॥শিহাবুর রহমান॥ সামাজিক উন্নয়নে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ শ্লোগানে অতি সম্প্রতি গঠিত প্রান্তিক জনকল্যাণ সংস্থার উদ্যোগে পাংশা উপজেলার কসবামাজাইল ইউনিয়নের ভাতশালায় গতকাল ২৪শে জুন সকাল ১০টায় মাদক বিরোধী র্যালী ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
র্যালীতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অ্যাডজুটেন্ট জেনারেল ও প্রান্তিক জনকল্যাণ সংস্থার প্রধান উপদেষ্টা মেজর জেনারেল এস এম মতিউর রহমান, এএফডব্লি¬উসি, পিএসসি। র্যালীটি কলিমহর কলেজ সংলগ্ন এলাকা থেকে বের হয়ে কেওয়াগ্রামের লুৎফর রহমান উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে এসে শেষ হয়। পরে সেখানে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মেজর জেনারেল এস এম মতিউর রহমান বলেন, মাদক যে সেবন করে সে শুধু নিজেই ধ্বংস হয় না। ধ্বংস করে দেয় তার পরিবারকে। ধ্বংস করে সমাজকে। এক পর্যায়ে সে জড়িয়ে পড়ে সন্ত্রাসের দিকে।
তিনি বলেন, ৭১ সালের পর থেকে এই ঐতিহ্যবাহী কসবামাজাইল ইউনিয়নে কিছু অশিক্ষিত, বর্বর ও সন্ত্রাসী মানুষকে জিন্মি করে অরাজকতা পরিস্থিতি সৃষ্টি করে চলেছে। এরা মাদক সেবন করে। মাদকের জন্য অপরাধ করে। সম্প্রতি এই সন্ত্রাসীরা এলাকায় বাড়ী ঘর ভাংচুর ও লুটপাট করছে। সেই সাথে এলাকার মা-বোনদের ওপরও তারা নির্যাতন করছে। এদের সংখ্যা কিন্তু বেশী নয়। এরা যদি তাদের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ছেড়ে না দেয়। তাহলে একদিন এলাকার জনগণই তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে। প্রান্তিক জনকল্যাণ সংস্থার যে উদ্যোগ নিয়েছে তা সত্যি মহতী উদ্যোগ। আজকের এই অনুষ্ঠান থেকে আপনারা শিক্ষা গ্রহণ করবেন। কেউ যাতে মাদকাসক্ত না হয়। সে বিষয়ে আপনারা সচেতন হবেন।
প্রান্তিক জনকল্যাণ সংস্থার সভাপতি কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধ্যাপক ডাঃ সৈয়দ আনোয়ারুজ্জামানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সহ-সভাপতি ও ঢাকা সিটি কলেজের অধ্যাপক কাজী মিনহাজুল আলম, সাধারণ সম্পাদক ও ডিডিসি. লিমিটেডের প্রকৌশলী শাহ মোঃ রুহুল কবির, কসবামাজাইল ইউনিয়নের প্রাক্তণ চেয়ারম্যান মোঃ খুরশিদ আনোয়ার খান, ও নুর মোহাম্মদ সুলতান। অনুষ্ঠানে উপস্থাপনা করেন নির্বাহী সদস্য ও কর্মসংস্থান ব্যাংকের ব্যবস্থাপক শাহ মুহাম্মদ ইনামুল কবীর।
আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক ডাঃ সৈয়দ আনোয়ারুজ্জামান বলেন, এই ইউনিয়নে আমরা দুটি সমস্যাকে চিহ্নিত করেছি। একটি হলো মাদক ও অপরটি হলো প্রাথমিক শিক্ষা। মাদকাসক্ত একটি ব্যাধি। মাদক সেবনকারীরা জটিল ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়। যার চিকিৎসা ব্যয় বহুল। চিকিৎসা নিলেও আগের মতো ভাল হয় না। এছাড়াও মাদক সেবনের জন্য সে এলাকায় ছুরি ছিনতাইসহ নানা অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়ে। তাই কেউ যাতে মাদক সেবন না করে সেদিকে সবাইকে খেয়াল রাখতে হবে।
তিনি আরো বলেন, আমাদের এখানে প্রাথমিক শিক্ষার মান অনেক কমে গেছে। এই প্রাথমিক শিক্ষার উপর নজর দিতে হবে। আমরা আগামীতে এলাকার ৩টি স্কুলের সেরাদের মধ্যে শিক্ষা সহায়তা প্রদান করবো। আপনারা আপনাদের সন্তানের প্রতি নজর দিন। কারণ আপনার সন্তানই একদিন ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হবে। আমরা কসবামাজাইলকে একটি সুশিক্ষিত, মাদকমুক্ত ও সন্ত্রাসমুক্ত জনপদ গড়তে চাই।
অধ্যাপক কাজী মিনহাজুল আলম বলেন, ঢাকার ৩২নম্বরে আমার এক প্রাক্তন ছাত্র ছিল। তার নাম সুমন। এসএসসিতে সে স্টার মার্ক নিয়ে পাশ করেছিল। সে অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র ছিল। পরবর্তীতে সেই সুমন মাদকাসক্ত হয়ে যায়। সে শুধু নিজেই ধ্বংস হয়নি। ধ্বংস করে দেয় তার পরিবারকে। এটি আমি খুব কাছ থেকে দেখেছি। আসুন আমরা সচেতন হই। মাদক ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াই। শিক্ষা, খেলাধুলা ও সাংস্কৃতির পাশে দাঁড়াই।