সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৪৫ পূর্বাহ্ন
Logo
সংবাদ শিরোনাম ::
বিশ্বব্যাপী ওমিক্রন সংক্রমণ বৃদ্ধিতে আইসোলেশন মেয়াদ অর্ধেক করার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ওমিক্রন ভেরিয়েন্ট ডেল্টা ও বিটার তুলনায় তিন গুণের বেশী পুনঃ সংক্রমন ঘটাতে পারে : গবেষণা প্রতিবেদন জাতিসংঘ ভবনের বাইরে এক বন্দুকধারী গ্রেফতার শান্তি চুক্তির পঞ্চম বার্ষিকী উপলক্ষে কলম্বিয়া সফর জাতিসংঘ মহাসচিব সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানগণের সাক্ষাৎ করোনা ভাইরাসের সংক্রমন বেড়ে যাওয়ায় অস্ট্রিয়ায় লকডাউন করোনা সংক্রমণ বাড়ায় ইউরোপের বিভিন্ন দেশে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ ভারতে নতুন করে ১০ হাজার ৩০২ জন করোনায় আক্রান্ত নভেম্বর মাসজুড়ে করাঞ্চলে কর মেলার সেবা পাবেন করদাতারা ঔপনিবেশিক আমলের ফৌজদারী কার্যবিধি যুগোপযোগী হচ্ছে

বোরকা পরে ভারতে পালানোর চেষ্টাকালে গ্রেফতার রিজেন্টের সাহেদ

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ১৬ জুলাই, ২০২০

॥স্টাফ রিপোর্টারকরোনা ভাইরাসের মহামারীকালে রিজেন্ট হাসপাতালের নানা অনিয়ম-দুর্নীতির খবর ফাঁসের পর পালিয়ে যাওয়া এর চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাহেদ ওরফে সাহেদ করিমকে এক সপ্তাহ পর গতকাল বুধবার ভোরে সাতক্ষীরার দেবহাটা সীমান্ত থেকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। বিতর্কিত ব্যবসায়ী সাহেদ চুলে রঙ করে গোঁফ ছোট করে বোরকা পরে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে ঢোকার চেষ্টায় ছিলেন বলে জানিয়েছে র‌্যাব। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সহসম্পাদক পরিচয়ে দাপট দেখানো বিশালবপু সাহেদ কাঁচাপাকা চুল আর বড় গোঁফ নিয়ে হাজির হতেন বিভিন্ন টেলিভিশনে আলোচনা অনুষ্ঠানে। তবে গ্রেফতারের সময় তার চেহারায় ভিন্নতা দেখা যায়। র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখার পরিচালক সারওয়ার বিন কাশেম বলেন, গ্রেফতার এড়াতে তিনি চুলে কলপ করিয়েছিলেন এবং গোঁফও ছেঁটেছিলেন। বোরকা পরিহিত অবস্থায় নৌকায় করে পাশের দেশে পালিয়ে যাওয়ার সময় তাকে গ্রেফতার করা হয়। চেহারা পরিবর্তন করার জন্য সে তার চুলও কালো করে ফেলেছিল। দেবহাটা সীমান্তবর্তী কোমরপুর গ্রামের লবঙ্গবতী নদীর তীর থেকে গতকাল বুধবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে সাহেদকে গ্রেফতারের সময় তার কাছে গুলিসহ একটি ‘অবৈধ অস্ত্র’ পাওয়া গেছে বলেও জানান র‌্যাব কর্মকর্তা সারওয়ার। র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) কর্নেল তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার বলেন, দালালের মাধ্যমে লবঙ্গবতী নদীর ইছামতিখাল দিয়ে সীমান্ত পার হওয়ার চেষ্টা করছিলেন রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রাত ২টা থেকে ওই এলাকসয় অভিযান শুরু করেন র‌্যাব সদস্যরা। কিন্তু সে ঘনঘন স্থান পরিবর্তন করায় গ্রেফতার করতে একটু সময় লেগেছে।

