॥রফিকুল ইসলাম॥ মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে রাজবাড়ী জেলা পুলিশের আয়োজনে গতকাল ১৫ই ডিসেম্বর সন্ধ্যায় পুলিশ লাইন্সের ড্রিলশেডে পুলিশ মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা প্রদান, রচনা প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
পুলিশ সুপার সালমা বেগম,পিপিএম-সেবা’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব কাজী কেরামত আলী।
সম্মানিত বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন রাজবাড়ী-২ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ জিল্লুল হাকিম এবং সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য কামরুন নাহার চৌধুরী লাভলী। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলী। অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন শেরে বাংলা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা চায়না সাহা।
জেলা পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাগণ ও আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দসহ সংবর্ধিত ৬৫জন পুলিশ মুক্তিযোদ্ধাগণ এবং রচনা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী-শিক্ষকগণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সংসদ সদস্য আলহাজ্ব কাজী কেরামত আলী বলেন, মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। তাদেরকে গভীর শ্রদ্ধা জানাই। অনেকে আছেন যারা বাংলাদেশে থেকে এখনো পাকিস্তানের স্বপ্ন দেখেন। তারা বোকার স্বর্গে বসবাস করছে। তাদের স্বপ্ন এই বাংলাদেশে আর কখনোই বাস্তবায়ন হবে না। জামাত ইসলাম ও পাকিস্তানের দোসররা এখনও ষড়যন্ত্র করছে। তাদের সকল ষড়যন্ত্রকে প্রতিহত করা হবে। মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশ্যে তিনি আরও বলেন, আপনারা অস্ত্র জমা দিয়েছেন কিন্তু ট্রেনিং জমা দেন নাই। প্রয়োজন হলে আপনারা আবার আরেকটি মুক্তিযুদ্ধ করবেন। জননেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার ষড়যন্ত্র চলছে। দেশের স্বার্থে তাকে বাঁচাতে হবে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে বিশ্বের বুকে উন্নত দেশে পরিণত হবে। আপনারা দোয়া করবেন, যতদিন বেঁচে আছি ততদিন যেন মানুষের সেবা করে যেতে পারি।
সম্মানিত বিশেষ অতিথির বক্তব্যে রাজবাড়ী-২ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ জিল্লুল হাকিম বলেন, এখন বিজয়ের মাস। ১৯৭১ সালে নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের শেষে এই মাসেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বিশ্বের মানচিত্রে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে অনেক রাজনীতি চলছে। শেখ হাসিনা ছাড়া মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য কেউ কিছু করে নাই। বঙ্গবন্ধুর ডাকে দেশটাকে হানাদার বাহিনীর হাত থেকে বাঁচানোর জন্য আমরা যুদ্ধ করেছি। কোন কিছু পাওয়ার আশায় করি নাই। বিভিন্নভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের বিভেদ সৃষ্টি করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমরা মুক্তিযোদ্ধারা সব সময় এক থাকার চেষ্টা করেছি। মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য প্রথম ভাতা ৩শত টাকা তা শেখ হাসিনাই দিয়েছিল। ধীরে ধীরে শেখ হাসিনাই তা ১০ হাজার টাকা করেছেন। মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের জন্য চাকরীর ব্যবস্থা করেছেন। তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের সবচেয়ে বড় যে সম্মান দিয়েছেন তা হলো রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন। জাতীয় পতাকায় আবৃত করে স্যালুট দিয়ে সেই সম্মান জানানো হচ্ছে। এর চেয়ে বেশী আর কিছু আশা করতে পারি না। এ কারণে শেখ হাসিনার জন্য আমাদের কিছু কর্তব্য এসে যায়। আমাদের দুঃখ হয়েছিল, যখন দেখেছিলাম নিজামী-মুজাহিদরা জাতীয় পতাকাবাহী গাড়ীতে চলাফেরা করতো আর পুলিশ মুক্তিযোদ্ধারা তাদেরকে স্যালুট দিত। আমরা মুক্তিযোদ্ধারা শেখ হাসিনার জন্যই আমাদের সম্মান ফিরে পেয়েছি। আমাদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন হচ্ছে। রাজাকারদের ফাঁসি হয়েছে। এখনও ষড়যন্ত্র চলছে। আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের জনগণকে সাথে নিয়ে সকল ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করতে হবে। উন্নয়নের জন্য, সমৃদ্ধির জন্য, দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য জননেত্রী শেখ হাসিনাকে সমর্থন দিতে হবে। আজকের নতুন প্রজন্ম অনেক শক্তিশালী, তারা মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে। তারাই দেশকে সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে এবং মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করবে।
সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য কামরুন নাহার চৌধুরী লাভলী বলেন, সরকার মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, শিক্ষা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, মাতৃত্বকালীন ভাতা, হিজড়া ভাতাসহ বিভিন্ন ভাতা দিচ্ছে। দুঃস্থ, অসহায় মানুষকে ঘর করে দিচ্ছে। এক সময় কোন মানুষ আর গৃহহীন থাকবে না। আগের মতো বিদ্যুতের লোডশেডিং আর নাই। মানুষ শান্তিতে দিন কাটাচ্ছে। জননেত্রী শেখ হাসিনা সর্বস্তরের মানুষকে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। বাংলাদেশকে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। বিশ্বের সৎ রাষ্ট্রপ্রধানদের মধ্যে তিনি তৃতীয় স্থান অধিকার করেছেন। সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধ থাকবো এবং জননেত্রী শেখ হাসিনাকে আবারও ক্ষমতায় আনবো।
জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলী বলেন, সরকার জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতাসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করেছে। তাদেরকে যথাযথ সম্মান দেয়া হচ্ছে। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত ভিশন অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই আমরা উন্নত দেশে পরিণত হতে পারবো।
পুলিশ সুপার সালমা বেগম,পিপিএম-সেবা বলেন, কারো অনুদানে নয় যুদ্ধ করে ৩০ লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে এই দেশ আমরা পেয়েছি। মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। তাদেরকে সম্মান করবো। আমার পিতাও একজন মুক্তিযোদ্ধা। তার মধ্যে যা পেয়েছি আজকের অনুষ্ঠানের মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যেও তারই প্রতিচ্ছবি দেখছি। আমরা ইতিহাস বিকৃতকারীদের ঘৃণা করবো। বাঙালি জাতির জন্য যে মানুষটি সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন, জেল খেটেছেন, এমনকি জীবন উৎসর্গ করেছেন সেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধুসহ সকল মুক্তিযোদ্ধাকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি। ২০৪১ সালের মধ্যেই দেশ উন্নত ও সমৃদ্ধশীল হবে, আমরা সবাই সেখানে একসাথে থাকবো।
অতিথিদের বক্তব্যের শেষে ৬৫জন পুলিশ মুক্তিযোদ্ধাদের ফুল ও ক্রেস্ট দিয়ে সংবর্ধনা প্রদানসহ ‘একাত্তরের নয় মাস’ এবং মুক্তিযুদ্ধ ও প্রেক্ষাপট’ শীর্ষক রচনা প্রতিযোগিতায় বিজয়ী শিক্ষার্থীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। সর্বশেষে জেলা শিল্পকলা একাডেমীর শিল্পীরা মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করে।