॥স্টাফ রিপোর্টার॥ গত ১লা জুন জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরের জন্য ৪লাখ ২৬৬ কোটি টাকার বাজেট পেশ করেন।
বাজেট আলোচনার ২য় দিনে গতকাল ৮ই জুন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সকাল ১০টা ৪৫মিনিটে অধিবেশনের শুরুতে মন্ত্রীদের জন্য প্রশ্ন-জিজ্ঞাসা-উত্তর টেবিলে উপস্থাপন শেষে ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর আলোচনা শুরু হয়। এতে সরকারী দলের সদস্য রাজবাড়ী-১ আসনের এমপি আলহাজ্ব কাজী কেরামত আলী অংশ নেন।
প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে আলহাজ্ব কাজী কেরামত আলী বলেন, বর্তমান সরকার গত ৮ বছরে বিশাল বাজেট বাস্তবায়ন করে প্রমাণ করেছে, এবারের বাজেটও অবশ্যই বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে।
তিনি বাজেটকে গণমুখী উল্লেখ করে বলেন, এ বাজেট সফলভাবে বাস্তবায়নের মাধ্যমে জনগণের আশা-আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটানো সম্ভব হবে।
প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর বিএনপির সমালোচনার জবাবে তিনি বলেন, তাদের আমলে হাওয়া ও খোয়াব ভবনের দুর্নীতি, লুটপাটের কারণে সে আমলের বাজেটের মাধ্যমে জনগণের কল্যাণ হয়নি। কিন্তু বর্তমান সরকারের আমলে এ ধরনের কোন ভবন নেই, আর লুটপাট ও দুর্নীতিও নেই। ফলে গত ৮ বছরে আটটি বাজেট সফলভাবে বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশকে নিম্নমধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করা সম্ভব হয়েছে।
রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব কাজী কেরামত আলী প্রস্তাবিত বাজেটের বিভিন্ন দিক তুলে ধরাসহ রাজবাড়ীবাসীর বিভিন্ন দাবী-দাওয়া নিয়ে আলোচনা করেন।
তিনি বলেন, বিএনপির ভাইয়েরা আমাদের কৃষি খাতের সমালোচনা করেন। অথচ পর্যাপ্ত সার পাওয়ার কারণে খাদ্য বাড়তি থেকে আমরা এখন খাদ্যে উদ্বৃত্ত হয়েছি। আমাদের সময়ে সারের কোন সমস্যা নাই। গতকাল সন্ধ্যায় ইফতারের পর আমি বনানী এলাকায় গিয়েছিলাম। সেখান থেকে রিক্সায় মৌচাক পর্যন্ত আসলাম। সেখানে ফ্লাইওভার দেখে আমি অবাক হয়ে গেলাম। এত সুন্দর ফ্লাইওভার। গত ২৫ তারিখে আমি ভারতে গিয়েছিলাম। সেখানকার ফ্লাইওভারগুলোর চেয়ে আমাদের ফ্লাইওভারগুলো গুণগত মান ও ফিনিশিংয়ের দিক থেকে অনেক সুন্দর। বিএনপি নেত্রী বলেন, শেখ হাসিনার আমলে দেশের উন্নয়ন হয় না। ওনাকে বলছি, আপনি মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেবকে ফ্লাইওভারগুলো ঘুরে দেখতে বলেন। সমগ্র ঢাকায় যদি ফ্লাইওভার হয়ে যায় তাহলে ইনশাল্লাহ যানজট আর থাকবে না। আওয়ামী লীগকে সরকারে রাখতে হবে। আমাদের উন্নতি হচ্ছে। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেটে সামাজিক সুরক্ষা খাতের আওতা ও বাজেট বাড়ানো হয়েছে। বয়স্ক ভাতা ৩১ লক্ষ ৫০ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৩৫ লক্ষে উন্নীত করা হয়েছে। বিধবা ভাতা ১০% বাড়িয়ে ১২ লক্ষ ৬৫ হাজার, অস্বচ্ছল প্রতিবন্ধীদের ভাতা ১০% বাড়িয়ে ৮ লক্ষ ২৫ হাজার এবং মাসিক ভাতা ১০০ টাকা করে বাড়িয়ে ৭০০ টাকা করা হয়েছে। প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপবৃত্তির সংখ্যা ৫ হাজার করে ১০ হাজারে উন্নীত করা হয়েছে। হিজড়া জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে বরাদ্দ ২ কোটি ৩৫ লক্ষ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১১ কোটি ৩৫ লক্ষ টাকা করা হয়েছে। বেদে ও অনগ্রসার জনগোষ্ঠীর বরাদ্দ ৬ কোটি ৩২ লক্ষ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৭ কোটি টাকা করা হয়েছে। ক্যান্সার, কিডনী, লিভার, স্ট্রোক, প্যারালাইজড, জন্মগত হৃদরোগীদের বরাদ্দ ৩০ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০ কোটি টাকা করা হয়েছে। চা শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়ন কর্মসূচী খাতে ১৫ কোটি টাকা বরাদ্দ ও খাদ্য দ্রব্যাদীর পরিবর্তে এককালীন নগদ ৫ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বিদ্যমান মাসিক সম্মানী ভাতার পাশাপাশি প্রতি বছর ১০ হাজার টাকা করে ২টি উৎসব ভাতা এবং অস্বচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের আবাসনের জন্য ১০ হাজার ফ্লাট নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে। দরিদ্র মায়েদের মাতৃত্বকালীন ভাতার উপকারভোগীর সংখ্যা ১ লক্ষ বাড়িয়ে ৭ লক্ষ এবং কর্মজীবী ল্যাকটেটিং মায়েদের মাতৃত্বভাতা ২০ হাজার বাড়িয়ে ২ লক্ষ করা হয়েছে। বরাদ্দগুলো না বাড়ালে বাজেটের আকার বড় হতো না। টকশোতে যারা বলেন, ‘এত বড় বাজেট বাস্তবায়নযোগ্য নয়-স্বপ্নের বাজেট’ তাদের উদ্দেশ্যে বলছি-বঙ্গবন্ধু স্বপ্ন দেখেছিলেন আর সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করছেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। যারা স্বপ্ন দেখে না, তারা কখনো দেশের উন্নতি করতে পারে না। স্বপ্ন দেখতে হবে, সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে হবে। তাহলে দেশের উন্নতি হবে।
তিনি বলেন,স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় হচ্ছে আমাদের সবচেয়ে বড় মন্ত্রণালয়। বর্তমান মন্ত্রী মহোদয় দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই চেষ্টা করে যাচ্ছেন সারা দেশের স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করার। তবে আমাদের এডিপি’র বরাদ্দ অত্যন্ত কম। এডিপি’র বরাদ্দ না বাড়ালে স্থানীয় সরকার শক্তিশালী করা কষ্টসাধ্য হবে।
তিনি আরো বলেন, পরিকল্পনা মন্ত্রী লোটাস কামাল সাহেব এখানে রয়েছেন। তার উদ্দেশ্যে বলছি, রাজবাড়ী শহর রক্ষা বেরী বাঁধ সাথে মেইন নদী এসে গেছে। প্রকল্প পাশ হলে রাজবাড়ীর মানুষ আশ্বস্ত হবে। বাঁধ ভাঙ্গলে রাজবাড়ীর পাশাপাশি ফরিদপুরেও পানি ঢুকবে। সুনামগঞ্জের মতো অবস্থা হবে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রীর কাছে অনুরোধ রাজবাড়ীতে কোন অডিটরিয়াম ও শিশু পার্ক নাই। এগুলো করে দেবেন। রাজবাড়ী রেলের শহর হিসেবে পরিচিত। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর ভাটিয়াপাড়া ও ফরিদপুরের লাইন পুনরায় চালু হয়েছে। ভাটিয়াপাড়ার একটি ট্রেন ফরিদপুরে এবং খানখানাপুরে রেলস্টেশন দেওয়ার জন্য রেলমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে সরকারী প্রতিশ্র“তি সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতির দায়িত্ব দিয়েছেন। এজন্য আমি তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। দায়িত্ব পাওয়ার পর আমি ৩১টি মন্ত্রণালয়কে নিয়ে মিটিং করেছি। অনেক মন্ত্রণালয় আছে যারা যথাসময়ে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করে না। তাড়াহুড়ো করে কাজ করলে কখনোই ভাল হয় না। প্রকল্পগুলো যাতে যথাসময়ে বাস্তবায়ন হতে পারে, সরকারের ভাবমূর্তি উজ্জল হতে পারে আমরা সেই চেষ্টা করছি। আমি ৯২ সালে প্রথম পার্লামেন্টে আসি। তখন থেকেই দেখছি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়হীনতার কারণে আমাদের রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে যে কয়জন ডাক্তার প্রয়োজন, তার আমরা পাই না। আমাদের জেলা হাসপাতালে বেড আছে ১০০ কিন্তু জনবল নাই। এজন্য রাজবাড়ীবাসীর মনে অনেক দুঃখ। কয়েকদিন আগে মন্ত্রী নাসিম সাহেবের সাথে কথা বললাম-ডাক্তার নাই। উনি বললেন ডাক্তার দিব। শেষে মাত্র ১জন ডাক্তার দিলেন। এভাবে কোন জেলা হাসপাতাল চলতে পারে না। উনি বলেছিলেন তোমরা মাসে মাসে হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির মিটিং করে সমস্যা চিহ্নিত করো। আমি নিয়মিত হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির মিটিং করে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে দিয়েছি কিন্তু কোন কাজ হয়নি।
মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীর উদ্দেশ্যে বলছি-যেহেতু আপনি কমিটমেন্ট করেছিলেন সেহেতু এমপিওভুক্ত করতে হবে। যেহেতু বাজেট বাড়ানো হয়েছে সেহেতু এই অর্থ বছরেই প্রত্যেক এমপিকে আপনি যে এমপিওভুক্তির প্রতিশ্র“তি দিয়েছিলেন তা বাস্তবায়ন করতে হবে।
নৌ-পরিবহন মন্ত্রীর উদ্দেশ্যে বলছি-আমাদের দৌলতদিয়া ঘাটের ১, ২ ও ৩ নং ঘাট সংস্কার করা হচ্ছে। ৪নং ঘাটটি পুরোপুরি ভেসে যাচ্ছে। ৪নং ঘাটটি মেরামত করা দরকার। ঘাটের পাশের গ্রামও ভেঙ্গে যাচ্ছে। রাজবাড়ীর জন্য ৩৯৪ কোটি টাকার প্রকল্প পাশ হয়েছে। আশা করছি, যে সকল রাস্তাঘাট আছে সব ঠিক হয়ে যাবে।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রী রাজবাড়ীবাসীর জন্য যে বিশেষ প্রকল্পের প্রতিশ্র“তি দিয়েছেন আশা করি তিনি তা করে দেবেন।
সবশেষে আলহাজ্ব কাজী কেরামত আলী একটি কবিতা আবৃত্তি করে (রাজা নেই রাজ্য নেই, আছে পদ্মা কন্যা, রাজবাড়ীতে বইছে তারই ভালবাসার বন্যা, চলছে সেথা নিরবধি, পদ্মা বহমান, পদচিহ্ন রেখে গেছে, শেখ মুজিবুর রহমান) তিনি তার বক্তব্য শেষ করেন।