মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ১০:৫২ অপরাহ্ন
Logo
সংবাদ শিরোনাম ::
বিশ্বব্যাপী ওমিক্রন সংক্রমণ বৃদ্ধিতে আইসোলেশন মেয়াদ অর্ধেক করার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ওমিক্রন ভেরিয়েন্ট ডেল্টা ও বিটার তুলনায় তিন গুণের বেশী পুনঃ সংক্রমন ঘটাতে পারে : গবেষণা প্রতিবেদন জাতিসংঘ ভবনের বাইরে এক বন্দুকধারী গ্রেফতার শান্তি চুক্তির পঞ্চম বার্ষিকী উপলক্ষে কলম্বিয়া সফর জাতিসংঘ মহাসচিব সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানগণের সাক্ষাৎ করোনা ভাইরাসের সংক্রমন বেড়ে যাওয়ায় অস্ট্রিয়ায় লকডাউন করোনা সংক্রমণ বাড়ায় ইউরোপের বিভিন্ন দেশে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ ভারতে নতুন করে ১০ হাজার ৩০২ জন করোনায় আক্রান্ত নভেম্বর মাসজুড়ে করাঞ্চলে কর মেলার সেবা পাবেন করদাতারা ঔপনিবেশিক আমলের ফৌজদারী কার্যবিধি যুগোপযোগী হচ্ছে

দৌলতদিয়া ঘাটে বছর জুড়ে নানা ভোগান্তি॥ব্যবস্থাপনায় অস্বচ্ছতা॥দালালের দৌরাত্ম্য

  • আপডেট সময় বুধবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮

॥কাজী তানভীর মাহমুদ॥ রাজধানী ঢাকার সাথে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার প্রবেশদ্বার হিসেবে পরিচিত দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌ-রুট। এ রুটে প্রতিদিন প্রায় ৩ থেকে ৫ হাজার ছোট-বড় যানবাহন ফেরীতে পদ্মা নদী পার হয়।
এছাড়া লঞ্চ ও ফেরীতে দৌলতদিয়া ঘাট থেকে নদী পার হয়ে পাটুরিয়া ঘাটে পৌছায় ১০ থেকে ১৫হাজার যাত্রী। এই নৌ-রুটটি গ্রীস্ম মৌসুমে নাব্যতা সংকট, বর্ষায় তীব্র স্রােত, বর্ষা শেষে নদী ভাঙনে পল্টুনসহ র‌্যামবেজ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া, শীতে ঘন কুয়াশা, ফেরী সংকটসহ নানা অজুহাতে সারা বছরের প্রায় প্রতিটি দিনই ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন সাধারণ যাত্রীরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রায় দেড় শতাধিক যাত্রীবাহী বাস ও ২শতাধিক ট্রাক সিরিয়ালে সময়ের প্রহর গুনছে। পাশাপাশি দৌলতদিয়া টার্মিনালে কয়েকদিন যাবত আটকে আছে শত শত পণ্যবোঝাই ট্রাক। এগুলোকে দৌলতদিয়া ঘাটে এসে ফেরীতে উঠার জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করতে হয়। কখনো কখনো অপেক্ষার মাত্রা পৌঁছে যায় দিন পেরিয়ে রাতে। এ অবস্থায় অসহায় যাত্রীদের মনে এখন একটাই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে, তাহলো আসলেই সংকট কি নদীতে নাকি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের স্বচ্ছতায়?
দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌ-রুটে ফেরী পরিচালনা করে বিআইডব্লিউটিসি কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে এই রুটে ১৪টি ফেরী চলাচল করছে বলে দাবী বিআইডব্লিউটিসির। তবে ঘাট প্রান্তে অপেক্ষমান যানবাহন চালকেদের অভিযোগ, ১৪টি না হলেও যদি ১০টি ফেরীও সত্যি সত্যি চলাচল করতো তাহলে ঘাটে যানবাহনের দীর্ঘ সারি জমতো না। ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থেকে কষ্ট পোহাতে হতো না সাধারণ যাত্রীদের।
দৌলতদিয়া ঘাটে সরেজমিনে অনুসন্ধান করে দেখা গেছে যে, দৌলতদিয়া ঘাট প্রান্তে ফেরীমুখো যানবাহনগুলো রাস্তার বাম পাশে সিরিয়ালে দাঁড়িয়ে থাকে। এর মধ্যে যাত্রীবাহী বাসগুলো ফেরীতে উঠার অসুস্থ্য প্রতিযোগিতায় বিশৃঙ্খলভাবে বাস পজিশনে রাখে। এতে করে সৃষ্টি হয় জটলার। পাশাপাশি ঘাটে দালালের দৌরাত্ম্যে বড় অসহায় হয়ে পড়েছে দূর-দূরান্ত থেকে আসা যানবাহনের চালকেরা। দ্রুত ফেরীর দেখা পেতে গুনতে হয় নগদ টাকা।
যানবাহন চালকদের অভিযোগ, দালালরা টাকার বিনিময়ে যোগসাজসে সিরিয়ালে পিছনে থাকা গাড়ী রাস্তার ডান পাশ দিয়ে(রং সাইড দিয়ে) নিয়ে গিয়ে ফেরীর সিরিয়াল করে দেয়। যাদের টাকা নেই তারা দিনের পর দিন ঘাটে আটকে থাকে। দালালদের সাথে স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের যোগসুত্র রয়েছে। দৌলতদিয়ার জিরো পয়েন্টে ডান পাশের রাস্তায় ফেরীতে উঠার জন্য যানবাহনের অপেক্ষমান দীর্ঘ লম্বা লাইন থাকলেও বাইপাস সড়ক দিয়ে কোন প্রকার বাধা ছাড়াই কিছু পরিবহনের যাত্রীবাহী বাস ফেরী পাওয়ার জন্য দ্রুত গতিতে প্রবেশ করে। এতে অন্যদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
জানাগেছে, ঘাটের কয়েকজন দালাল গাড়ী প্রতি ৫০০ থেকে ১২০০ টাকার বিনিময়ে ডান পাশ দিয়ে বাইপাস রাস্তা দিয়ে গাড়ী ফেরীতে উঠিয়ে দেয়। বাইপাশ রাস্তা দিয়ে পাটুরিয়া থেকে আসা যানবাহনগুলো ফেরী থেকে নেমে দৌলতদিয়া-গোয়ালন্দ সড়কের দিকে আসার কথা থাকলেও দৌলতদিয়া জিরো পয়েন্ট থেকে উল্টো পথে যানবাহন প্রবেশের ফলে বাইপাস রাস্তায় জটের সৃষ্টি হয়। আশংকা থাকে দুর্ঘটনার।
যশোর থেকে ঢাকাগামী একটি ট্রাকের চালক তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘বিগত ৪দিন ধরে দৌলতদিয়া ঘাটে এসে ফেরীর সিরিয়ালের আশায় দ্বারে দ্বারে ঘুরছি। কবে ফেরীতে উঠতে পারবো তা জানি না। দৌলতদিয়া ঘাটে আমরা বড় অসহায়।’
গত ৫দিন ধরে ঘাটে আটকে থাকা ফরিদপুর থেকে ঢাকাগামী ট্রাকের চালক মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘ভাই ৫দিন আগে দৌলতদিয়া ঘাটে এসে আটকে আছি। এতো ভোগান্তি আর সহ্য হয় না। আমাদের টাকাও নাই, খোরাকি ফুরিয়ে গেছে। আমরা ট্রাক চালকেরা বড় নিরুপায়।’
