শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ০৩:১২ অপরাহ্ন
Logo
সংবাদ শিরোনাম ::
বিশ্বব্যাপী ওমিক্রন সংক্রমণ বৃদ্ধিতে আইসোলেশন মেয়াদ অর্ধেক করার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ওমিক্রন ভেরিয়েন্ট ডেল্টা ও বিটার তুলনায় তিন গুণের বেশী পুনঃ সংক্রমন ঘটাতে পারে : গবেষণা প্রতিবেদন জাতিসংঘ ভবনের বাইরে এক বন্দুকধারী গ্রেফতার শান্তি চুক্তির পঞ্চম বার্ষিকী উপলক্ষে কলম্বিয়া সফর জাতিসংঘ মহাসচিব সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানগণের সাক্ষাৎ করোনা ভাইরাসের সংক্রমন বেড়ে যাওয়ায় অস্ট্রিয়ায় লকডাউন করোনা সংক্রমণ বাড়ায় ইউরোপের বিভিন্ন দেশে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ ভারতে নতুন করে ১০ হাজার ৩০২ জন করোনায় আক্রান্ত নভেম্বর মাসজুড়ে করাঞ্চলে কর মেলার সেবা পাবেন করদাতারা ঔপনিবেশিক আমলের ফৌজদারী কার্যবিধি যুগোপযোগী হচ্ছে

শারদীয় দুর্গোৎসব বা অকাল বোধন

  • আপডেট সময় শুক্রবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

# এডঃ লিয়াকত আলী বাবু # শারদীয় দুর্গোৎসব। দেবী দুর্গাকে স্বর্গীয় দক্ষিণায়ন নিদ্রামগ্ন সময়ে জাগ্রত করার জন্য অকালে যে বিশেষ পূজার প্রচলন হয়েছিল, সেই পূজাকেই সনাতন ধর্মত্বত্ত্ব মতে শারদীয় দুর্গোৎসব বলে অভিহিত করা হয়ে আসছে।
আদি কালের পৌরাণিক বর্ণনা অনুযায়ী, মানুষ্য হিসাবে সূর্যবংশীয় রাজা ‘সুরথ’ বসন্তকালে পৃথিবী নামক মর্ত্যে সর্বপ্রথম দেবী দুর্গার পূজার প্রচলন করেছিলেন। তবে আদি সনাতন ধর্মত্বত্ত্ব অনুযায়ী, বসন্ত ঋতুর চৈত্র মাসের শুক্ল পক্ষে দেবী দুর্গাকে প্রথমবারের মতো পূজা করেছিলেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ স্বয়ং। এরপর দ্বিতীয়বার দেবী দুর্গাকে পূজা করেন ব্রম্মা। ব্রম্মা সে যুগের ‘মধু’ ও ‘কৈটভ’ নামের দুই ভয়ানক দৈত্যের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য দেবী দুর্গাকে পূজা করেছিলেন। তৃতীয়বার দেবী দুর্গাকে পূজা করেছিলেন ‘মহাদেব’ ত্রিপুরাসুরের মহাদুর্যোগ যুদ্ধের সময়। এরপর সূর্যবংশীয় রাজা ‘সুরথ’ই প্রথম মনুষ্য হিসাবে সর্বপ্রথম মর্তে দেবী দুর্গার পূজার প্রচলন করেছিলেন। সেই থেকে দুর্গা পূজা প্রধানতঃ বসন্তকালের চৈত্র মাসের শুক্ল পক্ষের সময়ের মধ্যে অনুষ্ঠিত হতো এবং সেই পূজাই ছিল দেবী দুর্গার মূল পূজা উৎসব। বসন্ত ঋতুতে অনুষ্ঠিত সেই মূল পূজাকে বলা হতো বাসন্তী পূজা। এখনো বাসন্তী পূজা চলমান আছে। দেব-দেবীদের জন্য শরৎকালটাকে দক্ষিণায়ন বা নিদ্রাকাল হিসাবে গণনা করা হতো। কিন্তু লঙ্কেশ^র ‘রাবন’ কর্তৃক ধরণী কন্যা সীতাকে অপহরণ করা এবং লঙ্কেশ^র রাবনের দুর্র্গম অশোক বন থেকে সীতাকে উদ্ধারের জন্য শ্রীরামচন্দ্র দেব-দেবীর আরাধনা করতে গিয়ে দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গার সন্ধান পেয়ে যান। শ্রীরামচন্দ্র দেবী দুর্গার সন্ধান পান ভগবান ব্রম্মার মাধ্যমে। তবে যে সময়ে শ্রীরামচন্দ্র দেবী দুর্গার সন্ধান পান তখন চলছিলো দক্ষিণায়ন বা দেব-দেবীগণের সুখ নিদ্রাকাল। সীতা উদ্ধারের অতীব জরুরী প্রয়োজনে বসন্তকালের পরিবর্তে শরৎকালেই দেবী দুর্গার অর্চনা শুরুর আয়োজন করতে চান শ্রীরামচন্দ্র। কিন্তু প্রশ্ন হলো দক্ষিণায়ন বা দেব-দেবীদের সুখ নিদ্রাকালে দেবী দুর্গা কি এই অকাল অর্চায় জাগ্রত হবেন? অকালে কি কখনো বোধন চলে? কিন্তু আর যে কোন উপায় ছিল না রামচন্দ্রের কাছে। ব্রম্মা আদেশ করেছেন শুক্লা ষষ্ঠিতে বোধন করতে। দেব-দেবীদের নিদ্রামগ্ন কালেই শ্রীরামচন্দ্র দেবী দুর্গাকে মহা-অর্চনার মাধ্যমে জাগতিকে জাগ্রত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। শুরু হয় শ্রীরামচন্দ্রের মহাপ্রবর অকাল বোধন আয়োজন। শ্রীরামচন্দ্র নিজের হাতে মাটি দিয়ে দেবী দুর্গাকে গড়েছিলেন (আপনি গড়িলা রাম প্রতিমা মৃন্ময়ী)। ষষ্ঠির সন্ধ্যা লগ্নে বেলগাছের নীচে দেবী দুর্গার বোধন শুরু হয়েছিল(সায়াহ্ন কালেতে রাম করিল বোধন নববৃক্ষ তলে)। এরপর শুরু হয় মহা-আরাধনা। সে আরাধনার কোন বিরতি ছিল না। এ ভাবে এক নাগাড়ে অবিরত নয়নবিদ্ধ বোধনের মহা-কর্মযজ্ঞ চলাকালে আশ্বিন মাসের শুক্ল পক্ষের ষষ্ঠ দিনে জাগ্রত হন দেবী দুর্গা। এরপরেও চলতে থাকে আনত নয়না অধীর চিত্তের মহা-অরাধনা। সপ্তমীর সকালে স্নান করে পূজায় বসতে হয়। রামচন্দ্র সপ্তমীতে ও মহা-অষ্টমীতে সকালে স্নান সেরে বোধনে বসেছিলেন। কিন্তু এ বোধনে দেবী দর্শন দিলেন না। এদিকে লঙ্কেশ^র রাবনও অন্তর আকৃষ্টতায় দেবী দুর্গার একনিষ্ঠ চিত্ত উজারি নিত্য পূজারী ছিলেন। দুর্গা পূজায় রাবনের অন্য মনস্কতাপূর্ণ কোন ছেদ ছিল না কভু। দেবী দুর্গা তখন উভয় সংকটে মধ্যালয়ে অলক্ষ্যে আবির্ভূত। দুর্গাপূজার মূল মনস্কাম্য উপকরণ হলো গভীর রঙের দুর্লভ নীলপদ্ম। ঐশ্বরিক আদেশে শ্রীরামচন্দ্র ১০৮টি নীল পদ্ম যোগাড় করে দেবী দুর্গার আরাধনার পূজায় বসে যান। আর দেবী দুর্গা তখন ভক্তের মন পরীক্ষা করার জন্য নিজেই ১০৮টি নীল পদ্মের মধ্য থেকে একটি পদ্ম অলক্ষ্যে সরিয়ে নেন। রামচন্দ্র দেখতে পেলেন যে নীল পদ্ম একটি কম। শ্রীরামচন্দ্র ছিলেন নীল পদ্ম লোচন। তখন তিনি পূজা ছেড়ে না দিয়ে নিজের নীল রঙা চক্ষু উৎপাটন করে যখন বোধন পর্ব শুরু করতে যাচ্ছিলেরন তখন দেবী দুর্গা সন্তুষ্ট হয়ে রামচন্দ্রের নয়ন রক্ষা করে তাকে যুদ্ধ জয়ের বর প্রদান করেন। শুরু হয় দেবী দুর্গার আশীর্বাদপুষ্ট শ্রীরামচন্দ্রের সাথে রাবনের ভয়ঙ্কর যুদ্ধ। যুদ্ধের দিন প্রহর সপ্তমী থেকে মহাঅষ্টমীতে চলমান থাকে। মহানবমীতে রাবনের দশ মাথা শ্রীরামচন্দ্রের অস্ত্রের আঘাতে গর্দানচ্যুত