॥স্টাফ রিপোর্টার॥ ইলেকট্রনিক পাসপোর্ট বা ই-পাসপোর্টের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফটোগ্রাফ নেয়া হয়েছে। আগামী ২২শে জানুয়ারী থেকে ই-পাসপোর্ট প্রদান শুরু হতে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব কে এম শাখাওয়াত মুন জানান, ‘অভিবাসন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর(ডিপিআই) কর্তৃপক্ষ গতকাল ১৯শে জানুয়ারী বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর সরকারী বাসভবন গণভবন থেকে তাঁর ফটোগ্রাফ সংগ্রহ করেছে।
তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী ই-পাসপোর্টের জন্য একটি ডিভাইসে তাঁর ডিজিটাল স্বাক্ষরও দেন। এ সময় ই-পাসপোর্ট প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাইদুর রহমান খান উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ২২শে জানুয়ারী বুধবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ই-পাসপোর্ট বিতরণ কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন।
ডিপিআই’র মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদ এর আগে বলেন, প্রথম ধাপে রাজধানীর আগারগাঁও, উত্তরা ও যাত্রাবাড়ী পাসপোর্ট কার্যালয় থেকে এটি দেওয়া হবে। পরে ধাপে ধাপে সারা দেশের পাসপোর্ট কার্যালয় থেকে ই-পাসপোর্ট দেয়া হবে। জার্মান কোম্পানি ভেরিদোস জিএমবিএইচ দেশে ই-পাসপোর্ট ও ই-গেট নিয়ে কাজ করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ই-পাসপোর্ট চালুর মাধ্যমে অভিবাসন প্রক্রিয়া ত্রুটিমুক্ত করার চেষ্টা চলছে।
আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান পরিবহন সংস্থা(আইসিএও)’র মতে বর্তমানে এক শ’র বেশি রাষ্ট্র ও সংস্থা(জাতিসংঘ) ই-পাসপোর্ট ইস্যু করছে এবং ৪৯ কোটি ই-পাসপোর্ট চালু রয়েছে। ই-পাসপোর্ট প্রচলিত সাধারণ পাসপোর্টের চেয়ে বেশি নিরাপদ। যাতে পাসপোর্টধারীর ব্যক্তিগত তথ্য সম্বলিত একটি ইলেক্ট্রনিক চিপ সংযুক্ত থাকে।
প্রকল্প বিবরণী অনুযায়ী ৪ হাজার ৫শ ৪৯ কোটি টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। ডিপিআই সম্পূর্ণ সরকারী খরচে ২০১৮ থেকে ২০২৮ মেয়াদের মধ্যে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। ই-পাসপোর্ট চালুর মাধ্যমে পুরো অভিবাসন প্রক্রিয়াটি অনলাইনে সম্পন্ন হবে।
মোট ৩ কোটি পাসপোর্ট প্রদান করা হবে। এর মধ্যে ২ কোটি পাসপোর্ট জার্মানী থেকে তৈরি করে আনা হবে। যারা প্রথমে আবেদন করবেন তারা জার্মানীর তৈরি ই-পাসপোর্ট পাবেন। এর মেয়াদ হবে পাঁচ ও দশ বছর।
ডিপিআই ও ভেরিদোস ২০১৮ সালের ১৯শে জুলাই মেশিন রিডেবল পাসপোর্টের পাশাপাশি ই-পাসপোর্টের জন্য একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে।
গতকাল ১৯শে ফেব্রুয়ারী সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ই-পাসপোর্ট ভবন ও ই-পাসপোর্ট কার্যক্রম উদ্বোধন সংক্রান্ত এক সংবাদ সম্মেলনে আগামী ২২শে জানুয়ারী ইলেকট্রনিকস পাসপোর্ট (ই-পাসপোর্ট) কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হবে বলে সাংবাদিকদের জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