পিরোজপুর থেকে ঢাকাগামী একটি বাসের চালক মাসুদ বলেন, ‘দৌলতদিয়া ঘাটে প্রভাবশালীদের দাপটে বাস চালকেরা অস্থির। ঘাটে দালালদের দৌরাত্ম্য বেশী। টাকা নিয়ে ট্রাক পার করলেও যাত্রীবাহী বাসকে বসিয়ে রাখে ঘন্টার পর ঘন্টা। চালকেরা তো বাধ্য হয়ে গাড়ী চালায় কিন্তু যাত্রীদের ভোগান্তি চরমে।’
পটুয়াখালী থেকে ঢাকাগামী একটি কাভার্ড ভ্যানের হেলপার মোঃ নুরুজ্জামান বলেন, ‘যারা পুলিশকে টাকা দেয় তারাই মানুষ। আমরা টাকা দিতে পারিনা বলে আমাদেরকে মানুষই মনে করে না।’
পিরোজপুর থেকে ঢাকাগামী বিকাশ পরিবহনের যাত্রী আফরোজা বেগম বলেন, ‘সকালে দৌলতদিয়া ঘাটে এসে বাস সিরিয়ালে আটকে আছি। দুপুর হয়ে গেলেও এখনও বাস ফেরীতে উঠতে পারেনি। কখন যে ঢাকার বাসায় পৌঁছাতে পারবো তা নিয়ে বড় চিন্তা হচ্ছে। অসুস্থ বোধ হচ্ছে। ঘাটে মহিলা যাত্রীদের সেবার কোন ব্যবস্থাই নাই।’
দৌলতদিয়ায় কর্তব্যরত ট্রাফিক ইন্সপেক্টর(টিআই) মোঃ মাহবুবুর রহমান জানান, ট্রাফিক বিভাগের দায়িত্ব ঘাটে ফেরী পারাপারে আসা যানবাহনগুলো শৃঙ্খলতার সাথে নিয়ন্ত্রণ করা। গাড়ীর সিরিয়ালের শৃঙ্খলা বজায় রেখেই ফেরীর জন্য গাড়ী ছাড়া হয়। যাত্রীবাহী বাসের সাথে কুরিয়ার সার্ভিস, মাছ বহনকারী ট্রাক, কাঁচামাল সবজি বহনকারী ট্রাকগুলোকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পাঠানো হয়। বাকি অপচনশীল পণ্য বোঝাই ট্রাকগুলো সুবিধা মত সময়ে ছাড়া হয়। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে ঘাটে ভিআইপি পারাপার করা হয়। ঘাটে যে সকল যানবাহন বিশৃঙ্খলা করে তাদের বিরুদ্ধে মোটরযান আইনে মামলা দেওয়া হয়। প্রতি মাসে প্রায় দেড় হাজারের অধিক গাড়ীর মামলা দেওয়া হয়। ঘাটে দালালরা পুলিশের চোখ এড়ানোর চেষ্টা করে কিন্তু পুলিশ দালালদের দৌরাত্ম্য বন্ধে কাজ করে যাচ্ছে। কোন প্রকার লেনদেন হয় না। জেলা ট্রাফিক বিভাগ ঘাটের যানবাহনের শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সর্বদা দায়িত্ব পালন করছে।
বিআইডব্লিউটিসি’র দৌলতদিয়া ঘাট কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক মোঃ খোরশেদ আলম জানান, বর্তমানে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌ-রুটে ১৪টি ফেরী যানবাহন পারাপারে চলাচল করছে। এরমধ্যে ৫টি রো রো, ২টি কে-টাইপ, ১টি মিডিয়াম, ৬টি ইউটিলিটি। ঈদসহ অন্যান্য উৎসবের সময়ে ফেরীর সংখা বৃদ্ধি পায়। পাটুরিয়া ঘাটের ৩নং ঘাটের সম্মুখের চ্যানেলটি সরু হওয়াতে ফেরী ক্রস করতে বিঘœ হচ্ছে। এ জন্য ফেরী চলতে বিলম্ব হয়। এতে সময় বেশী লাগে। উন্নত দেশে একটি ফেরীর আয়ুস্কাল ২০বছরের বেশী নয়। কিন্তু দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া রুটে চলাচলকারী বেশীরভাগ ফেরীর বয়স ৪০পার হয়েছে। ফেরীগুলো বয়সের ভারে নুইয়ে পড়েছে। ফেরীগুলোর আধুনিকায়নসহ সংস্কার করা প্রয়োজন।

নিউজটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো খবর
error: আপনি নিউজ চুরি করছেন, চুরি করতে পারবেন না !!!!!!