দকার আব্দুল মতিনসহ জেলায় বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকগণ উপস্থিত ছিলেন।
সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলী বলেন, আমরা যখন আমাদের মহান স্বাধীনতার স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন পালন করছিলাম ঠিক সেই মুহুর্তেই জানতে পারলাম বিশ্ব সংস্থা জাতিসংঘ আমাদের দেশকে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। যা ছিল সমগ্র বাঙালী জাতির জন্য একটি আনন্দের বিষয়। আমাদের এই স্বীকৃতি পাওয়া সম্ভব হয়েছে শুধুমাত্র বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাংলাদেশের মানুষের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা ও সুদূর প্রসারী চিন্তা-ভাবনার কারণে। আমাদের সকলকে এই সুসংবাদ সারা দেশের মানুষকে জানিয়ে দিতে হবে, যাতে দেশের ভবিষ্যৎ অগ্রযাত্রায় সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে ও ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ গড়ার পরবর্তী টার্গেটগুলোতে পৌঁছানো সম্ভব হয়। যেহেতু সাংবাদিকরা সমাজের দর্পন সেহেতু সরকারের এই সাফল্যকে আপনাদের লেখনীর মাধ্যমে সমাজের সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য আজকের এই প্রেস ব্রিফিং এর আয়োজন বলে তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি স্বল্পোন্নত দেশের স্ট্যাটাস হতে বাংলাদেশের উত্তরণের যোগ্যতা অর্জনের ঐতিহাসিক সাফল্যের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে তার লিখিত বক্তব্যে বলেন, জাতিংঘের উন্নয়ন নীতি সংক্রান্ত কমিটি(সিডিপি) গত ১৬ই মার্চ বিকেলে তাদের আমেরিকার নিউইয়র্কস্থ কার্যালয় থেকে বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা প্রদান করা হয়। ঘোষণার পরে এই সংক্রান্ত চিঠিটি জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেনের কাছে সিডিপি’র সেক্রেটারিয়েটের প্রধান মিঃ রোলান্ড মোলেরাস বাংলাদেশ মিশনের বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রদান করেন। বাংলাদেশ ১৯৭৫ সালে নিম্ন আয়ের শ্রেণীতে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর ৪৩ বছর পরে হলেও সকল শর্ত পূরণের মাধ্যমে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা লাভ করেছে। কার্যত জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাউন্সিল(ইকোসোক) এর উন্নয়ন নীতিমালা বিষয়ক কমিটি(কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি-সিপিডি) তিনটি সূচকের ভিত্তিতে তিন বছর পর পর স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের জন্য বিগত তিন বছরে দেশের জনগণের মাথাপিছু আয়, পুষ্টি, স্বাস্থ্য, মৃত্যুহার, স্কুলে ভর্তি, ঝরে পড়া ও শিক্ষার হারের উপর ভিত্তি করে মানব সম্পদ উন্নয়ন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক আঘাত, জনসংখ্যা পরিমাপ ও বিশ্ব বাজার থেকে একটি দেশের দূরত্বসহ মোট ৮টি বিষয়ের উপর ভিত্তি করে অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচক পর্যালোচনা করে এই স্বীকৃতি প্রদান করে থাকে। যার আলোকে তিনটি বিষয়ে সিপিডি’র ঘোষিত উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হতে হলে একটি দেশের প্রতিটি জনগণের মাথাপিছুু আয় ১২৩০ মার্কিন ডলার, মানব সম্পদের সূচক শতকরা ৬৬% ও অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতার সূচক শতকরা ৩২% এর নীচে হওয়ার প্রয়োজন ছিল। সেই হিসেবে বর্তমানে বাংলাদেশের প্রতিটি জনগণের মাথাপিছুু আয় ১২৭২ মার্কিন ডলার, মানব সম্পদের সূচক শতকরা ৭২.৮% ও অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতার সূচক শতকরা ২৫% নীচে হওয়ায় সিপিডি’র মানদন্ডে বাংলাদেশ খুব সফলতার সাথে উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তর হয়েছে। এর সবই সম্ভব হয়েছে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণে। তিনি বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত করার পর ভবিষ্যতে অর্থাৎ আগামী তিন বছর পর সিপিডির’র জরিপে বাংলাদেশকে যাতে রূপকল্প-২০২১ বাস্তায়নের মাধ্যমে উন্নত মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করা যায় সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন ও তা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন। যার আওতায় ইতিমধ্যে সরকার সফলভাবে এমডিজির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে এসডিজি বাস্তবায়নে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, লিঙ্গ সমতা, কৃষি, দারিদ্রসীমা হ্রাস, গড় আয়ু বৃদ্ধি, রপ্তানী শিল্প, ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠন, মেগা প্রকল্প, মানব সম্পদ উন্নয়ন, পোশাক শিল্প, ঔষধ শিল্প, রপ্তানি আয় বৃদ্ধিসহ বিভিন্নভাবে অর্থনৈতিক সাফল্য অর্জন করেছে। আজ সরকার পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ, মেট্রোরেল, পায়রায় গভীর সমুদ্র বন্দরসহ বিভিন্ন মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। যা বর্তমান সরকারের সুদুরপ্রসারী পরিকল্পনা গ্রহণের মাধ্যমে সম্ভব হয়েছে। বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর দীর্ঘমেয়াদী বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করে। যার আওতায় দেশকে ডিজিটাল করার লক্ষ্যে ইতিমধ্যে দেশের ১৩ কোটি মানুষকে মোবাইল সংযোগ প্রদান, ৮কোটি মানুষকে ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধা প্রদান, ২য় সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপন করে ব্যান্ডউইথ বৃদ্ধি, গ্রামাঞ্চল পর্যন্ত ব্রডব্যান্ড সংযোগ প্রদান করেছে। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ২০১৭-১৮ সালে দেশে বৈদেশিক বিনিয়োগ হয়েছে ৩ বিলিয়ন ডলার, এডিপির আকার বৃদ্ধি পেয়েছে ১ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা, অর্থবাজারে রেমিটেন্স এসেছে ১৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার যা অতীতের যেকোন সময়ের চেয়ে বেশী। কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ, মৎস্য, বনায়ন, সার্বিক অবকাঠামো উন্নয়ন, সরকারী কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধি, জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন, সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণসহ সর্বক্ষেত্রে বর্তমান সরকার বিভিন্ন কর্মকান্ড বাস্তবায়নের মাধ্যমে তার নির্দিষ্ট লক্ষ্যে অগ্রগতি সাধন করছে।
তিনি আরো বলেন, উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় রাজবাড়ী জেলাও পিছিয়ে নেই। বর্তমানে অতীতের যেকোন সময়ের তুলনায় রাজবাড়ীর সকল ক্ষেত্রে অধিক উন্নয়ন সাধিত হচ্ছে। যার ধারাবাহিকতায় রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া মহাসড়ক সম্প্রসারণ, ভাঙ্গন প্রতিরোধে রাজবাড়ী শহর রক্ষা বেড়িবাঁধের উন্নয়ন, এলজিইডির তত্বাবধানে রাজবাড়ী পল্লী অবকাঠামো উন্নয়নে ৩৮০ কোটি টাকার পরিকল্পনা গ্রহণ, ১ম পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির পর এডিবির অর্থায়নে ২য় পদ্মা সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহন, জেলার বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণে আরো ১০ মেগাওয়াট বৃদ্ধিকরণে ব্যবস্থা গ্রহণ, জেলার বিভিন্ন সরকারী অফিসে জনগণকে আরো উন্নত সেবা প্রদানে পেপারলেস ডিজিটাল অফিস করাসহ ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের কার্যক্রমকে আরো উন্নত করার পরিকল্পনা গ্রহণ, একটি পূর্ণাঙ্গ পলিটেকনিক্যাল স্থাপনসহ শিক্ষার মানোন্নয়নে ব্যবস্থা গ্রহণ, কৃষি ক্ষেত্রে কৃষকদের বিভিন্ন ফসল উৎপাদনে ভর্তুকি প্রদানসহ সব ধরণের সহযোগিতা প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করাসহ বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। সেই লক্ষ্যে আগামী ২৭শে মার্চ রাজবাড়ী সদর উপজেলার চরবাগমারায় ৭৫ কোটি টাকা ব্যয়ে বিদ্যুতের গ্রীড স্টেশন নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করা হবে। এছাড়াও আজ ২০শে মার্চ থেকে ২৫শে মার্চ পর্যন্ত প্রচারাভিযান ও সেবা সপ্তাহের উদ্বোধন করা হয়েছে।
তিনি তার লিখিত বক্তব্যে আরো বলেন, সারা বিশ্ব আজ বাংলাদেশকে সম্মানের চোখে দেখে। যে বাংলাদেশকে একসময় করুণার চোখে দেখত, সাহায্যের হাত বাড়ানোয় করুণার পাত্র মনে করত, আজ সেই বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে বিশ্বসভায় সম্মানিত। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উন্নীত হওয়ায় বাংলাদেশের সম্মানও বেড়েছে বলে উল্লেখ করেন। তিনি সরকারের সকল উন্নয়ন কর্মকান্ড তুলে ধরার জন্য সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানান।

নিউজটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো খবর
error: আপনি নিউজ চুরি করছেন, চুরি করতে পারবেন না !!!!!!