হলেও দেবী দুর্গার আরাধনায় মহানবমীতেই আবার মস্তক যুক্ত হয়ে স্বরূপে ঘুরে দাড়ায় মহাশক্তিশালী রাবন। কিন্তু শ্রীরামচন্দ্র দেবী দুর্গার বোধনে পাওয়া বর সামনে রেখে আবার শেষবারের মতো ঝাঁপিয়ে পড়েন রাবনের উপর। রাবনের দশ মাথা শেষবারের মত গর্দানচ্যুত হয়ে রাবনের পরাজয় ঘটে। আর সেই যুদ্ধ জয়ের উৎসব শুরু হয় দশমীতে। প্রকৃত পক্ষে দশমী হলো অসুর বধে যুদ্ধ জয়ের মহা উৎসব। দশমীতে যুদ্ধ জয়ের উৎসব হওয়ার কারণে ভক্তবৃন্দ আরাধনার চাইতে মহা আনন্দ-উৎসবে বেশী মশগুল থাকে। সেই থেকে শরৎকালের আশ্বিন মাসের শুক্ল পক্ষের দুর্গোৎসবকে শারদীয় দুর্গোৎসব হিসাবে দেবী দুর্গার অর্চনা হয়ে আসছে এবং চৈত্র মাসের শুক্ল পক্ষের দুর্গা পূজাকে বাসন্তী পূজা নামে অভিহিত করা হয়ে থাকে। প্রকৃতপক্ষে আশ্বিন মাস শরৎ ঋতুর মাস হিসাবে আশ্বিন মাসের শুক্ল পক্ষের পূজাকে শরতীয় বা শারদীয় দুর্গোৎসব বলা হয়। তবে সনাতন ধর্মে দুর্গাপূজার সাথে দেবীর মূল বাহন সিংহকে বিশেষ স্থানে অধিষ্ঠিত করে পূজা করা হয়ে থাকে। দেবী দুর্গার মূল বাহন হলো সিংহ। তাই সনাতন ধর্মের নিগুঢ়তম চেতনায় দেবী দুর্গার সাথে দেবী দুর্গার বাহন সিংহকেও বিশেষভাবে পূজা করা হয়ে থাকে। কারণ দেবী পুরাণে বিশেষভাবে উল্লে¬খ করা হয়েছে যে, ধ্যানমগ্ন সিংহের শরীরের বিভিন্ন স্থানে বিঞ্চু, শিব ও দেবী দুর্গার মতো অনেক দেব-দেবী অবস্থান করে থাকে। অপর এক মন্ত্রে সিংহকে বিষ্ণুর আরেকটি বিশেষ রূপ হিসাবে অভিহিত করা হয়েছে। কালিকা পুরাণের বিশেষ অনুষঙ্গ অনুসারে মূল বিষয়টি এমন যে, দেবী দুর্গাকে বহন করার জন্য শিব শবদেহ, ব্রম্মা ও বিষ্ণু সিংহের মূর্তি ধারণ করেছিলেন। তবে পদ্মপুরাণের বর্ণনা অনুযায়ী, দুর্গার ক্রোধ থেকে সিংহের জন্ম হয়েছিল। সে কারণেই দেবী দুর্গার বাহন সিংহকে ‘মহাসিংহ’ ‘বাহন কেশরী’ ‘ধূতসট’ ইত্যাদি উপাধিতে অভিসিক্ত করা হয়ে থাকে। কাজেই দুর্গা পূজার মূল বেদীতে ‘মহাসিংহ’ বিশেষভাবে পূজিত হয়ে থাকে, যে বিশেষ অর্চনা সকল পূরাণেই স্বীকৃত। কৃত্তিবাসীয় রামায়নের বর্ণনানুযায়ী রাবন বধের উদ্দেশ্যে শ্রীরামচন্দ্র অকালে অর্থাৎ বসন্তকালের পরিবর্তে শরৎকালে দেবী দুর্গার অর্চনা করার পর থেকে শরৎ ঋতুর অধীন আশ্বিন মাসের শুক্ল পক্ষের ষষ্ঠি থেকে দশমী পর্যন্ত সনাতন ধর্মে দুর্গা পূজা উদযাপিত হয়ে আসছে। দুর্গাপূজা রামের পূজা হলেও রামায়নে দুর্গা পূজার উপরের বর্ণনা নাই। আছে কৃত্তিবাসীয় রামায়ন ও কালিকা পুরাণে। তবে পুরাণে বলে রামের মঙ্গলের জন্য দেবগণ করেছিলেন পূজার আয়োজন। সেই থেকে চলে আসছে এই অকাল বোধন উৎসব বা শারদীয় দুর্গোৎসব। লেখক ঃ আইনজীবী ও মুক্ত কলামিষ্ট।

নিউজটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো খবর
error: আপনি নিউজ চুরি করছেন, চুরি করতে পারবেন না !!!!!!