তিনি বলেন, এই পাসপোর্ট বহির্বিশ্বে বাংলাদেশী পাসপোর্টের গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি করবে এবং পাসপোর্টের নিরাপত্তা অধিকতর নিশ্চিতকরণসহ ই-পাসপোর্টের মাধ্যমে বিদেশ ভ্রমণ ও ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া সহজ হবে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী জানান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের আওতাধীন ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদফতর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় জার্মান কোম্পানী ভেরিডোস জিএমবিএইচ কর্তৃক ই-পাসপোর্ট ও স্বয়ংক্রিয় বর্ডার নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনা প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। ই-পাসপোর্টের মেয়াদ হবে ৫ থেকে ১০ বছর।
আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের পর প্রাথমিকভাবে রাজধানীর আগারগাঁও, উত্তরা ও যাত্রাবাড়ী থেকে ই-পাসপোর্ট সরবরাহ করা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ৪৮ পৃষ্ঠার ৫বছর মেয়াদী সাধারণ ফি ৩৫০০ টাকা, জরুরী ফি ৫৫০০ টাকা ও অতীব জরুরী ফি ৭৫০০ টাকা এবং ১০ বছর মেয়াদী সাধারণ ফি ৫০০০ টাকা, জরুরী ফি ৭০০০ টাকা ও অতীব জরুরী ফি ৯০০০ টাকা।
নতুন পাসপোর্টের ক্ষেত্রে অতীব জরুরীতে ৩দিনে, জরুরীতে ৭দিনে ও সাধারণ পাসপোর্ট আবেদনের ক্ষেত্রে ২১দিনের পাসপোর্ট পাওয়া যাবে। তবে পুরনো অথবা মেয়াদোত্তীর্ণ পাসপোর্ট রি-ইস্যু করার ক্ষেত্রে অতীব জরুরী পাসপোর্ট ২দিনে, জরুরী পাসপোর্ট ৩দিনে ও সাধারণ পাসপোর্ট ৭দিনের মধ্যে দেওয়া হবে বলেও জানানো হয়।
এছাড়া, বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাসে সাধারণ আবেদনকারী, শ্রমিক ও শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা আলাদা ই-পাসপোর্ট ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাসে সাধারণ আবেদনকারীদের জন্য ৪৮ পৃষ্ঠার ৫ বছর মেয়াদি সাধারণ ফি ১০০ মার্কিন ডলার ও জরুরী ফি ১৫০ মার্কিন ডলার। ১০ বছর মেয়াদী সাধারণ ফি ১২৫ মার্কিন ডলার ও জরুরী ফি ১৭৫ মার্কিন ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে।
ই-পাসপোর্টের আবেদনপত্র জাতীয় পরিচয়পত্র(এনআইডি) বা জন্ম নিবন্ধন সনদ(বিআরসি) অনুযায়ী পূরণ করতে হবে। অপ্রাপ্ত বয়স্ক(১৮ বছরের কম) আবেদনকারী, যার জাতীয় পরিচয়পত্র(এনআইডি) নেই, তার পিতা-মাতার জাতীয় পরিচয়পত্র(এনআইডি) নম্বর অবশ্যই উল্লেখ করতে হবে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গাদের ডিজিটালাইজড আইডি কার্ড দেওয়া হয়েছে। সেটি নিবন্ধন রয়েছে। কাজেই তথ্য গোপন করে কোনও রোহিঙ্গাদের ই-পাসপোর্ট গ্রহণের সুযোগ নাই। তারপরও রোহিঙ্গারা যদি বিভিন্ন ধরনের ফাঁক-ফোকরের মাধ্যমে ই-পাসপোর্ট করতে যায় তাহলে বিভিন্ন প্রশ্নে তারা ধরা পড়বে।
তিনি বলেন, ই-পাসপোর্টের জন্য পুলিশ ভেরিফিকেশন লাগবে তবে বিভিন্ন ধরনের নাজেহাল এড়াতে এটি অনলাইনে করার চেষ্টা করছি যেন অতীতের তুলনায় সহজ হয়।
আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ২০২০ সালের মধ্যে দেশের সর্বত্র ই-পাসপোর্ট চালু হবে। বাংলাদেশে প্রথম ই-পাসপোর্ট পাবে রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রী। প্রতিদিন ২৫হাজার পাসপোর্ট ইস্যু করা যাবে।’
সংবাদ সম্মেলনে বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদফতরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সাকিল আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।