॥সংবাদ বিজ্ঞপ্তি॥ যথাযথ মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে গত ২১শে ফেব্রুয়ারী পাকিস্তানের ইসলামাবাদে বাংলাদেশ হাইকমিশনে মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদ্যাপিত হয়েছে।
চলমান করোনা পরিস্থিতির মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে হাইকমিশন প্রাঙ্গণে দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার আয়োজনের মাধ্যমে এ বিশেষ দিনটি উদ্যাপন করা হয়।
সকালে দূতালয় প্রাঙ্গনে হাইকমিশনের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ইসলামাবাদে বসবাসকারী প্রবাসী বাংলাদেশীগণ অংশগ্রহণে অনুষ্ঠান শুরু হয়।
অনুষ্ঠানের শুরুতে কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ইসলামাবাদে বসবাসকারী বাংলাদেশীগণ কালোব্যাজ ধারণ করেন। সকলের উপস্থিতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করেন পাকিস্তানে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মোঃ রুহুল আলম সিদ্দিকী।
দিবসটি উপলক্ষে ভাষা শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের লক্ষ্যে দূতালয় প্রাঙ্গণে একটি অস্থায়ী শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয় এবং দূতালয় প্রাঙ্গণ বাংলা বর্ণমালা ও ভাষা দিবসের পোস্টারে সুসজ্জিত করা হয়। হাইকমিশনার মোঃ রুহুল আলম সিদ্দিকী হাইকমিশনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিয়ে শহীদ মিনারে পুস্পস্তবক অর্পণ করেন। প্রবাসী বাংলাদেশীগণও শহীদ মিনারে পুস্পস্তবক অর্পণ করে শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
এ সময় সকলে ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারী, আমি কি ভুলিতে পারি’ গানটি গাইতে থাকেন। পুষ্পার্ঘ অর্পণের পর ভাষা শহীদদের প্রতি সম্মান জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে হাইকমিশনারের সভাপতিত্বে মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে আলোচনা পর্ব শুরু হয়। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্র মন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী প্রদত্ত বাণী পাঠ করা হয়।
এরপর ভাষা আন্দোলনে ভাষা শহীদ ও ভাষা সৈনিকদের গৌরবোজ্জ্বল অবদানের কথা ও দিনটিকে ইউনেস্কো কর্তৃক আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দানের বিষয়টি নিয়ে সার্কোর SARCO (SAARC Arbitration Council) মহাপরিচালক মোঃ হেলাল চৌধুরীসহ হাইকমিশনের অন্যান্য কর্মকর্তাগণ আলোচনায় এর তাৎপর্য তুলে ধরেন।
মোঃ হেলাল চৌধুরী বাংলাদেশে বিচারকার্যে বাংলা ভাষার ব্যবহারের ফলে আইনের অপব্যাখ্যার পথ রুদ্ধ হয়েছে বলে তার বক্তব্যে জানান।
হাইকমিশনার মোঃ রুহুল আলম সিদ্দিকী তার বক্তৃতায় বাহান্নর ২১শে ফেব্রুয়ারীতে মাতৃভাষা বাংলাকে রক্ষার জন্য প্রাণ উৎসর্গকারী শহীদানদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা প্রকাশ করেন। তিনি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ সকল ভাষা সৈনিকের প্রতি।
তিনি বলেন যে, ভাষা আন্দোলন আমাদের জাতীয় ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। ১৯৪৮ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবীতে গঠিত সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের নেতৃত্ব দেন ও কারাবরণ করেন। তাঁর নেতৃত্বে মাতৃভাষার অধিকার আন্দোলন জোরদার হয় ও ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারী রফিক, সালাম, বরকত, জব্বার, শফিউদ্দিনসহ আরও অনেকের আত্মত্যাগের বিনিময়ে তা চূড়ান্ত রূপ পায়।
তিনি আরও বলেন, ভাষা আন্দোলন ছিলো বাঙ্গালী জাতির মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকারের পাশাপাশি বাঙ্গালী জাতির নিজস্ব জাতিসত্তা, স্বকীয়তা ও সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্য রক্ষার আন্দোলন। পরবর্তীতে অমর একুশের অবিনাশী চেতনাই বাঙ্গালীদের যুগিয়েছে স্বাধিকার, মুক্তিসংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে অফুরন্ত প্রেরণা ও অসীম সাহস, যার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সর্বকালে সর্বশেষ্ঠ বাঙ্গালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বাঙ্গালী জাতির এই মাতৃভাষার অধিকার আন্দোলনই সারা বিশ্বের সকল ভাষাভাষির জন্য ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে।
হাইকমিশনার আনন্দের সাথে জানান, পাকিস্তানের ‘লোক ও প্রচলিত ঐতিহ্য বিষয়ক জাতীয় ইনস্টিটিউট’ Lok Virsa ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ উদ্যাপনের উদ্দেশ্যে দিনব্যাপী ‘‘ষষ্ঠ পাক্ষিক মাতৃভাষা সাংস্কৃতিক উৎসব” আয়োজন করেছে। উল্লেখ্য, Lok Virsa পাকিস্তানের ভাষা, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও প্রচারের কাজ করে থাকে। পাকিস্তানে এ ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজনে বাঙ্গালী জাতির মাতৃভাষা আন্দোলনের এক নতুন ফসল ও গর্বের বলে তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি আরও বলেন, এ বছর মহান ‘‘শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস” বাংলাদেশের জন্য বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি এ প্রেক্ষিতে বলেন, যে মহান নেতার নেতৃত্বে বাঙ্গালী জাতি মাতৃভাষার অধিকার ও স্বাধীনতা অর্জন করেছিল, এ বছর সেই মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘‘জন্ম শতবার্ষিকী” উদ্যাপন করা হচ্ছে এবং একই সাথে এ বছর বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতার ‘‘সুবর্ণ জয়ন্তীও” উদ্যাপন করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর রূপকল্প ২০২১ বাস্তবায়িত হয়েছে এবং রূপকল্প ২০৪১ অর্থাৎ সমৃদ্ধ, শোষনহীন, বঞ্চনাহীন উন্নত বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নও বাস্তবায়নের পথে। জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলতে পারলে যারা রক্ত দিয়ে বাংলাদেশ তৈরি করে দিয়ে গেছেন তাদের সেই অবদান ও আত্মোৎসর্গসফল হবে বলে তিনি মনে করেন।
হাইকমিশনার মোঃ রুহুল আলম সিদ্দিকী ভাষা আন্দোলন এবং স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে যে যেখানে আছে সেখান থেকে সকলে একযোগে কাজ করে বাংলাদেশকে সমৃদ্ধ ও উন্নত করে তোলার মধ্য দিয়ে জাতির পিতার ‘সোনার বাংলা’ স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য সকলকে আহবান জানান ।
আলোচনা শেষে ভাষা শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে মোনাজাত করা হয়। অনুষ্ঠান শেষে অতিথিদের মাঝে বাংলাদেশী খাবার পরিবেশন করা হয়।