গ্রেফতারের পর সাহেদকে হেলিকপ্টারে করে ঢাকায় আনা হয়। পরে তাকে উত্তরার র‌্যাব সদর দপ্তরে নেওয়ার পর উত্তরার একটি বাড়িতে অভিযান চালায় র‌্যাব। সেখান থেকে ১ লাখ ৪৬ হাজার টাকার জাল নোট উদ্ধার করে র‌্যাব। গতকাল বুধবার দুপুর ৩টার দিকে র‌্যাব সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব মহাপরিচালক (ডিজি) আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, গ্রেফতারকৃত সাহেদের দেয়া তথ্যানুযায়ী রাজধানীর উত্তরার একটি বহুতল বাড়িতে অভিযান চালিয়ে এসব জাল টাকার নোট উদ্ধার করা হয়। গতকাল বুধবার সকালে সাহেদের গ্রেফতারের পর থেকে উত্তরা পশ্চিম থানার সেক্টর -১১ এর ২০ নম্বর সড়কের ৬২ নম্বর ‘সিএইচএল বাইতুল ইহসান’ (কুমিল্লা হোল্ডিং এ্যাপার্টমেন্ট) ভবনটি ঘিরে রাখে র‌্যাব সদস্যরা। পরবর্তীতে রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মো: সাহেদ ওরফে সাহেদ করিমকে সাথে নিয়ে ওই বহুতল ভবনের ৪ (এ) ফ্লাটে অভিযান চালায় র‌্যাব। দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে অভিযান শুরু হয়ে ১টার দিকে অভিযান শেষ হয়। জানা গেছে, দুপুর ১২টা ২৬ মিনিটে র‌্যাব সাহেদকে নিয়ে ওই ভবনের ভেতরে প্রবেশ করে। তখন তিনি বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট ও হেলমেট পরা ছিলেন। অভিযানকালে র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলমও উপস্থিত ছিলেন। উত্তরায় অভিযানে নেতৃত্ব দেন র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান লে. কর্নেল সারোয়ার বিন কাশেম। এছাড়া র‌্যাব সদরদপ্তর এবং র‌্যাব-১ এর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সঙ্গে ছিলেন। অভিযান শেষে সাহেদকে নিয়ে র‌্যাব সদস্যরা সদর দপ্তরে ফিরে আসেন। র‌্যাব সূত্র জানায়, প্রাথমিক জিঞ্জাসাবাদের পর দ্বিতীয় দফায় সাহেদকে ফের র‌্যাব সদর দফতরে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

পরে সাহেদকে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়। গতকাল বুধবার সাড়ে ৫টার দিকে র‌্যাব সদস্যরা তাকে ঢামেকে নিয়ে আসেন। সাহেদকে ঢাকা মেডিকেলে নেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন ঢামেক পুলিশ ক্যাম্প ইনচার্জ ইন্সপেক্টর বাচ্চু মিয়া। এক্সরে-ইইসজি করার পর তাকে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।

বিতর্কিত ব্যবসায়ী সাহেদ সাতক্ষীরার ছেলে। গত ৬ ও ৭ জুলাই উত্তরার রিজেন্ট হাসপাতাল এবং রিজেন্ট গ্রুপের প্রধান দপ্তরে র‌্যাবের অভিযানের পর থেকে তিনি লাপাত্তা ছিলেন। কোভিড-১৯ পরীক্ষার প্রতিবেদন নিয়ে প্রতারণার অভিযোগ পাওয়ার পর ওই হাসপাতালে অভিযান চালায় র‌্যাব। জানা যায়, ‘কোভিড ডেডিকেটেড’ হাসপাতাল হিসেবে চিকিৎসা দিয়ে আসা এ চিকিৎসালয়ের লাইসেন্সের মেয়াদই পার হয়ে গেছে বহু আগে। অভিযানে করোনাভাইরাস পরীক্ষার ভুয়া রিপোর্ট, করোনাভাইরাস চিকিৎসার নামে রোগীদের কাছ থেকে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়াসহ নানা অনিয়মের প্রমাণ পাওয়ার পর রিজেন্ট হাসপাতালের উত্তরা ও মিরপুর শাখা বন্ধ করে দেওয়া হয়। র‌্যাবের ওই অভিযানের পর রিজেন্টের মালিক মোহাম্মদ সাহেদের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির খবরও সংবাদমাধ্যমে আসতে শুরু করে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সহসম্পাদক পরিচয়ে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে কীভাবে তিনি নানা অপকর্ম চালিয়ে আসছিলেন, সেসব তথ্যও এখন গণমাধ্যমে আসছে। রিজেন্ট হাসপাতালে অভিযানের পর ৭ জুলাই উত্তরা পশ্চিম থানায় প্রতারণার অভিযোগে সাহেদকে এক নম্বর আসামি করে ১৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে র‌্যাব। সাহেদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে তার ব্যাংক হিসাবও জব্দ করা হয়। ওই মামলায় সে সময় মোট আটজনকে গ্রেফতার দেখিয়ে সাহেদসহ ৯ জনকে পলাতক দেখানো হয়েছিল। তাদের মধ্যে সাহেদের অন্যতম সহযোগী, রিজেন্ট গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুদ পারভেজকে গত মঙ্গলবার বিকালে গাজীপুরের কাপাসিয়া থেকে গ্রেফতার করা হয়।

