॥আসহাবুল ইয়ামিন রয়েন॥ রাজবাড়ী জেলা প্রশাসনের আয়োজনে গতকাল ২৫শে জানুয়ারী সকাল ১০টায় এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা পরিচালনা কমিটির সভা জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলীর সভাপতিত্বে কালেক্টরেটের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মোঃ ছাদেকুর রহমান, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দা নুরমহল আশরাফী, জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সৈয়দ সিদ্দিকুর রহমান, রাজবাড়ী সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা বেলা রানী সরকার, কাজী হেদায়েত হোসেন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা মীর মাহফুজা খাতুন মলি প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। এ সময় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষকগণসহ এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার কেন্দ্র সচিবগণ উপস্থিত ছিলেন।
সভার সভাপতি জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলী তার বক্তব্যে বলেন, বর্তমানে বিভিন্ন পরীক্ষার ফলাফল আগের তুলনায় ভালো হলেও যখন শিক্ষার্থীরা কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছে তখন দেখা যাচ্ছে তারা এসএসসি ও এইচএসসিতে ভালো রেজাল্ট করা সত্ত্বেও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় ঠিকছে না। এর প্রধান কারণ আগের তুলনায় বর্তমানে বিভিন্ন কারণে শিক্ষার্থীরা প্রাইমারী লেভেল থেকে হাই স্কুল ও কলেজ পর্যন্ত পরীক্ষায় পাশের জন্য গৎবাধা কিছু বিষয় আত্মস্থ করছে কিন্তু পাঠ্যবইয়ের খুটিনাটি বিষয়গুলো ঠিকমতো পড়ছে না। যার ফলে অতীতের যে কোন সময়ের তুলনায় বর্তমানে শিক্ষার মান অনেক নীচে নেমে গেছে। এর প্রধান কারণ শিক্ষকদের ক্লাস করানোর প্রতি অনীহা ও শিক্ষার্থীদের গোঁজামিল দিয়ে পড়াশোনা করা। যা আমাদের দেশের জন্য মোটেও সুখকর নয়। একটি জাতির উন্নয়নের প্রথম শর্ত হলো তার ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে মানসম্মত শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলা। আমরা যদি সেই মানসম্মত শিক্ষার ব্যবস্থা করতে না পারি তবে বর্তমান সরকার ঘোষিত রুপকল্প-২০২১ বাস্তবায়ন করা খুবই চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়াবে। সুতরাং শিক্ষক শিক্ষার্থী অভিভাবক সকলকে মানসম্মত শিক্ষার প্রতি অধিক গুরুত্ব দিয়ে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বিশ্ব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে হবে। আগামী ১লা ফেব্রুয়ারী থেকে এসএসসি ও সমমানের পাবলিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। আমাদের সকলকে অত্যন্ত সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশে এই পরীক্ষা গ্রহণ করতে হবে। যেদিন যে বিষয়ে পরীক্ষা হবে বোর্ডের নির্দেশনা মোতাবেক সেই বিষয়ের শিক্ষকগণ ঐ পরীক্ষায় গার্ড দিতে পারবে না। পরীক্ষার উল্লেখযোগ্য বিষয়, যেমন- ইংরেজী, অংক ও বিজ্ঞান সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোতে শক্ত অবস্থানে থেকে পরীক্ষা হলে সংশ্লিষ্ট সকলকে দায়িত্ব পালন করতে হবে। শিক্ষার্থীদের অবশ্যই সাড়ে ৯টার মধ্যে পরীক্ষার কক্ষে উপস্থিত হতে হবে। যখন পরীক্ষা কেন্দ্রে ১৪৪ ধারা জারি থাকবে তখন পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট ছাড়া অন্য কেউ পরীক্ষার হলে অবস্থান করতে পারবে না। কেন্দ্র সচিব বা পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট অন্য কেউ বা কোন কর্মকর্তা ভিজিটে গেলেও মোবাইল নিয়ে হলে প্রবেশ করতে পারবে না। যে সব শিক্ষক বিভিন্ন পরীক্ষায় সমালোচিত হয়েছেন তাদেরকে যতটুকু পারা যায় পরীক্ষার দায়িত্ব পালন থেকে বিরত রাখা হবে।
তিনি আরো বলেন, সাংবাদিকরা পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে পরীক্ষার হলে গেলে তাদেরকে কেন্দ্র সচিবের অনুমতি নিয়ে তার কর্ম সম্পাদন করতে হবে। পরীক্ষা কেন্দ্রের স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিসহ অন্যান্য সদস্যগণ, রাজনীতিবিদ বা গণ্যমান্য কোন ব্যক্তি পরীক্ষার হলে প্রবেশ করতে পারবে না। প্রতিটি কেন্দ্রে শিক্ষার্থীরা হলে ঢোকার আগে তাদের চেক করে ঢোকানো হবে। হলের প্রতিটি কক্ষে ঘড়িসহ পর্যাপ্ত লাইটের ব্যবস্থা করা হবে। পরীক্ষার্থীরা সাধারণ ক্যালকুলেটর ব্যবহার করতে পারবে, তবে কোন অবস্থাতেই মোবাইল ঘড়ি ব্যবহার করা যাবে না। পরীক্ষায় পর্যাপ্ত পরিমাণে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করাসহ ম্যাজিস্ট্রেটগণ তাদের দায়িত্ব পালন করবেন। যদি কোন শিক্ষার্থীর কাছে কোন ধরনের উত্তরপত্র সংশ্লিষ্ট কাগজ বা অন্য কোন কিছু পাওয়া যায় তবে সেই শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে পরীক্ষার আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কোন শিক্ষক দায়িত্ব পালনকালে অবহেলা করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পরীক্ষার পরিবেশ ভালো রাখাসহ সুন্দরভাবে পরীক্ষা অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে কোন প্রকার অনিয়মকে ছাড় দেওয়া হবেনা।
উল্লেখ্য, রাজবাড়ী জেলার পাঁচটি উপজেলায় মোট ১৯টি কেন্দ্রে এবারের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। সকল কেন্দ্রে একজন কেন্দ্র সচিব ও একজন সহকারী কেন্দ্র সচিবসহ ইনভিজিলেটরগণ দায়িত্ব পালন করবেন।
রাজবাড়ী জেলার সদর উপজেলার সদর কেন্দ্রে ২২২৯জন ও সুরাজ মোহিনী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ১৬৩৫জন এসএসসি, ভকেশনালে ৫৪৫জন ও দাখিল পরীক্ষায় ৪৮৭জন, পাংশা উপজেলার ১নং কেন্দ্রে ১৫৪৬জন ও মাছপাড়া কেন্দ্রে ১১৭৭জন এসএসসি, ভকেশনালে ৪৬০ জন ও দাখিল পরীক্ষায় ৩২৬জন, বালিয়াকান্দি উপজেলার ১নং কেন্দ্রে ১৯৯০জন ও ২ নং কেন্দ্রে ৮২৮জন এসএসসি, ভকেশনালে ২৫১জন ও দাখিলে ৩৭১জন, গোয়ালন্দ উপজেলায় ১০১১জন এসএসসি, ভকেশনালে ১০৪জন ও দাখিলে ১২৫ জন এবং কালুখালী উপজেলার ১নং কেন্দ্রে ১০০০ জন এসএসসি, মৃগী কেন্দ্রে ৮৫৪জন ভকেশনাল ও হোগলাডাঙ্গী দাখিল কেন্দ্রে ৩০০জন দাখিল পরীক্ষার্থীসহ জেলায় সর্বমোট ১৫হাজার ২৩৯জন মোট পরীক্ষার্থী এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে।