॥স্টাফ রিপোর্টার॥ রাজবাড়ী জেলার কালুখালী উপজেলার মৃগী ইউনিয়নের হোগলাডাঙ্গী গ্রামে নিজের প্রতিষ্ঠিত মোহাম্মদীয়া ইসলামিয়া কামিল মাদ্রাসার পাশেই পারিবারিক কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী এবং পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের প্রাক্তন সদস্য ও গণপরিষদ সদস্য আলহাজ্ব এবিএম নূরুল ইসলাম (৮৭)।
গতকাল ১০ই ফেব্রুয়ারী বিকালে (বাদ আসর) মোহাম্মদীয়া ইসলামিয়া কামিল মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে ৫ম জানাযার নামাজ শেষে তার মরদেহ পারিবারিক কবরস্থানে সমাহিত করা হয়। ব্যক্তি জীবনে তিনি ৩ পুত্র ও ২কন্যা সন্তানের জনক ছিলেন। মৃত্যুকালে তিনি অসংখ্য আত্মীয়-স্বজন রেখে গেছেন।
তার মৃত্যুতে সুপ্রীম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন পর্যায়ের জনপ্রতিনিধিসহ রাজবাড়ী জেলার বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
গতকাল সোমবার হোগলাডাঙ্গী গ্রামে নিজের প্রতিষ্ঠিত মোহাম্মদীয়া ইসলামিয়া কামিল মাদ্রাসায় জানাযার নামাজের পূর্বে মরহুমের রূহের মাগফেরাত কামনা করে রাজবাড়ী-২ আসনের এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ জিল্লুল হাকিম, প্রয়াত এবিএম নূরুল ইসলামের জ্যেষ্ঠ পুত্র মামুদ ইসলাম, মেজো পুত্র ডাঃ আহম্মদ আলী, কনিষ্ঠ পুত্র শওকত আলী, জামাতা এডঃ গিয়াস উদ্দিন ও মৃগী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ রফিকুল ইসলাম বাদশা সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন।
এ সময় বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও রাজবাড়ী-২ আসনের সাবেক এমপি নাসিরুল হক সাবু, কালুখালী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলিউজ্জামান চৌধুরী টিটো, কালুখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের সদস্য খায়রুল ইসলাম খায়ের এবং রাজবাড়ী প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক মাতৃকণ্ঠ পত্রিকার সম্পাদক খোন্দকার আব্দুল মতিনসহ মরহুমের পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজন, এলাকাবাসী ও বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার বিপুল সংখ্যক মানুষ জানাযার নামাজে অংশগ্রহণ করেন।
জানাযার নামাজে ইমামতি করেন ইমামতি করেন হোগলাডাঙ্গী এম.আই কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মোঃ মহিউদ্দিন। দোয়া পরিচালনা করেন পাংশা সিদ্দিকিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মোঃ আওয়াবুল্লাহ ইব্রাহীম।
এরআগে গতকাল সোমবার ঢাকার ধানমন্ডির তাকওয়া মসজিদ প্রাঙ্গণে ১ম, কলাবাগান এলাকার নিজ বাসভবন প্রাঙ্গণে ২য়, সুপ্রীম কোর্ট প্রাঙ্গণে ৩য় ও রাজবাড়ী জেলা আইনজীবী সমিতি প্রাঙ্গণে ৪র্থ জানাযার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়।
আগের দিন গত ৯ই জানুয়ারী রাত সাড়ে ১১টায় বার্ধক্যজনিত শ্বাসকষ্টের কারণে ঢাকার কলাবাগানের বাসভবনে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে দ্রুত ধানমন্ডির পপুলার হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়। সেখানে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত দেড়টায় তিনি ইন্তেকাল করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। এর আগে গত ৩০শে জানুয়ারী থেকে ৭ই ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত তিনি একই হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে বাসভবনে ফেরেন।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের সিনিয়র এডভোকেট আলহাজ্ব এবিএম নূরুল ইসলাম পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের প্রাক্তন সদস্য ও গণপরিষদ সদস্য(এমএনএ-৬৫ সাল এবং এমসিএ-৭০ সাল) ছিলেন। ওই সময়ে তিনি আওয়ামী লীগের পার্লামেন্টারী পার্টির সেক্রেটারীর দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড ও ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয়ের লিগ্যাল অ্যাডভাইজার, বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সদস্য এবং রাজবাড়ী জেলা বার এসোসিয়েশনেরও সিনিয়র আইনজীবী ছিলেন। তিনি দীর্ঘ প্রায় ৬০ বছর সুপ্রীম কোর্টে আইন পেশায় নিয়োজিত ছিলেন।
আশির দশকে তিনি জাতীয় পার্টির রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন এবং রাজবাড়ী জেলা জাতীয় পার্টির সমন্বয়কারীসহ বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ ৩বার জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে রাজবাড়ী-২ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
হোগলাডাঙ্গী গ্রামে ১৯৭৪ সালে তিনি মোহাম্মদীয়া ইসলামিয়া কামিল মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করাসহ জনস্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ঘটনায় রিট করে তিনি আলোচিত হন। জেলার নবগঠিত কালুখালী উপজেলা পরিষদ গঠন ও পদ্মা সেতু আন্দোলনসহ বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামের সাথেও তিনি সংশ্লিষ্ট ছিলেন।
নিজ এলাকা কালুখালী-পাংশা ও বালিয়াকান্দি উপজেলাসহ জেলার বিভিন্ন ধর্মীয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ব্যক্তিগতভাবে তিনি অনুদান প্রদান করেন। এছাড়া জনপ্রতিনিধি থাকাকালে এবং নিজের ব্যক্তিত্বকে কাজে লাগিয়ে তিনি নিজ এলাকায় ব্যাংক, পোস্ট অফিস স্থাপন ও রাস্তাঘাট নির্মাণসহ সার্বিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখেন।