॥আন্তর্জাতিক ডেস্ক॥ কলম্বোস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশন গতকাল ২১শে ফেব্রুয়ারী যথাযোগ্য মর্যাদায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস(আইএমএলডি)-২০২১ পালন করেছে। এবারের উদযাপনের মূল প্রতিপাদ্য ছিল ‘বন্ধুত্বের জন্য ভাষা’। বাংলাদেশ হাইকমিশন এবং শ্রীলঙ্কা সরকারের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এ উদযাপনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর উপরও বিশেষ আলোকপাত ছিল।
করোনা মহামারীর প্রতিবন্ধকতার কারণে দিবসটি উদযাপনের মূল অংশছিল একটি ভার্চুয়ালঅনুষ্ঠান। এতে শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে প্রধান অতিথি হিসেবে একটি ভিডিও বার্তাদেন, যেখানে তিনি শ্রীলঙ্কার শিক্ষার্থীদের মধ্যে বহুভাষিকতার মূল্যবোধ প্রসারের জন্য বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনকে ধন্যবাদ জানান। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি শ্রীলঙ্কার শিক্ষা মন্ত্রী অধ্যাপক জিএল পেইরিসেরও একটি ভিডিও বার্তাও প্রদর্শিত হয়। প্রফেসর পেইরিস শিক্ষা ব্যবস্থায় বিভেদ অতিক্রমে ভাষার ভূমিকার উপর জোর দেন।
হাইকমিশনার কর্তৃক সঞ্চালিত অনুষ্ঠানটিতে ছিল একটি প্যানেল আলোচনা এবং একটি বহুভাষিক সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। প্যানেল বক্তাদের মধ্যে ছিলেন শ্রীলঙ্কার বিশিষ্ট ভাষাবিদ ও কলম্বো বিশ্ববিদ্যালয়ের এমেরিটাস অধ্যাপক জেবিডিসানায়াকে, জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী, ভারতের হাইকমিশনার, ইতালির রাষ্ট্রদূত এবং মালয়েশিয়ার হাইকমিশনার। বক্তাগণ বহুভাষিকতার বিষয়ে যাঁর যাঁর দেশের অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন। হাইকমিশনার তারেক তাঁর বক্তব্যে ভাষার ভ্রাতৃত্বের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ বিশ্ব গঠনে সকলকে আহ্বান জানান।
ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানের শুরুতে অমর একুশের গানটি শ্রীলঙ্কার একটি সংগীত গোষ্ঠী বাংলায় পরিবেশন করে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের উপরে মিশনের নিজস্ব উদ্যোগে নির্মিত একটি তথ্যচিত্রও প্রদর্শিত হয়।
দিবসটি উপলক্ষে হাইকমিশনের উদ্যোগে শ্রীলঙ্কার শিক্ষা মন্ত্রনালয় হাইব্রিড পদ্ধতিতে (শারীরিক উপস্থিতির প্রয়োজনীয়তা সীমাবদ্ধ করার জন্য) গত ৮ থেকে ১৫ই ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত একটি চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োজন করে যেখানে করোনা মহামারী পরিস্থিতি সত্ত্বেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিশু কিশোর অংশ নেয়। ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয় এবং চিত্রাংকনসমূহ প্রদর্শন করা হয়।
কলম্বো প্লান সচিবালয়, সার্ক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, মালদ্বীপের সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, স্বামী বিবেকানন্দ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, আলিয়ঁসফ্রঁসেজ, রাশিয়ান সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, ইরানি সংস্কৃতি কেন্দ্র, শ্রীলঙ্কা স্কাউট এসোসিয়েশন ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় কয়েকটি মনোমুগ্ধকর(প্রাক রেকর্ড করা) সাংস্কৃতিক পরিবেশনা উপস্থাপন করে ।
রাষ্ট্রদূত/হাইকমিশনার এবং কূটনীতিকবৃন্দ, স্থানীয় বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, স্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকগণ, সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিনিধিবৃন্দ এবং শিশুসহ উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে যোগ দেয়। অনুষ্ঠানটি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলিতে সরাসরি প্রচারিত হয়।
ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানের আগে হাইকমিশনে স্থানীয় স্বাস্থ্য নির্দেশিকা মেনে দিবসটি অভ্যন্তরীণ ভাবে পালন করা হয়। এরই অংশ হিসাবে মিশন কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে হাইকমিশনার তারেক মোঃ আরিফুল ইসলাম দূতালয়ে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা অর্ধনমিতকরেন। ভাষা শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধার নিদর্শন করে ১মিনিটের নীরবতা পালন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ, মহামান্য রাষ্ট্রপতি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বাণী পাঠ, তথ্যচিত্র প্রদর্শন এবং ভাষা শহীদের স্মরণে বিশেষ প্রার্থনা ছিল উদযাপনের অন্যান্য অংশ।
হাইকমিশন আজ ২২শে ফেব্রুয়ারী শ্রীলঙ্কা স্কাউট অ্যাসোসিয়েশনের সহযোগিতায় স্থানীয় একটি হাসপাতালে রক্তদান কর্মসূচীর আয়োজন করেছে।