সাতক্ষীরার ছেলে সাহেদ স্কুলের শেষ দিকের ছাত্র থাকা অবস্থায় ঢাকায় চলে আসেন। তার মা সুফিয়া করিম একসময় মহিলা আওয়ামী লীগের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। বাবা সিরাজুল করিম ছিলেন ব্যবসায়ী। শহরের কামালনগরে করিম সুপার মার্কেট নামে একটি বিপণি বিতান ছিল তাদের। সাহেদের মা মারা যাওয়ার পর তার বাবা ওই মার্কেট বিক্রি করে স্থায়ীভাবে সাতক্ষীরা ছেড়ে ঢাকা চলে আসেন। তবে সাহেদ মাঝে মাঝে সাতক্ষীরায় যেতেন। ২০০৯ সালে প্রতারণার অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া সাহেদ দুই বছরের মাথায় ধানমণ্ডিতে এমএলএম ব্যবসা শুরু করে বহু লোকের টাকা মেরে দেন বলে অভিযোগ আছে। পরে তিনি প্রভাবশালীদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলে প্রতিষ্ঠা করেন রিজেন্ট গ্রুপ। হাসপাতালে ছাড়াও কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, আবাসন, হোটেল ব্যবসা রয়েছে এ গ্রুপের। বেশ কয়েক বছর আগে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন প্রভাবশালী নেতাদের বাসায় যাওয়া আসা শুরু করেন সাহেদ। এর মধ্যে বিভিন্ন টেলিভিশনের টক শোতে দেখা যেতে থাকে তাকে। অনেক সাংবাদিকের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়। ২০১৬ সালে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপ কমিটির সদস্য হওয়ার মধ্য দিয়ে সরাসরি তিনি রাজনীতিতে যুক্ত হয়ে যান। সরকারের মন্ত্রী, এমপি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তা এবং সরকারি আমলাসহ গুরুত্বপূর্ণ বহু ব্যক্তির সঙ্গে তোলা অসংখ্য সেলফি নিজের ফেসবুক পেইজে দিয়ে রেখেছেন সাহেদ। এর মধ্যে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে ‘ভিআইপিদের’ মধ্যে তার উপস্থিতির ছবিও আছে। র‌্যাবের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এমএলএম ব্যবসা খুলে গ্রাহকদের টাকা আত্মসাৎ, চাকরির নামে অর্থ নেওয়া, ভুয়া নাম-ঠিকানা ব্যবহার করে কো-অপারেটিভ থেকে অর্থ আত্মসাৎ, ব্ল্যাকমেইলসহ নানা অভিযোগে কয়েক ডজন মামলা রয়েছে সাহেদের বিরুদ্ধে। তার প্রতারণার শিকার হওয়া অনেকেই এখন কথা বলতে শুরু করেছেন। অটোরিকশার রুট পারমিটের কথা বলে এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ৯১ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে চট্টগ্রামে নতুন একটি মামলা হয়েছে সাহেদের বিরুদ্ধে। আর কোভিড-১৯ পরীক্ষার নামে জালিয়াতির অভিযোগে রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানায় দায়ের করা র‌্যাবের মামলায় বলা হয়েছে, ভুয়া প্রতিবেদন দিয়ে প্রায় ছয় হাজার লোকের কাছ থেকে দুই কোটি ১০ লাখ টাকা আদায় করেছে রিজেন্ট। যদিও এ ক্ষেত্রে রোগীর কাছ থেকে কোনো টাকা তাদের নেওয়ার কথা নয়, কারণ সেসব পরীক্ষা সরকারি পরীক্ষাগারে হওয়ার কথা। এছাড়া সরকারের সঙ্গে করা চুক্তি ভেঙে রিজেন্ট করোনাভাইরাস চিকিৎসার জন্য রোগীদের কাছ থেকে অর্থ নিয়েছে, আবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরেও এক কোটি ৯৬ লাখ টাকার একটি বিল জমা দিয়েছে বলে জানানো হয় এজাহারে। সেখানে বলা হয়, রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাহেদ নিজেকে ক্লিন ইমেজের ব্যক্তি বলে দাবি করলেও প্রকৃতপক্ষে সে একজন ধুরন্ধর, অর্থলিপ্সু ও পাষণ্ড।

 

নিউজটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো খবর
error: আপনি নিউজ চুরি করছেন, চুরি করতে পারবেন না !!!!!!